ইউজিসির নির্দেশনা ‘না মেনে’ এবার চবিতে কর্মচারী নিয়োগ

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) নির্দেশনা না মেনে কোনো ধরনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) প্রকৌশল দফতরে সাত কর্মচারীকে নিয়োগের অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (২৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলীকে উদ্দেশ্যে করে রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক এসএম মনিরুল হাসান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে বিষয়টি জানা গেছে।

এই চিঠির একটি অনুলিপি এসেছে জাগো নিউজের হাতে। চিঠিতে প্রধান প্রকৌশলীকে উদ্দেশ্যে করে রেজিস্ট্রার লেখেন, ‘আপনার চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, নিম্নোক্ত সাতজনকে মাসিক সর্বসাকুল্যে ৯ হাজার টাকা বেতনে ছয় মাসের জন্য পাম্প সহকারী হিসেবে কাজ করার অনুমতি প্রদান করা হয়েছে।’

নিয়োগপ্রাপ্তরা হলেন- শাহরিয়ার ইসলাম, ছানা উল্লাহ, বেলাল হোসেন, আব্দুল মুকিত, ইসমাইল হোসেন, মোহাম্মদ নোমান, মো. মোরশেদ।

তবে ওই চিঠিতে তাদের নিয়োগ দৈনিক ভিত্তিক, অ্যাডহক, চুক্তিভিত্তিক নাকি মাস্টার রোল তার কোনোটিই উল্লেখ করা হয়নি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, ‘এটি দৈনিক ভিত্তিক নিয়োগ। এ ধরনের নিয়োগে ইউজিসির অনুমতি লাগে না।’

jagonews24

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বলেছেন, ‘এটি শূন্য পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। শূন্য পদে নিয়োগের ক্ষেত্রেও ইউজিসির অনুমতি লাগে না।’

ইউজিসি জানিয়েছে, তাদের অনুমতি নিয়েই এ ধরনের নিয়োগ দিতে হয়। যদি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে শূন্য পদে নিয়োগ দেয় তাহলে ইউজিসির অনুমতি লাগে না। তবে চবিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয়া হয়নি আবার ইউজিসির অনুমতিও নেয়া হয়নি।

যদিও ২০২০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ইউজিসির তৎকালীন অর্থ ও হিসাব বিভাগের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মো. শাহ আলম দেশের সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে তাদের পূর্বানুমোদন ব্যতিরেকে অ্যাডহক, দৈনিক ভিত্তিক জনবল, মাস্টার রোলে নিয়োগ প্রদান না করার নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ শিক্ষকের অভিযোগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী বিতর্কিত উপাচার্য এম আব্দুস সোবহানের প্রশাসনের পথেই হাটছে চবি প্রশাসন। ইউজিসি আদেশ সরাসরি অমান্য করে নিয়োগ দেয়ায় এম সোবহানের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। চবিতে নিয়োগের বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও ইউজিসির তদন্ত করা উচিৎ।

আবার ক্ষোভ জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তাদের পদোন্নতি বন্ধ। প্রশাসনের কাছে এ বিষয়ে একাধিকবার আন্দোলন করেছেন তারা। কিন্তু তাতেও কর্ণপাত করেনি প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমস্যা সমাধান না করে নতুনভাবে আবার অপ্রয়োজনীয় নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন।’

তারা বলছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পানির সমস্যা থাকতে পারে। কিন্তু সেটি এখনতো নেই। এক বছরের বেশি সময় ক্যাম্পাসের সব হল, ফ্যাকাল্টি বন্ধ। শুধু কিছু অফিস খোলা। এ জন্য বিজ্ঞাপন দিয়ে এক-দেড় মাসেই নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যায়। বিজ্ঞাপন দিলেতো যোগ্যদেরই নিয়োগ দিতে হয়। এতে পছন্দের লোক নিয়োগ দেয়া কঠিন। মূলত পছন্দের মানুষ নিয়োগ দিতে এবং কারও কারও নিয়োগ বাণিজ্যের পথ সুগম করতেই ইউজিসির নির্দেশনা অমান্য করে এই নিয়োগ দেয়া হয়েছে।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছু বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহযোগী অধ্যাপক বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পরীক্ষা নিয়ে যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ সম্পন্ন করাই গ্রহণযোগ্য প্রক্রিয়া। তাই ইউজিসি সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে এই প্রক্রিয়ায় নিয়োগ দিতে বলেছে। ইউজিসির আদেশকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে চবির নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল করতে তাদের হস্তক্ষেপ জরুরি।’

jagonews24

আবার নিয়োগ সংক্রান্ত নথির তথ্য থেকে জানা গেছে, পাম্প সহকারী পদে নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে শাহরিয়ার ইসলাম ও ছানা উল্লাহ তামিমের বাড়ি কক্সবাজারের রামু উপজেলার জোয়ারিয়ানালা এলাকায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক জানান, উপাচার্য ড. শিরীণ আখতারের বাড়িও ওই এলাকায়।

তা ছাড়া নিয়োগপ্রাপ্ত বেলাল হোসেন ভিসি বাংলোর কর্মচারী মো. হারুনের ছেলে। নিয়োগপ্রাপ্ত আব্দুল মুকিত বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাস এলাকার কাপড়ের দোকানদার। ইসমাইল হোসেন দুই নম্বর গেইট এলাকার দোকানকার। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের জোবরা গ্রামের বাসিন্দা মোহাম্মদ নোমানও নিয়োগ পেয়েছেন এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। এ ছাড়াও নিয়োগ পেয়েছেন হাটহাজারীর ইলিয়াছ সওদাগরের বাড়ির বাসিন্দা মো. মোরশেদ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দফতরের চাহিদা সাপেক্ষে শূন্য পদে সাতজনকে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির অনুমোদন লাগে না। আবার স্থায়ী কোনো পোস্ট না হওয়ায় এটি দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়নি। যখন নিয়োগ হবে তখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেয়া হবে। এ বিষয়ে ইউজিসিসহ সকল নিয়ম-কানুন মানা হয়েছে। আমার কাছে যাবতীয় প্রমাণ আছে।’

জানতে চাইলে চবি উপাচার্য ড. শিরীণ আখতার জাগো নিউজকে বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে দৈনিক বেতনে কয়েকজনকে পাম্প চালানোর জন্য নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাম্প বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তোমরা কি চাও বিশ্ববিদ্যালয় অচল থাকুক? নিয়োগের বিষয়ে তোমাদের এতো মাথাব্যথা কেনো?তোমাদের কারণে ২২ মাস নিয়োগ দিতে পারিনি। আর এ ধরনের নিয়োগের ক্ষেত্রে ইউজিসির কোনো হাত নেই। তোমাদের প্রয়োজন মনে হলে ইউজিসির কাছে যাও।’

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক কাজী শহিদুল্লাহ জাগো নিউজকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়োগের বিষয়টি আমি এখনও জানি না। তবে নিয়ম হচ্ছে তারা যদি শূন্য পদে নিয়োগ দেন, তবে বিষয়টি দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশ করতে হবে। আবার তারা যদি দৈনিক, মাস্টার রোল বা অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেন তাহলে বিষয়টি ইউজিসির অনুমতি নিয়েই করতে হবে। এ বিষয়ে তাদেরকে নির্দেশনা দেয়া আছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় যদি নিয়ম না মেনে নিয়োগ দিয়ে থাকেন, তাহলে বিষয়টির ব্যাখ্যা চাওয়া হবে।’

মিজানুর রহমান/ইএ/এসএইচএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।