নাটকীয় নিয়োগ : ভিসি সোবহানের ‘সাক্ষাৎকার’ নিল তদন্ত কমিটি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৫:৫৯ পিএম, ০৮ মে ২০২১

সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আব্দুস সোবহানসহ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণনিয়োগের সঙ্গে জড়িতদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় গঠিত তদন্ত কমিটি।

শনিবার (৮ মে) সকাল থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপাচার্য দফতরে নিয়োগ সংশ্লিষ্ট প্রায় ১৫ জনের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়।

বিকেল ৪টার পর প্রশাসনভবন থেকে বের হওয়ার সময় তদন্ত কমিটির প্রধান ড. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় একটি তদন্ত কমিটি করেছে। সেই তদন্ত কমিটির সদস্য হিসেবে আমরা এখানে এসেছি। আমরা চেয়েছি যেন খুব অল্প সময়ের মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে পারি।’

কারও প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ আচরণ নয় জানিয়ে ড. আলমগীর বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রাচীনতম বিশ্ববিদ্যালয় এটি। ড. শামসুজ্জোহার রক্তে ভেজা এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন এমন কোনো কর্মকাণ্ড না হয়, যার কারণে এই বিশ্ববিদ্যালয়টির ছাত্র শিক্ষক থেকে শুরু করে এই এলাকার মানুষের মাথা নিচু না হয়। আমরা এই বিষয়টি সবার ওপরে স্থান দেব। একটা সুষ্ঠু তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেব।’

কাদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে জানতে চাইলে ড. আলমগীর বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে এটি একটি নিয়মবহির্ভূত নিয়োগ। সুতরাং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তিকে সাক্ষাৎকারের আওতায় আনা হয়েছে। নিয়োগ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। আমরা সব তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেছি।’

দীর্ঘ সময় ধরে সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহানের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে বলেও জানান।

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা কাগজপত্র দেখেছি। বিষয়গুলো বিশ্লেষণ করব, তারপর আমাদের প্রতিবেদন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেব। আমরা চাই, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা গবেষণা থেকে শুরু করে সব কর্মকাণ্ড যাতে নির্বিঘ্নে চলতে পারে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় হবে শিক্ষা ও গবেষণার কেন্দ্রবিন্দু ও জাতিকে দিকনির্দেশনা দেবে।’

এর আগে বিকেল ৩টার দিকে উপাচার্যর সাক্ষাৎকার নেয়া শুরু হয়। বেলা ৪টার দিকে প্রশাসন ভবন থেকে বের হন সদ্য বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক এম আব্দুস সোবহান।

ফেরার পথে তিনি এই নিয়োগ অবৈধ না দাবি করে বলেন, ‘১৯৭৩-এর অধ্যাদেশে উপাচার্যকে যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে সেই ক্ষমতাবলে আমি নিয়োগ দিয়েছি। এটা আমি নিজ দায়িত্বে দিয়েছি। যদি নিয়োগ অবৈধ বলতে হয় তাহলে ৭৩-এর অধ্যাদেশের ওই সেকশনটি বাতিল করা হয়নি কেন?’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা নিয়োগ পেয়েছে তারা এই চাকরি ডিজার্ভ করেন। কারণ, তারা আবেদন করেছে, অনেক পদের বিপরীতে ভাইবাসহ নিয়োগের কিছু কার্যক্রম হয়ে গেছিল।’

যারা নিয়োগ পেয়েছে তাদের মধ্যে কম সংখ্যক ছাত্রলীগ নেতা রয়েছে এটি ঠিক না বলে দাবি করেন তিনি। সাবেক উপাচার্য বলেন, ‘যারা নিয়োগ পেয়েছে তাদের সবাই ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ পরিবারের সন্তান।’

এদিকে, উপাচার্যের নিয়োগ তদন্তে বেলা পৌনে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে আসেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের করা তদন্ত কমিটির সদস্যরা। কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেনের নেতৃত্বে আসেন কমিটির সদস্য এবং ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. জাকির হোসেন আখন্দ ও ইউজিসির পরিচালক মোহাম্মদ জামিনুর রহমান।

তদন্তদল বিশ্ববিদ্যালয়ের পৌঁছানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা ও রেজিস্ট্রার অধ্যাপক আব্দুস সালামের সঙ্গে প্রথমে সাক্ষাৎ করেন। এরপর প্রক্টরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

এরপর একে একে নিয়োগে সহযোগী সহকারী রেজিস্ট্রার তারিকুল আলম, পরিষদ শাখার কর্মকর্তা মামুন অর রশীদ, সংস্থাপন শাখার প্রধান ইউসুফ আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রত্যেকের থেকে লিখিত বক্তব্য নেন তদন্ত কমিটির সদস্যরা।

সেখানে সাবেক উপাচার্যের জামাতা শাহেদ পারভেজের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়। পরে তদন্ত কমিটির কাছে লিখিত বক্তব্য দেন শাহেদ পারভেজ। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের সভাপতিও তদন্ত কমিটির মুখোমুখি হয়েছিলেন।

সালমান শাকিল/এসজে/জিকেএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।