যবিপ্রবি শিক্ষা-গবেষণা ছাড়াও যেখানে অনন্য
মাত্র একযুগেই দেশের উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে স্থান করে নিয়েছে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (যবিপ্রবি)। যশোর শহর থেকে ১২ কিলোমিটার পশ্চিমে যশোর-চৌগাছা সড়কের পাশে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয়টি।
যবিপ্রবি জনসংযোগ দফতরের সহকারী পরিচালক হায়াতুজ্জামান মুকুল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়টির অ্যাকাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৯ সালে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য ছিলেন অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম সরকার। আর অধ্যাপক ড. আব্দুস সাত্তার ছিলেন দ্বিতীয় উপাচার্য।
বর্তমান উপাচার্য বিশিষ্ট অণুজীববিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন। ২০১৭ সালের ১৯ মে তার যোগদানের পর থেকে দ্রুত বদলাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃশ্যপট।
আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত স্কোপাস ডেটা বেইস অনুযায়ী, ২০২০ সালে বাংলাদেশে গবেষণা প্রবৃদ্ধির (৪২ শতাংশ) ক্ষেত্রে যবিপ্রবি প্রথমস্থান অর্জন করে।
যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ২০২০ সালে প্রস্তুতকৃত বিশ্বের সর্বাধিক উদ্ধৃত গবেষকের মধ্যে যবিপ্রবির তিনজন তরুণ শিক্ষক স্থান পেয়েছেন।
২০২০ সালে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঘটলে যবিপ্রবির জিনোম সেন্টার বাংলাদেশের প্রথম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে করোনা ভাইরাস পরীক্ষা শুরু করে। যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এটা নিয়মিত দায়িত্বের অংশ না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়টি স্বেচ্ছায় এগিয়ে আসে।
বাইরের কোনো ল্যাবের সাহায্য ছাড়াই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ল্যাবে করোনা ভাইরাসের জিনোমের রহস্য উন্মোচন করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এটা ছিল বাংলাদেশে প্রথম।
মুজিববর্ষে আন্তর্জাতিক জার্নালে গবেষণাপত্র প্রকাশ করে ন্যূনতম ৩০ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর অর্জনকারী শিক্ষক বা গবেষণা দলকে পুরস্কৃত করার সিদ্ধান্ত হয়। এসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচজন শিক্ষক বা গবেষণা দল এ পুরস্কারের জন্য আবেদনের যোগ্যতা অর্জন করেন।
যবিপ্রবিতে নির্মাণ করা হয়েছে দেশের বৃহত্তম হ্যাচারি-কাম-ওয়েটল্যাব। এছাড়া দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শেখ রাসেল জিমনেসিয়াম এ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার মিরপুরের শহীদ সোহরাওয়ার্দী ইনডোর স্টেডিয়ামের পরেই এর অবস্থান। তবে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় অনেক ক্ষেত্রে ওই স্টেডিয়ামকেও ছাড়িয়ে যায় এটি।
‘বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অ্যাথলেটিক চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৯’-এ যবিপ্রবি প্রথমস্থান অধিকার করে। এছাড়া দেশের অন্যতম বৃহৎ ও অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত টিএসসি নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে।
২০১৮ সাল থেকে প্রতিবছর জাতীয় শোক দিবসে চার হাজার রোগীকে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য ফ্রি হেলথ ক্যাম্প পরিচালনা করা হয় এখানে। এ হেলথ ক্যাম্পে রোগীদের ওষুধ ও প্রয়োজনীয় টেস্ট বিনামূল্যে করা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ডা. এম আর খান মেডিকেল সেন্টারে বিশ্বমানের প্যাথলজি সেন্টার খোলা হচ্ছে। যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের মানুষকে কেনামাত্র মূল্যে বিভিন্ন প্যাথলজিক্যাল সেবা দেয়া হবে।
নিয়োগ প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতার জন্য অনলাইনে আবেদনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চিঠি ও ক্ষুদেবার্তা দেয়ার পাশাপাশি উপযুক্ত প্রার্থীদের তালিকা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণাপত্রকে প্লেগারিজম মুক্ত করার জন্য প্রত্যেক শিক্ষককে বিনামূল্যে টার্ন-ইট-ইন সফটওয়্যারের আইডি সরবরাহ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিং বন্ধ করা হয়েছে। র্যাগিং বন্ধের উদ্যোগ নিলে র্যাগিং-এ আসক্ত শিক্ষার্থীরা উপাচার্যসহ দায়িত্বশীল শিক্ষকদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে ২০১৯ সালে আন্দোলন করে। তবে প্রশাসন র্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে অনড় থাকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো বিশ্বমানের অত্যাধুনিক ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। এরমধ্যে জিনোম সেন্টার, ইউটি এম ল্যাব, অ্যানালিটিক্যাল উল্লেখ্যযোগ্য।
যবিপ্রবিকে সম্পূর্ণরূপে আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরের লক্ষ্যে বীর প্রতীক তারামান বিবি হল এবং মুনশি মোহাম্মদ মেহেরুল্লাহ হল নামে দুটি ১০ তলা বিশিষ্ট হল নির্মাণের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে।
ক্লাস, পরীক্ষা ও গবেষণা কাজকে আরও গতিশীল করার জন্য যথেষ্ট অ্যাকাডেমিক সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত দশতলা জগদীশচন্দ্র বসু অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজও শেষ পর্যায়ে।
করোনাকালে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব সার্ভারে অনলাইন লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম চালু করা হয়েছে। করোনা পরবর্তী সময়েও এ অনলাইন ক্লাস অব্যাহত থাকবে।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য আরও ৬৫ একর ভূমি অধিগ্রহণসহ মেগা প্রজেক্ট হাতে নেয়া হয়েছে। চলমান প্রকল্প শেষ হলেই এ মেগা প্রজেক্ট পেশ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে এপর্যন্ত ২৬টি বিভাগ খোলা হয়েছে। বিশ্বায়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের ইংরেজিতে যোগাযোগ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ইংরেজি এবং ব্যবসায় শিক্ষা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে চারটি বিষয় খোলা হয়েছে।
যবিপ্রবি এগিয়ে যাবে শিক্ষা ও গবেষণায় এবং অবদান রাখবে দেশ গড়ার আন্দোলনে, এমনই প্রত্যাশা বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেনের।
মিলন রহমান/এসএমএম/এএসএম