রাবি চলচ্চিত্র উৎসবের প্রদর্শনীতে উপচে পড়া ভিড়


প্রকাশিত: ০৩:০১ পিএম, ২১ নভেম্বর ২০১৫

শিক্ষার্থীদের দীর্ঘ লাইন। লাইনে দাঁড়িয়ে অধীর আগ্রহে নির্ধারিত সময়ের অপেক্ষা করছেন দর্শকরা। দরজায় দাঁড়িয়ে টিকেট চেক করছেন স্বেচ্ছাসেবীরা। অনাকঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে আশপাশ এলাকায় শক্ত অবস্থান নিয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
 
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) গত বুধবার (১৮ নভেম্বর) থেকে শুরু হয়েছে সপ্তাহব্যাপী `দুই বাংলার চলচ্চিত্র উৎসব-২০১৫`। এই উৎসবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে প্রতিদিনের চলচ্চিত্র প্রদর্শনীতে এ দৃশ্য নিয়মিতই চোখে পড়ছে। প্রতিদিন প্রায় তিন-চারটি করে বাংলা চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হচ্ছে। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রদর্শনীগুলোতে সিনেমা প্রেমীদের ভিড়-সমাগম মুগ্ধ করার মতো।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিনেমা প্রেমীরা দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে আছে মিলনায়তনে ঢোকার অপেক্ষায়। কেউ আসছেন সহপাঠিদের সঙ্গে, কেউ বড় ভাই-বোনের আবার কেউ পরিবারের সঙ্গে। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি আসছেন শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও।

ভারতীয় হাইকমিশনের আর্থিক পৃষ্ঠপোষকতায় এ উৎসবের আয়োজন করছে যৌথভাবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ।

উৎসবের চতুর্থ দিন শনিবারে প্রদর্শিত হয় তারেক মাসুদের পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র `রানওয়ে’ ও ভারতের গৌতম ঘোষের পূর্ণদৈর্ঘ্য `অন্তর্জলী যাত্রা`।

প্রদর্শনী শেষে কথা হয় কয়েকজন চলচ্চিত্র প্রেমীর সঙ্গে। সবারই চোখে মুখে তৃপ্তির ছোঁয়া। তুহিন সরকার ও জেরিনা আফরোজ নামের দুই শিক্ষার্থীরা জাগো নিউজকে জানান, এ ধরনের আয়োজন সিনেমা দেখার প্রতি আমাদের আরো আগ্রহী করে তোলে। কারণ আমরা সচরাচর চলচ্চিত্র দেখার জন্য সুষ্ঠু পরিবেশ পায় না। তাছড়া রাজশাহীতে যে হলে আছে তাতে বন্ধু-বান্ধব নিয়ে সিনেমা দেখার পরিবেশ নেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রাইজুল জান্না মুমু জাগো নিউজকে জানান, বড়ো বোনকে নিয়ে সিনেমা দেখতে এসেছি। এই প্রদর্শনীতে যে সিনেমাগুলো দেখানো হচ্ছে- সেগুলোর লোকমুখে অনেক নাম শুনেছি। কিন্তু বড়ো পর্দায় এগুলো দেখার সৌভাগ্য হচ্ছে বলে আমি খুব আনন্দিত। এ উৎসবে আগামী দিনেও যে সিনেমাগুলো প্রদর্শিত হবে সেগুলো দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন তিনি।

এই উৎসবে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র সংসদ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এদেরই একজন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রতিমা সরকার জাগো নিউজকে বলেন, কাজের পাশাপাশি প্রত্যেকটা সিনেমাই দেখেছি। সবগুলো সিনেমাই আমার খুব ভালো লেগেছে। এ রকম উৎসব আমাদের ভালো ভালো সিনেমা দেখার সুযোগ করে দেয়।

এই উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আগমন ঘটেছিলো দুই বাংলার খ্যাতিনামা ব্যাক্তিবর্গের। এই উৎসবে যোগ দিতে এসেছিলেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভারতীয় চলচ্চিত্রকার বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব ইন্ডিয়ার জেনারেল সেক্রেটারি প্রেমেন্দ্র মজুমদার, বাংলাদেশি চলচ্চিত্রকার নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মানজারেহাসীন মুরাদ, স্বনামধন্য সিনেমাটোগ্রাফার আনোয়ার হোসেন, কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, লেখক ও চলচ্চিত্র গবেষক সাজেদুল আউয়াল, ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের জেনারেল সেক্রেটারি বেলায়াত হোসেন মামুন প্রমুখ।

এ বিষয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী অমিত কুমার বলেন, এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ে এই গুণীজনদের আগমনে আমরা তাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে পারেছি। জীবনে বড়ো হতে তাদের কথা আমাদের উৎসাহ জোগাবে বলে আমি মনে করি।
 
চলচ্চিত্র প্রদর্শনী নিয়ে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ও রাবি চলচ্চিত্র সংসদের সভাপতি ড. সাজ্জাদ বকুল জাগো নিউজকে জানান, আগের দেখা চলচ্চিত্র প্রর্দশনী করা হবে। তাই হয়তো দর্শক কম হবে। কিন্তু প্রদর্শনীতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেলো। এতো দর্শক সিনেমা দেখতে আসছে- যে মিলনায়তনে জায়গা সংকট দেখা দিচ্ছে।

সপ্তাহব্যাপী এ উৎসবে দুই বাংলার খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকারদের নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য, স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য মিলিয়ে ২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এই উৎসবে উপলক্ষে আয়োজিত সকল সেমিনার, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী সকল দর্শক-শ্রোতার জন্য উন্মুক্ত থাকছে।

রাশেদ রিন্টু/এআরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।