পাঁচজনের জন্য সেশনজটে আটকে ৮১ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইবি
প্রকাশিত: ০৯:৪৭ এএম, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

আইনি বেড়াজালে আটকে দুর্বিসহ সময় পার করছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ব্যবস্থাপনা বিভাগের স্নাতক (সম্মান) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। মাত্র পাঁচ শিক্ষার্থীর জন্য আটকে আছে এ শিক্ষাবর্ষের নিয়মিত ৮১ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা।

দীর্ঘ দেড় বছরের সেশনজটে পড়ে শিক্ষাজীবনের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ এ বর্ষের শিক্ষার্থীদের। তাদের একটায় প্রশ্ন, কবে হবে সিন্ডিকেট সভা?

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের চার শিক্ষার্থী তৃতীয় বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ায় ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের সঙ্গে পুনরায় তৃতীয় বর্ষে ভর্তি হয়। এছাড়া ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের একজন শিক্ষার্থীও তাদের সঙ্গে পূনর্ভর্তি হয়। কিন্তু ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিভাগের নতুন শিক্ষা কারিকুলাম তৈরি হয়। এতে তারা এক বছরে দুটি সেমিস্টারে ১০টি কোর্সে দুটি ভাইভায় ৬০ নম্বর এবং ইনকোর্সে ৪০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নেয়।

কিন্তু ওই দুই শিক্ষাবর্ষের পাঁচ শিক্ষার্থী পূর্বের কারিকুলাম অনুযায়ী একটি ভাইভায় ৭০ ও ইনকোর্সে ৩০ নম্বরের পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। এছাড়া নতুন কারিকুলামের সঙ্গে পূর্বের কারিকুলামে পাঁচটি কোর্সের অমিলও রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী, পূনর্ভর্তি হওয়া ৫ জনের পরীক্ষা সম্পন্ন করে চলমান ব্যাচের সঙ্গে নিয়মিত শিক্ষার্থী করতে হবে। কিন্তু কারিকুলামের অমিল থাকায় সমস্যায় পড়ে পরীক্ষা কমিটি। এই সমস্যা সমাধানে ২০২০ সালের ২৫ জানুয়ারি জরুরি সভা করে পরীক্ষা কমিটি। এতে ওই পাঁচজনকে নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব নয় বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ফলে তাদের আলাদা ব্যাচ করে পৃথক দুটি পরীক্ষা কমিটি গঠন করা হয়।

পরে সভার সিদ্ধান্তসমূহ ওই বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষদীয় একাডেমিক সভায় আলোচিত হয়। এতে ওই পাঁচজনকে আলাদা ব্যাচ করার সুযোগ নেই বলে জানানো হয়। তাদের আলাদা পরীক্ষা নিয়ে নিয়মিত ব্যাচের সঙ্গে চালিয়ে নিতে বলা হয়। কিন্তু তাদের কারিকুলাম, কোর্স, পরীক্ষা পদ্ধতি ভিন্ন হওয়ায় সময় সাপেক্ষ সমস্যায় পড়ে পরীক্ষা কমিটি।

এর মাঝে করোনার কারণে ক্যাম্পাস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। পরে গত ১৪ জানুয়ারি ওই পাঁচজনের পাঁচটি কোর্সের পরীক্ষা গ্রহণের ব্যবস্থা নেয় বিভাগ।

এদিকে ১১৮তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। ওই সভার আলোচ্য বিষয়সমূহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে চূড়ান্ত হবে বলে অপেক্ষা করতে হচ্ছে পরীক্ষা কমিটিকে।

অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা চতুর্থ বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষায় অংশ নিলেও ব্যবস্থাপনা বিভাগের এ বর্ষের শিক্ষার্থীরা এখনও তৃতীয় বর্ষের গণ্ডি পেরোতে পারেনি। তারা ২০১৯ সালের পহেলা অক্টোবর তৃতীয় বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষা সম্পন্ন করেছে। এরপর দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হলেও পরীক্ষাই অনুষ্ঠিত হয়নি।

পূর্বের দুই শিক্ষাবর্ষের পূনর্ভর্তিকৃত মাত্র পাঁচ শিক্ষার্থীর জন্য আটকে আছে নিয়মিত ৮১ জনের পরীক্ষা। ফলে তারা দেড় বছরেরও অধিক সময় সেশনজটে পড়ে গেছে।

শিক্ষার্থীরা আক্ষেপ প্রকাশ করে বলেন, আমাদের সহপাঠিরা স্নাতক শেষ করে চাকরির আবেদন শুরু করেছে। আমরা পরীক্ষা নেয়ার জন্য বারবার শিক্ষকদের বলেছি। কিন্তু তারা ওই পাঁচ শিক্ষার্থীর সমস্যা দেখান। পরিবারের স্বপ্ন পূরণে আমরা পিছিয়ে পড়ছি।

এ বিষয়ে ওই বর্ষের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি সহযোগী অধ্যাপক মোর্শেদ আলম আকাশ জানান, বিভাগের শিক্ষকদের আন্তরিকতার ঘাটতি ছিল না। আইনি জটিলতার কারণে সময়মতো পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি।

বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক এএসএম সরফরাজ নেওয়াজ বলেন, আমাদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই। আগামী ১৯ তারিখে সিন্ডিকেট সভা হলে এই মাসেই পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হবে। না হলে অন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

উপাচার্য অধ্যাপক শেখ আবদুস সালাম বলেন, একাডেমিক সভায় যদি এ বিষয়ে আলোচনা হয়ে থাকে তাহলে সিন্ডিকেটে উঠলে সমাধান হবে বলে আশা রাখি।

রায়হান মাহবুব/এফএ/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।