শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারিকরণের চেষ্টা হুমকিস্বরূপ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে বেসরকারিকরণের চেষ্টা হুমকিস্বরূপ বলে মন্তব্য করেছেন ভারতের রাজ্যসভার সদস্য ও মুম্বাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ভালচন্দ্র মনগেকার। বুধবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বৈষম্য, উন্নয়ন এবং গণতন্ত্র’ বিষয়ক গণ-বক্তৃতায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
নাগরিক উদ্যোগ এর সহযোগিতায় গবেষণা ও উন্নয়ন কালেকটিভ এই সভার আয়োজন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মেসবাহ কামালের সঞ্চালনায় এবং ইতিহাস বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সোনিয়া নিশাত আমিনের সভাপতিত্বে সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন, ঢাবির আর্থ অ্যান্ড ইনভায়রনমেন্ট অনুষদের ডিন ও ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাকসুদ কামাল, নাগরিক উদ্যোগের চেয়ারম্যান জাহিদ হাসান প্রমুখ।
অধ্যাপক মনগেকার বলেন, আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে পরিমাণ শিক্ষার্থী আছে দশ বছর পর তার অর্ধেক ও থাকবে না যদি শিক্ষায় বেসরকারিকরণ করা হয়। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে যদি প্রাইভেটের মতোই সমপরিমাণ বেতন-ভাতা নির্ধারণ করা হয় তখন পিতা-মাতারা তাদের সন্তানদের প্রাইভেটে পাঠাতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবেন।
তিনি বলেন, সমাজে যদি বৈষম্য থাকে, বঞ্চনা থাকে, অর্থনৈতিক বৈষম্য থাকে তাহলে সে সমাজে আর গণতন্ত্র থাকে না।
এসময় বাংলাদেশ ও ভারতীয় সম্পর্ককে পারিবারিক সম্পর্ক বলে মন্তব্য করেন ভারতীয় এ অধ্যাপক। বাংলাদেশ-ভারত উভয়ই সবসময়ই সহযোগিতামূলক মনোভাব পোষণ করে বলেও জানান তিনি। উভয় দেশের সমস্যাগুলো সমাধানে ও ভারত সরকার আগ্রহী বলেও তিনি অভিমত দেন।
অধ্যাপক মনগেকার বলেন, গণতন্ত্র বলতে আমরা কেবল আব্রাহাম লিংকনের সংজ্ঞাটাই বুঝি। অথচ আজকের অসম বিশ্বের প্রেক্ষিতে বলা যায়, `Democracy is of the rich, by the rich and for the rich’ অর্থাৎ গণতন্ত্র এখন কেবলই ধনীদের জন্যে, ধনীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আমরা একটি অসম পৃথিবীতে বাস করছি, একটি বৈষম্যমূলক পৃথিবীতে বাস করছি।
অামেরিকার ২৫ শতাংশ সম্পদ সেখানকার জনগণের ১ শতাংশ মানুষের দখলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রতিটি দেশেই ১০-১৫ শতাংশ মানুষ পুরো দেশকে নিয়ন্ত্রণ করছে কেবল বৈশ্বিক অসমতা আর বৈষম্যের দরুণ। প্রতিটি দেশের সরকার, কর্তাব্যক্তিরা, এনজিওগুলোর এ দিকে নজর দেয়া উচিত, একটি বাসযোগ্য পৃথিবী সৃষ্টি করা উচিত।
অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতের তুলনায় সামাজিক উন্নয়নের সূচকে আমরা এগিয়েছি। কিন্তু একটি দেশের উন্নয়নের প্রধান শর্ত হচ্ছে শিক্ষাব্যবস্থায় উন্নয়ন। সেখানে আমরা এখনো খুব বেশি এগোতে পারিনি। কারণ পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় আমাদের দেশে শিক্ষায় বাজেট খুবই কম।
তিনি আরো বলেন, পশ্চাৎপদ মানুষদের আমরা কৌটার মাধ্যমে হয়তো কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করি কিন্তু প্রাথমিক পর্যায় থেকে শহরের ছেলেমেয়েরা যে ধরনের সুযোগ-সুবিধাগুলো পেয়ে থাকে তা কিন্তু তারা পায়না। আমাদের দেশের কর্তা ব্যক্তিদের স্বৈরতান্ত্রিক মনোবৃত্তির খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি, এটি তার প্রমাণ।
এমএইচ/এসএইচএস/পিআর