ডিসেম্বরে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরে তিন হামলা, বিচার হয়নি একটিরও

আল সাদী ভূঁইয়া
আল সাদী ভূঁইয়া আল সাদী ভূঁইয়া , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৫:১১ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০২১
বাম থেকে- সঞ্জিত চন্দ্র দাস, বেনজির হোসেন নিশি ও জেসমিন শান্তা

অডিও শুনুন

গত বছরের ডিসেম্বরের ১৪ থেকে ২১ তারিখের মধ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার নেতাদের হাতে ৪ নেতা-নেত্রী মারধরের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারোই বিচার হয়নি। এ নিয়ে ছাত্রলীগের ভেতরে চলছে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ। কারণ এসব সমস্যার সমাধানে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগই নেয়া হয়নি।

গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা শহীদ বুদ্ধিজীবীদের কবরে ফুল দিতে যান। সে সময় ‘ধাক্কা’ লাগায় ঢাকা মহানগর উত্তরের সাবেক সহ-সভাপতি রুবেল শিকদারকে মারধর করেন ঢাবি শাখার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাস। একইদিনে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে গিয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাবেক নেতা মাহবুবকে মারধর করেন সঞ্জিত।

১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে ফুল দিতে গিয়ে সামনে দাঁড়ানো নিয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি আসাদুজ্জামান সোহেলকে মারধর করেন ঢাবির শামসুন নাহার হল শাখার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জেসমিন শান্তা।

এর পাঁচ দিন পর, ২১ ডিসেম্বর সালাম না দেয়ার অভিযোগে গভীর রাতে ডেকে নিয়ে রোকেয়া হল সংসদের এজিএস ও হল শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ফাল্গুনী তন্বীকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রকাশে পেটান কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক বেনজির হোসেন নিশি এবং শামসুন নাহার হল শাখার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক জেসমিন শান্তা।

এসব ঘটনার পর ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির নেতারা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেননি ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। সর্বশেষ গত ২৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জরুরি সভায় এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত শাস্তির কথা উঠলে সভায় ‘হট্টগোল’ সৃষ্টি হয়।

ছাত্রলীগের একটি সূত্র জানায়, রোকেয়া হলের এজিএস ফাল্গুনী তন্বীর ওপর হামলাকারীদের বিচার করতে চেয়েছিলেন ছাত্রলীগ সভাপতি। কিন্তু হামলাকারীরা সাধারণ সম্পাদকের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন।

মারধরের বিষয়ে কথা বলার জন্য ঢাবি শাখার মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটির সভাপতি সঞ্জিত চন্দ্র দাসের মোবাইলফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

সঞ্জিত চন্দ্র দাসের হাতে মারধরের শিকার হওয়া ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি রুবেল শিকদার জাগো নিউজকে বলেন, ‘কোনো সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়নি। আমাকে ডেকে নিয়ে বলেছে, ‘বড় ভাই-ছোট ভাইয়ের মধ্যে ঝামেলা হইছে। এখন তোরা মিলে যা।’ এ বলে আমাদের বিষয়টা নেতারা মিমাংসা করে দিয়েছে।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বিএম মোজাম্মেল হক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমরা মারধরের বিষয়গুলো শুনেছি। ছাত্রলীগ সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে দ্রুত এসব বিষয়ে মিমাংসা করার জন্য বলে দিয়েছি।’

এসব বিষয়ে জানার জন্য ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করে ও এসএমএস পাঠিয়েও কোনো ধরনের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পরবর্তীতে ছাত্রলীগের সিনিয়র যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বিচারের আশ্বাস দিয়েছেন। তারা বলেছেন, ৪ জানুয়ারি প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর পর বিচার করা হবে।’

আল-সাদী ভূঁইয়া/এমএইচআর/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।