আইন প্রণয়নের বছর পেরোলেও জকসু নির্বাচন নিয়ে উদাসীন জবি প্রশাসন
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (জকসু) আইন সংশোধন সংক্রান্ত রিপোর্ট ও গঠনতন্ত্র প্রণয়নের এক বছর দুই মাস পার হয়ে গেলেও নির্বাচন নিয়ে এখনও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায়ও জকসু আইন প্রণয়নের ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। ২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যকে জকসুর গঠনতন্ত্র ও সংশোধনী আইন সংক্রান্ত রিপোর্ট জমা দেয় গঠনতন্ত্র প্রণয়ন ও আইন সংশোধন সংক্রান্ত কমিটি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জকসু নির্বাচন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইনে কোনো ধারা-উপধারা না থাকায় আন্দোলনে নামে বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালের ১ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় আইনে জকসু নির্বাচনের ধারা সংযোজন ও গঠনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে আইন সংশোধনে উদ্যোগী হয় প্রশাসন। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় সুপারিশ দিতে আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. সরকার আলী আক্কাসকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। ৪৮ দিনের মাথায় (২০১৯ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর) আইন সংশোধন ও গঠনতন্ত্রের একটি খসড়া উপাচার্য ড.মীজানুর রহমানের কাছে জমা দেয় ওই কমিটি।
একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় গড়তে ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন দাব আদায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ আইন কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। কিন্তু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই উপেক্ষিত রয়েছে ছাত্র সংসদ আইন। বর্তমানেও জকসু নির্বাচনের ব্যাপারে উদাসীন জবি প্রশাসন।
জকসু নির্বাচনের জন্য শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গঠনতন্ত্র তৈরির পর তা মতামতের জন্য উন্মুক্ত করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে আপলোড করা হয়। সবার মতামতের ভিত্তিতে জকসুর গঠনতন্ত্র ৮১তম সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানায় প্রশাসন ।
কিন্তু চলতি বছরের ৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ ৮২তম সিন্ডিকেট সভা শেষ হয়ে গেলেও এখনও জকসু আইন প্রণয়নের ব্যাপারে চূড়ান্ত অনুমোদন পায়নি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের চূড়ান্ত গঠনতন্ত্র।
জকসু চাই আন্দোলনের সমন্বয়ক ও বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার পরিষদ জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি রাইসুল ইসলাম নয়ন জাগো নিউজকে বলেন, ‘একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ে ও তাদের স্বার্থে কাজ করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভূমিকা খুবুই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের এই অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করে প্রশাসনের আশ্বাস ছিলো এই বছরের শুরুতে নির্বাচন দেয়ার, কিন্তু করোনার কারণে তা বিলম্বিত হয়েছে। এছাড়াও সর্বশেষ সিন্ডিকেট সভায় জকসু গঠনতন্ত্র নিয়ে প্রশাসন কোনো অনুমোদন দেয়নি। তাই জকসু নিয়ে প্রশাসনের টালবাহানা এখন স্পষ্ট। আমরা চাই দ্রুত গঠনতন্ত্র অনুমোদন দিয়ে ক্যাম্পাস খোলা হলে জকসু নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হোক।’
এ বিষয়ে ছাত্র ইউনিয়ন জবি সংসদের সাধারণ সম্পাদক অনিমেষ রায় বলেন, ‘জকসু আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষার্থীর দাবি। কিন্ত প্রশাসন এই বিষয়টি নিয়ে হেয়ালি করছে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা নিয়ে কথা বলতে ছাত্র সংসদের বিকল্প নেই। জকসু থাকলে আমরা আমাদের ন্যায্য দাবি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাস স্থাপন, হল নির্মাণসহ শিক্ষার্থীদের যাবতীয় অধিকার নিয়ে প্রশাসনের কাছে যেতে পারতাম। শিগগিরই আমরা জকসু নির্বাচন বাস্তবায়নের জন্য কর্মসূচির ডাক দেবো।’
জবি ছাত্রলীগ নেতা ইব্রাহীম ফরাজী বলেন, ‘জকসু আইন প্রণয়ন ও নির্বাচন নিয়ে জবি প্রশাসন দীর্ঘসূত্রিতা করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে আমাদের ছাত্রলীগের কমিটিও নেই। শিগগিরই আমরা জকসু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের কাছে আবেদন জানাব।’
এ বিষয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো. ওহিদুজ্জামান বলেন, ‘এখন ক্যাম্পাস বন্ধ, বিশ্ববিদ্যালয় খোলা হলে জকসু নির্বাচন নিয়ে আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।’
জকসু নির্বাচনের বিষয়ে কথা বলার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড.মীজানুর রহমান মুঠোফোনে কল করা হলে এ বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এসএস/জেআইএম