রাবিতে ‘সক্রেটিসের জবানবন্দি’
তিনশো নিরানব্বই খ্রিস্ট পূর্বাব্দে যখন সক্রেটিসের বিচার হয় তখন তার বয়স সত্তর। তখনকার দিনের অন্যতম রাজনীতিবিদ আনুতুস তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছিলেন যে, সক্রেটিস যুব সমাজকে বিপথে নিয়ে যাচ্ছেন এবং তিনি রাষ্ট্রস্বীকৃত দেবতাদের বিরোধী। সক্রেটিসের বিরুদ্ধে বহুদিন ধরেই অভিযোগ জমছিল। পাঁচশো একজন বিচারকের সামনে তার বিচার হয়। তখনকার দিনে এথেন্সে উকিলের ব্যবস্থা ছিলো না। আসামি এবং ফরিয়াদি দুজনেই বিচারকের সামনে বক্তব্য উপস্থাপন করতেন। এক পর্যায়ে বিচারকের রায়ে সক্রেটিসকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
এই কাহিনীই ‘সক্রেটিসের জবানবন্দি’ শিরোনামে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে মঞ্চায়ন করলো বাংলাদেশ-ভারত নাট্যৎসবে আমন্ত্রিত ঢাকার নাট্যদল দৃশ্যপট। প্রায় দুই ঘণ্টার এই নাটকটি রচনা করেছেন শিশির কুমার দাশ। নির্দেশক ছিলেন আলী মাহমুদ।
নাটকে দ্বিতীয় পর্বের আগে প্রথম পর্বে দেখানো হয় খ্রিস্টের জন্মের চারশো বছর আগেকার কাহিনী। পেলোপনেশীয় যুদ্ধে এথেন্স পরাজিত। তার সব গৌরব লুপ্ত। এথেন্সের গর্ব ছিলো তার গণতন্ত্রে। সেই গণতন্ত্র এখন শেষ। রাজ্য পরিচালনার হার এখন তিরিশ জন লোকের উপর ন্যস্ত। তিরিশ জন লোককে নিয়ে গড়া হয়েছে স্বৈরতন্ত্র। তারা প্রথমে স্বৈরতন্ত্রের পাঁচশো সমর্থক নিয়ে একটি আইন পরিষদ গড়লো। সেই পরিষদ দেশের আইন-শৃঙ্খলার ভার তুলে দিলো এগারো জন লোকের হাতে। সক্রেটিস এদের আদেশ পালন করলেন না। এরপর সক্রেটিসকে খোঁজার পালা। একসময় সক্রেটিস নিজেই উপস্থিত হন একাদশ চক্রের হাতে।
এভাবেই মঞ্চায়ন হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রেটিসের জবানবন্দি। নাটকটিতে অভিনয় করেছেন আলী মাহমুদ, রাহাদ, শুভ, আহসান হাবিব, রকিব চৌধুরী, যশ জায়েদী, জাফর, পারভেজ আখতার, শুভ, অনন্ত, পিকুল বকশী, রনদা, জামাল, শাকিল তানভীর, দ্বীপ, সজীব, ভূষণ।
নাটকটি শুরুর আগে নির্দেশক আলী মাহমুদ বলেন, এটি আমাদের ১১৯তম মঞ্চায়ন। দৃশ্যপটের একদল অদম্য নাট্যকর্মীর নিঃস্বার্থ ত্যাগ আর পরিশ্রমের মধ্য দিয়ে এটি এই পর্যন্ত এসে পৌঁছেছে। এসময় তিনি সকলকে শুভেচ্ছা ও শুভকামনা জানান।
নাটকটির দুটি পর্বের মাঝখানে ১০ মিনিট বিরতি দেয়া হয়। তবে বিরতির বিষয়টা খারাপ লেগেছে উল্লেখ করে হিসাববিজ্ঞান ও তথ্যব্যবস্থা বিভাগের ৮ম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান জাগো নিউজকে বলেন, মঞ্চনাটকের মাঝখানে ১০ মিনিটের বিরতির বিষয়টা আমার ভালো লাগেনি। এটা নাট্যদলের ম্যানেজমেন্ট ক্ষমতার অভাব বলে উল্লেখ করেন তিনি।
মঞ্চনাটকটি দেখে অনেকেরই বেশ ভালো লেগেছে। তবে কেউ কেউ প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনাও করেছেন। নাটক দেখে নাট্যকলা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী বিহাস বলেন, নাটক বেশ ভালো লেগেছে। এর পটভূমি প্রশংসা পাওয়ার মতো। তবে কিছু কিছু জায়গায় অভিনয়ে দুর্বলতা আছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী হালিমা খুশি বলেন, নাটকটিতে কোনো মেয়ে চরিত্র নেই। তারপরও নাটকটি অনেক ভালো লেগেছে। তবে শেষের দিকে সক্রেটিসের যখন বিচার কার্য চলছিল তখন আবহ সঙ্গীতটা তার ভালো লাগেনি বলে জানান তিনি।
দর্শন বিভাগে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী নিরূপমা হাবিবা ও রাশেদ হাসান বলেন, নাটকের শব্দধারণ ক্ষমতার চেয়ে দর্শক বেশি থাকায় অনেক সময় শুনতে সমস্যা হয়েছে।
তবে নাটকটির শব্দ সমস্যার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষক ও বাংলাদেশ-ভারত নাট্যৎসবের আহ্বায়ক আরিফ হায়দার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আমাদের সাধ্যমতো সর্বোচ্চ শব্দ স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করেছি। তবে এই হলটি মূলত মঞ্চনাটক প্রদর্শনের উপযোগী না। তারপরও অতিরিক্ত দর্শক থাকার কারণে শুনতে একটু সমস্যা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এই নাট্যৎসবে দর্শকের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। এমনকি অনেক শিক্ষার্থীরা নাটক দেখার জন্য টিকিট পর্যন্তও পাননি। এ বিষয়ে আরিফ হায়দার বলেন, গত দুই-তিন বছরের মধ্যে এমন দর্শক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো প্রদর্শনীতে চোখে পড়েনি। তবে এটা অনেক ভালো বিষয় যে ধীরে ধীরে নাট্যপ্রেমী বাড়ছে।
রাশেদ রিন্টু/বিএ