উচ্চমূল্যে নিম্নমানের খাবার নোবিপ্রবি ক্যাফেটেরিয়ায়!

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক নোবিপ্রবি
প্রকাশিত: ০২:০৪ পিএম, ১২ মার্চ ২০২০

উচ্চমূল্যে নিম্নমানের খাবার এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বেহাল দশা নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ার। স্যাঁতসেঁতে মেঝে, মাছির ভনভন শব্দের সঙ্গে পোড়া ও বাসি তেলে চলে রান্নার কাজ। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে রান্না করা খাবার খেয়ে একদিকে শিক্ষার্থীরা যেমন গ্যাস্টিক, আলসারসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অন্যদিকে খাবারের উচ্চমূল্য হওয়ায় আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। সরেজমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে এমন চিত্র দেখা যায়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে আর কোনো খাবার হোটেল বা দোকান না থাকায় এ ক্যাফেটেরিয়াই শিক্ষার্থীদের একমাত্র ভরসা। সেই ভরসাস্থলের এমন বেহাল অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ক্যাম্পাসের ভেতরে কোনো খাবার বা চায়ের দোকান নেই। এই সুযোগে শিক্ষার্থীদের একরকম জিম্মি করে ক্যাফেটেরিয়ার মালিকপক্ষের বিরুদ্ধে খাবারের উচ্চমূল্য নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের খাবারের দোকানগুলোর তুলনায় ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মূল্য তুলনামূলক কম হওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে ঠিক উল্টো।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পৃষ্ঠপোষকতা সত্ত্বেও ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের অতিরিক্ত মূল্য আদায়ের ফলে বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কোনো বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা থাকলে তারাই বেশি বিড়ম্বনায় পড়েন। একদিকে মানহীন অন্যদিকে খাবারের দাম বেশি।

সরেজমিন আরও দেখা যায়, কয়েকদিনের পোড়া তেলে রান্না হচ্ছে বিভিন্ন খাবার। অন্যদিকে, রান্নাঘরের অপরিষ্কার, নোঙরা ও স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ দেখে যে কারোরই গা ঝিমঝিম করে উঠবে। যেসব টেবিলে বসে শিক্ষার্থীরা খাবার গ্রহণ করেন সেখানে ভনভন করে উড়ছে মাছি। এছাড়া বাসি-পচা খাবার গরম করে বিক্রির অভিযোগও রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।

অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মানহীন খাবার খেয়ে শিক্ষার্থীরা গ্যাস্টিক, আলসার, হেপাটাইটিস, টাইফয়েডসহ লিভার ও কিডনির বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন।

jagonews24

ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী বায়জিদ মজুমদার বলেন, কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়ায় পরিমাণ অনুযায়ী খাদ্যমূল্য অনেক বেশি রাখা হয়। নাস্তার ক্ষেত্রে নোয়াখালী জেলা শহর মাইজদির চেয়ে এখানে মূল্য বেশি। কিন্তু আমরা অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখেছি, তাদের ক্যান্টিনগুলোতে খাবারের মূল্য স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক হয়। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের চিত্র সম্পূর্ণ উল্টো। এখানে ভাতের চাল দিয়ে রান্না করা খিচুড়ি ৩০ টাকা, ব্রয়লার ও তেলাপিয়ার কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকার মধ্যে হলেও প্রতি পিস আমাদের খেতে হয় ৫০ টাকা দিয়ে।

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের সুবিধার জন্য স্বাভাবিক মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে খাদ্যের নিশ্চয়তা দিতে প্রশাসন থেকে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা হয়। আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হওয়ার ১৫ বছরেও এই সুবিধা দেয়া হয়নি। সব বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দ্রুত মূল্য নির্ধারণের দাবি জানাচ্ছি।

সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাহমুদুল হাসান আরিফ বলেন, উচ্চমূল্যে নিম্নমানের খাবার— বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। সঙ্গে আছে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ। ফলে প্রতিনিয়ত অসুস্থ হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। এ সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান প্রয়োজন। অন্যথায় ক্যান্টিনে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হব আমরা।

তবে ক্যাফেটেরিয়ার ম্যানেজার ইউসুফ কামাল সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। বলেন, ‘আমরা আমাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করি খাবারের মান ঠিক রাখতে এবং স্বাস্থ্যকর পরিবেশে পরিবেশন করতে।’

এ বিষয়ে নোবিপ্রবি ফুড টেকনোলোজি অ্যান্ড নিউট্রিশন সায়েন্স বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুস্মিতা ঘোষ বলেন, এ ধরনের খাবারে শিক্ষার্থীরা ডায়রিয়াসহ দীর্ঘমেয়াদি নানা কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উচিত ক্যাফেটেরিয়ার খাবারের মান নিয়মিত তদারকি করা।

উচ্চমূল্যে নিম্নমানের খাবার পরিবেশন নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. নেওয়াজ মোহাম্মদ বাহাদুর বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো শিক্ষার্থী আমাদের কাছে অভিযোগ করেনি। যেহেতু বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে, অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করব।

এমএফ/এমএআর/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।