ঢাবিতে সেকেন্ড ক্লাসের ছেলেরা ভিসি হলেও মেয়েদের মূল্যায়ন হয়নি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেছেন, সাংবাদিকদের অবশ্যই নিরপেক্ষতা বজায় রাখা উচিত। কোন জায়গা থেকে কি প্রতিবেদন লেখা হচ্ছে, সেটি দেশ ও দশের কিংবা কোনো ব্যক্তির সীমাহীন ক্ষতি করছে কিনা তা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা উচিত।
সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুুরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির (জাবিসাস) বর্ষসেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার-২০১৯ ও সমিতির নতুন কমিটির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।
ভিসি ফারজানা ইসলাম বলেন, যতদিন বেঁচে আছি ততদিন আমি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কাজ করে যেতে চাই। আমি প্রথম ভালোবাসি দেশকে, তারপর এই ক্যাম্পাসকে। এজন্য আমি এখন বিমানে ভ্রমণ করি না। যেন আমি এদেশের মাটিতেই মরতে পারি। যাতে আমি পরজনমে এদেশের গাছ বা নদী হয়ে জন্মলাভ করতে পারি।
তিনি বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর দুটিতে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করার পরও ‘মেয়েরা কম কাজ করে’ অজুহাতে আমাকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হলো। তারপর জাহাঙ্গীরনগর আমাকে সর্বোচ্চ সম্মান দিয়েছে। ঢাবিতে সেকেন্ড ক্লাস নিয়ে ছেলেরা ভিসি হতে পারলেও আমাদের (মেয়েদের) মূল্যায়ন করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সভাপতি ও দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম বলেন, গণমাধ্যম এখন বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। এসব জেনেই সাংবাদিকরা প্রতিবন্ধকতা এড়িয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছেন। ছোট দেশে মাত্রাতিরিক্ত সংবাদপত্র এই চ্যালেঞ্জকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদ। এই পুঁজিবাদ বাজার থেকে সংসদ ছাড়িয়ে এখন সংবাদ মাধ্যমের টুঁটি চেপে বসেছে। যে মানুষ বা প্রতিষ্ঠানটি পরাধীন তার কাছ থেকে স্বাধীন কাজের আশা করা যায় না। ফলে এ অবস্থায় গণমাধ্যম মাথা তুলে দাঁড়াবে কিভাবে?
এর আগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সদস্যদের মধ্যে বর্ষসেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার তুলে দেন আমন্ত্রিত অতিথিরা। এতে প্রথম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার পেয়েছেন ডেইলি স্টারের জাবি প্রতিনিধি মো. আসাদুজ্জামান, দ্বিতীয় হয়েছেন ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্লাবন তারিক এবং যৌথভাবে তৃতীয় পুরস্কার পেয়েছেন দৈনিক যুগান্তরের রাহুল এম ইউসুফ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনের শরিফুল ইসলাম সীমান্ত। এছাড়া বাংলা ফিচার ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে তহিদুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম এবং ইংরেজি ক্যাটাগরিতে আব্দুল্লাহ আল মাসুম ও তারেক আজিজ বর্ষসেরা পুরস্কার পেয়েছেন।
এসব পুরস্কারের পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করেন জাবির সংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যায়ন বিভাগের সভাপতি শেখ আদনান ফাহাদ, এএফপির ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম ও দৈনিক যুগান্তরের প্রধান প্রতিবেদক মাসুদ করিম।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক নুরুল আলম, বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ প্রযোজক মাসুদ হাসান খান, জাবিসাস অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ শহিদুল হক মঞ্জু, জাবিসাসের উপদেষ্টা অধ্যাপক সোহেল আহমেদ ও এএফপির ব্যুরো প্রধান শফিকুল আলম।
এছাড়া স্বাগত বক্তব্য দেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এ এ মামুন, জাবিসাস নির্বাচন-২০২০-এর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক খালিদ কুদ্দুস, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক রাশেদা আখতার, প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান, সাবেক প্রক্টর অধ্যাপক তপন কুমার সাহা, জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের (এনটিএফ) সভাপতি অধ্যাপক শামছুল আলম সেলিম, শাখা ছাত্রলীগের উপ-দফতর সম্পাদক এম মাঈনুল হুসাইন ও শেখ হাসিনা হল ছাত্রলীগের সভাপতি আমরিন তৃষা প্রমুখ।
ফারুক হোসেন/এএম/জেআইএম