ঢাবি থেকে ৩ শাসকের ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহারের দাবি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ঢাবি
প্রকাশিত: ১২:১৫ এএম, ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২০

পাকিস্তানের তিন শাসক খাজা নাজিমুদ্দিন, ইস্কান্দার মির্জা এবং মুহাম্মদ আইয়ুব খানকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) থেকে দেয়া সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহারের দাবি উত্থাপন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৪ ফেব্রুয়ারি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতিতে ‘বিতর্কিত ব্যক্তিদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রদত্ত সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রত্যাহার আন্দোলন পরিষদ’ এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন দর্শন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হারুনুর রশিদ, সংস্কৃত বিভাগের চেয়ারম্যান নমিতা মন্ডল, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাখাওয়াত আনসারী এবং সংস্কৃতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক প্রমথ মিস্ত্রি।

লিখিত বক্তব্যে এই পরিষদের আহ্বায়ক ড. সাখাওয়াত আনসারী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সর্বপ্রাচীন এবং অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়টি এ পর্যন্ত মোট ৫২ জনকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করেছে। যাদেরকে ডিগ্রি প্রদান করা হয়েছে ধরে নিতে হবে যে তারা রাষ্ট্র ও সমাজে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি।

কিন্তু পাকিস্তান আমলের নয়জনের মধ্যে তিনজনকে ডিগ্রি প্রদান নিয়ে আমরা প্রশ্ন উত্থাপন করছি। এমন তিনজন হলো পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল খাজা নাজিমুদ্দিন, পাকিস্তানের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি ইস্কান্দর মির্জা এবং পাকিস্তানের ভূতপূর্ব রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আইয়ুব খান।

তিনি আরও বলেন, ভাষা আন্দোলনের ৪৮ এবং ৫২ এর দুইপর্বে খাজা নাজিমুদ্দিনের ভূমিকা ছিল বাংলার বিরুদ্ধে এবং বাঙালি বিরোধী। যখন বাংলাকে পূর্ব বাংলার সরকারি ভাষা, আদালতের ভাষা এবং শিক্ষার মাধ্যম করার প্রস্তাব পেশ করা হয় তখনি আইনসভার সদস্যদের সমর্থনের পর তা গৃহীত হয়। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার যে প্রস্তাব এবং চুক্তি হয়েছিল তা নাজিমুদ্দিন উত্থাপন করেননি। সংগ্রাম পরিষদ এ ব্যাপারে তার কাছে কৈফিয়ত দাবি করলে তিনি বলেছিলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এভাবে তিনি বারবার বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন বাঙালিদের সঙ্গে।

অন্যদিকে ইস্কান্দার মির্জার ছিলেন অগণতান্ত্রিক, সংবিধানবিরোধী এবং স্বার্থনূকুল। তিনি কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারকে বরখাস্ত করেন। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের সকল রাজনৈতিক দলের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করেন। সামরিক আইন জারি করেন। তিনি সংবিধান বাতিল করলেও সংবিধান তাকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে সংবিধান বাতিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো ক্ষমতা দেয়নি।

অন্যদিকে আইয়ুব খান ছিলেন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও ক্ষমতালিপ্সু। তিনি প্রথম বিডি মেম্বারদের মাধ্যমে হ্যা/না পদ্ধতির প্রয়োগে রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছাড়াই ১৯৬০ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ছাত্র আন্দোলন দমনে তিনি প্রথম এনএসএফ নামের পেটুয়া বাহিনী তৈরি করেন। তার দাম্ভিকতার পরিণতিতে ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিহিংসার চরিতার্থ কল্পে ১৯৬৮ সালে বঙ্গবন্ধু সহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার অভিযোগে মিথ্যা ষড়যন্ত্র মামলা করেন।

অধ্যাপক ড. হারুনুর রশিদ বলেন, ‘ইতিহাসের এ রকম তিনজন কুখ্যাত ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রদান বাঙালি সংস্কৃতির চেতনার বিরুদ্ধে আঘাত। এটা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য নয়, বাংলাদেশের ইতিহাসের জন্য অসম্মানজনক। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে আঘাত হানে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাতিষ্ঠানিক চেতনা রাখতে এই কলঙ্ক তিলক মুছে ফেলতে হব’।

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই বিতর্কিত ব্যক্তিদের সম্মানসূচক ডিগ্রি প্রত্যাহার না করে তাহলে আমরা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব। এ ব্যক্তিদের নাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় থাকলে আমরা স্বেচ্ছায় আমাদের অর্জিত সার্টিফিকেট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহার করে নেব।

উল্লেখ্য, আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে জনসচেতনতামূলক অবস্থান কর্মসূচি চলবে। এ ছাড়াও উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন এই আন্দোলন পরিষদের আহ্বায়ক ড. সাখাওয়াত আনসারী।

এমআরএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।