চবি ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ, পরিস্থিতি থমথমে
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) শাখা ছাত্রলীগের মধ্যে পৃথক দুটি সংঘাতের ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাত কর্মী আহত হয়েছেন। এদের মধ্যে তিনজনকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এদিকে তিন কর্মীকে মারধরের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে আল্টিমেটাম দিয়েছে বিজয় নামে ছাত্রলীগের একটি উপপক্ষ। অন্যথায় ক্যাম্পাসে লাগাতার অবরোধের ঘোষণা করা হবে।
বুধবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশ্ববদ্যালয়ের জিরো পয়েন্ট ও সোহরাওয়ার্দী হল মোড়ে এসব ঘটনা ঘটে। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী ও শাহ আমানত হলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পুলিশের সহায়তায় তল্লাশি অভিযান চলছে বলে জানা গেছে।
পৃথক দুটি ঘটনার বিষয়ে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিকেলে সাড়ে ৪টার দিকে কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে একটি ইভেন্ট শুরুর আগে ট্র্যাকে অনুশীলন করছিলেন ইতিহাস বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শামীম আজাদ। তিনি শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ সিএফসি কর্মী হিসেবে পরিচিত। তাকে ট্র্যাক থেকে সরে যেতে বললে বিজয় পক্ষের স্পোর্টস সায়েন্স বিভাগের মিঠুন সরকারকে চেয়ার দিয়ে আঘাত করার চেষ্টা করে। দুইজনের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে।
আজাদের আহত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে সিএফসি পক্ষের কর্মীরা শাহ আমানত হল থেকে জড়ো হয়ে সোহরাওয়ার্দী হলে বিজয়ের তিন কর্মীকে মারধর করে। আহতরা হলেন- রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী আবু বকর সিদ্দিক জীবন, আইন বিভাগের একই সেশনের অপূর্ব এবং গণিত বিভাগের রাওফান। পরে চিকিৎসার জন্য তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় বিজয় ও সিএফসি গ্রুপের মধ্যে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধাওয়া পাল্টা ও উত্তেজনা বিরাজ করে। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পুলিশ দুই পক্ষকে হলে ঢুকিয়ে দেয়। পরিস্থিতি এখনও থমথমে।
এদিকে বিজয় পক্ষের তিন কর্মীকে 'শিবির স্টাইলে রগ কেটে' দেয়ার দাবি করে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ ইলিয়াস জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের উপস্থিতিতে ও ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের নির্দেশে ন্যাক্কারজনক এ ঘটনা ঘটেছে। তাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কারের দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে জড়িতদের আজ রাত ৯টার মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে। অন্যথায় বিশ্ববিদ্যালয়ে লাগাতার অবরোধ চলবে।
এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও চবি ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেলের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এর আগে পৃথক আরেকটি ঘটনায় বিকেল ৩টা ৪০ মিনিটের দিকে জিরো পয়েন্ট সংলগ্ন একটি খাবার দোকানে শাখা ছাত্রলীগের উপপক্ষ সিক্সটি নাইনের তিন কর্মী মারধরের শিকার হন। গত সোমবার প্রক্টর কার্যালয়ে দুই ছাত্রলীগের কর্মীর মধ্যে মারধরের ঘটনার জেরে রেড সিগন্যালের অনুসারীরা সিএনজি অটোরিকশাযোগে এসে তাদের ওপর এমন অতর্কিত হামলা চালায় বলে দাবি করেন।
আহতরা হলেন- নাট্যকলা বিভাগের মাহফুজুল হুদা লোটাস, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ইব্রাহিম খলিল ও ইতিহাস বিভাগের জাহিদ শাকিল। তারা সবাই ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এদিকে তিন কর্মীকে মারধরের ঘটনায় সিএক্সটি নাইনের কর্মীরা বিকেলে জিরো পয়েন্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে স্লোগান দেয়। তারা বিকেলে ৪টার শহরগামী শাটল ট্রেনের চাবি কেড়ে নিয়ে ফেলে। এতে বন্ধ হয়ে পড়ে ট্রেন চলাচল। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এ ঘটনায় বিচারের আশ্বাসের ভিত্তিতে বিকেলে ৫টার দিকে তারা প্রধান ফটকের তালা খুলে দেয় ও ট্রেনের চাবি ফেরত দেয়।
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ইকবাল হোসেন টিপু জাগো নিউজকে বলেন, বিনা কারণে কারও ওপর আঘাত ন্যায়সঙ্গত নয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বিচারহীনতার কারণে এসব ঘটনা ঘটছে।
এসব বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এস এম মনিরুল হাসান জাগো নিউজকে বলেন, এসব একেবারেই অপ্রত্যাশিত। আমরা এসব বিষয় পর্যবেক্ষণ করছি। জড়িত যেই হোক কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
আবদুল্লাহ রাকীব/বিএ