ইবিতে নিষ্ক্রিয় ছাত্রলীগ
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু হয়েছে সোমবার। বিগত বছরে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ভর্তিচ্ছুদের পাশে থাকলেও এবার তাদের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। ভর্তি পরীক্ষার মত মহাযজ্ঞে ছাত্রলীগের কার্যক্রম না থাকাটা হতাশাজনক বলে মনে করছেন দলীয় কর্মীরা।
এদিকে গত কয়েক বছর ইবিতে ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্রদলের কোনো কার্যক্রম চোখে না পড়লেও এবার ছাত্রলীগের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে ব্যানার টাঙিয়ে ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে তারা। সেই সঙ্গে ছাত্রদলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাসে ভর্তিচ্ছুদের সহায়তা করছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্র মৈত্রীও ভর্তিচ্ছুদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা যায়, বিগত বছরের ভর্তি পরীক্ষায় ইবি শাখা ছাত্রলীগ ভর্তিচ্ছুদের সহায়তায় বিভিন্ন সেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। ভর্তি পরীক্ষার সময় ছাত্রলীগ প্রধান ফটকে অভিভাবক কর্ণার ও ব্যানার ফ্যাস্টুন টাঙিয়ে ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানাতো। এছাড়াও তারা আবাসিক হলগুলোর ফটকে অভ্যর্থনা কক্ষ করে সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে ভর্তিচ্ছুদের থাকার ব্যবস্থা করত।
যদিও গত বছর ভর্তি পরীক্ষার ঠিক এক সপ্তাহ আগে ইবি ছাত্রলীগের কার্যক্রম স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর ভর্তি পরীক্ষার সময়ে কেন্দ্র থেকে মৌখিক অনুমতি নিয়ে গত বছরও ভর্তিচ্ছুদের সহযোগিতা করেন সংগঠনটির নেতাকর্মীরা।
এ বছর চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন। কমিটি থাকার পরও ভর্তি পরীক্ষায় কোনো তৎপরতা নেই ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে। ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানিয়ে কোনো ব্যানারও করেনি তারা।
এ বিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রবিউল ইসলাম পলাশ বলেন, ‘সংগঠনের অভ্যন্তরীণ ঝামেলার কারণে অপ্রতিকর ঘটনা এড়াতেই এবার ভর্তি পরীক্ষায় কার্যক্রম চালানো হয়নি।’
জানা যায়, দীর্ঘ আট মাস কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর গত ১৪ জুলাই ইবিতে রবিউল ইসলাম পলাশকে সভাপতি এবং রাকিবুল ইসলাম রাকিবকে সাধারণ সম্পাদক করে কমিটি ঘোষণা দেয় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি। তবে ২ মাস পার না হতেই সাধারণ সম্পাদকের ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে নেতা হওয়ার অডিও ফাঁস হলে সভাপতি-সম্পাদককে দু’জনকেই অবাঞ্ছিত ঘোষণা করে পদ বঞ্চিতরা। সেই থেকে সভাপতি-সম্পাদককে একাধিকবার ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করে তাদের অনুসারীরা।
জানা যায়, গত মাসের শেষ দিকে কেন্দ্রীয় নেতারা উভয় গ্রুপকে ডেকে অভিযোগ শুনলেও সমাধান করতে সক্ষম হননি। ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের এই অস্থিরতার কারণে কেন্দ্র থেকে ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্রীক কার্যক্রম না চালানোর নির্দেশণা দেয়া হয়েছে।
ছাত্রলীগের বিদ্রোহী গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শিশির ইসলাম বাবু বলেন, ভর্তিচ্ছু এবং অভিভাবকদের পাশে থাকার ইচ্ছা এবং প্রস্তুতি আমাদের ছিল। তবে কোনো অদৃশ্য শক্তির ইন্ধনে কেন্দ্র থেকে আমাদেরকে নিষেধ করা হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দৃশ্যমান কার্যক্রম না থাকলেও ছাত্রলীগ কর্মীরা সমষ্টিগতভাবে ভর্তিচ্ছু এবং অভিভবাকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে।
এ বিষয়ে ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।
এদিকে ছাত্রলীগের অনুপস্থিতিতে ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার টাঙিয়েছে ইবি শাখা ছাত্রদল। ক্যাম্পাসের প্রধান ফটক এবং ইবি থানা সংলগ্ন গেটে দলীয় ব্যানার দিয়ে ভর্তিচ্ছুদের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছে দলটি।
এছড়াও ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নিয়মিত ক্যাম্পাসে আসছেন দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা ছাত্রদল নেতারা। তারা বিভিন্নভাবে ভর্তিচ্ছুদের সহায়তা করে যাচ্ছেন বলেও জানা গেছে। তবে ছাত্রদলের দুটি ব্যানারই ছিঁড়ে ফেলেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।
এ বিষয়ে ইবি শাখা ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক শাহেদ আহম্মেদ বলেন, ‘আমরা ভর্তিচ্ছুদের মাঝে কলম ও খাবার পানি বিতরণ করেছি। এছাড়াও দূর-দূরান্ত থেকে আগত ভর্তিচ্ছু ও অভিভাবকদের সাধ্যমত খাবারের ব্যবস্থা করেছি। অনেককে আমাদের বাসা বাড়িতে থাকার ব্যবস্থাও করেছি।’
এদিকে ছাত্রদলের পাশপাশি ছাত্র ইউনিয়ন এবং ছাত্র মৈত্রীও ভর্তিচ্ছু এবং অভিভাবকদের সহযোগিতা করে যাচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে উভয় ছাত্র সংগঠনের পক্ষ থেকে বানানো হয়েছে অভিভাবক কর্ণার।
এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রকৌশল অফিস কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে একটি অভিভাবক কর্ণার করেছে। সেখানে বিনামূল্যে খাবার পানি, চা-নাস্তার ব্যবস্থা রয়েছে। এর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, স্বেচ্ছাসেবী ছাত্র সংগঠন বুনন, ইমারজেন্সি রেসপন্স ফর হিউম্যনিটি, রোভার স্কাউট, বিএনসিসিসহ বিভিন্ন সংগঠন ভর্তিচ্ছু এবং অভিভাবকদের সহযোগিতায় কাজ করে যাচ্ছে।
ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ/এমএমজেড/পিআর