বুয়েটে ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ
আবরার ফাহাদ হত্যায় বুয়েটের অভিযুক্ত ১৯ জনকে অস্থায়ী বহিষ্কারের ঘোষণা দিয়েছেন ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম। এ ছাড়া এই মুহূর্ত থেকে বুয়েটে সব দলের ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন তিনি।
ভিসি বলেন, ‘আমার নিজ ক্ষমতায় বুয়েটের সব রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ ঘোষণা করছি।’
এ সময় জোর করতালিতে এ সিদ্ধান্তকে অভিনন্দন জানান শিক্ষার্থীরা।
অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, এখন থেকে ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে কেউ জড়িত থাকলে ডিসিপ্লিনারি বোর্ডের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
শিক্ষার্থীদের আলটিমেটামের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. সাইফুল ইসলাম শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৫টায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বুয়েটের কেন্দ্রীয় অডিটোরিয়ামে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন।
শিক্ষকদের রাজনীতি নিষিদ্ধের ব্যাপারে ভিসি বলেন, বুয়েট অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী শিক্ষক রাজনীতিও নিষিদ্ধ। বুয়েটের শিক্ষকরা কোনো রাজনৈতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না।
এ সময় ছাত্রকল্যাণ পরিচালক মিজানুর রহমান বলেন, আমি কোন মতাদর্শের তা সবাই জানেন। প্রত্যেকটা ব্যক্তির নিজস্ব চিন্তা-ভাবনা ও কোনো দলের প্রতি সমর্থন দেয়ার অধিকার রয়েছে। তবে আজ থেকে আমি ঘোষণা করছি, যে দলই রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকুক না কেন, আমি কোনো ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণ করব না। অন্য শিক্ষকরাও চাইলে অর্ডিন্যান্স মেনে চলতে পারেন।
আবরারের বিষয়ে ভিসি অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম বলেন, আবরার হত্যায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতের ব্যাপারে সরকার আশ্বস্ত করেছে। অপরাধীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেবে বুয়েট। দ্রুততম সময়ের মধ্য আবরার হত্যায় অভিযুক্তদের চার্জশিট দিতে বুয়েট প্রশাসন কাজ করবে।
তিনি বলেন, মামলা পরিচালনায় আবরারের পরিবার আর্থিক সহায়তা চেয়ে আবেদন জানালে বুয়েট প্রশাসন থেকে সহায়তা করা হবে। যেহেতু এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান, তাই অর্থ দেয়ার ক্ষেত্রে কিছু প্রক্রিয়া রয়েছে। সরকারের কাছ থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া গেছে।
সব নির্যাতনের ঘটনার তদন্ত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, নির্যাতন প্রতিরোধে ছাত্রদের নিয়ে কমন প্লাটফর্ম করা হবে।
হলগুলোয় র্যাগিংয়ের নামে শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতনের বিষয়ে দ্রুততম সময়ে তদন্ত কমিটি করে ব্যবস্থা নেয়া হবে জানিয়ে ভিসি বলেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ক্যাম্পাসের মধ্যে সিসিটিভি বসানো হবে। এ জন্য সময়ের প্রয়োজন রয়েছে।
বক্তব্যের শুরুতেই ক্ষমা চেয়ে নেন ভিসি। বলেন, ‘‘আমার কিছুটা ভুল হয়েছে, আমি তোমাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। আমার ভুল আমি স্বীকার করেছি, তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দাও।’
‘আবরার আমার সন্তানের মতো ছিল। তোমাদের যেমন কষ্ট লাগছে তার মৃত্যুতে আমারও অনেক খারাপ লেগেছে। এটি আমি মেনে নিতে পারিনি। তার মৃত্যুতে দুঃখ তোমরা পেয়েছ, আমিও পেয়েছি। আমরা সকলেই মর্মাহত।’
এর আগে বিকেল ৫টা ২২ মিনিটে উপাচার্য অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করেন। তিনি ও ডিএসডব্লিউ পরিচালকসহ সাতজন মঞ্চে বসেন। শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিভিন্ন অনুষদের ডিনরাও আলোচনায় উপস্থিত রয়েছেন।
এর আগে আলোচনায় অংশ নিতে শিক্ষার্থীরা পরিচয়পত্র দেখিয়ে সারিবদ্ধভাবে অডিটোরিয়ামে প্রবেশ করেন। অডিটোরিয়ামে প্রবেশের জন্য সাংবাদিকদের প্রেস কার্ড দেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেয়ার জের ধরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে রোববার (৬ অক্টোবর) রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দুইতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ লাশের ময়নাতদন্ত করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’ নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরে বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।
আবরার হত্যাকাণ্ডের বিচার দাবিসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনে উত্তাল রয়েছে বুয়েট ক্যাম্পাস।
আরএম/এমএইচএম/সাদী/জেডএ/পিআর