অস্থির বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা অনিশ্চিত!
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। আগামী ১৪ অক্টোবর এ পরীক্ষা হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের কারণে যথাসময়ে এ পরীক্ষা আয়োজন নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
তবে আগামীকাল (শুক্রবার) বিকেলে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বুয়েট উপাচার্য অধ্যাপক সাইফুল ইসলামের বৈঠকের ওপর নির্ভর করছে ভর্তি পরীক্ষার ভবিষ্যৎ- এমনটাই জানিয়েছেন বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ।
বুয়েট প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত ৫ অক্টোবর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করার কথা থাকলেও দুর্গাপূজার কারণে তারিখ পিছিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বুয়েট প্রশাসন। পরে তা ১৪ অক্টোবর আয়োজনের ঘোষণা দেয়া হয়। ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে প্রশাসন।
গত ৭ অক্টোবর আবরার ফাহাদকে হলের মধ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনার জের ধরে লাগাতার আন্দোলনে যুক্ত হন তারা। ১০ দফা দাবি নিয়ে তারা গত তিনদিন ধরে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।
গত কয়েকদিন সরেজমিনে দেখা গেছে, আবরার হত্যার বিচারের দাবিতে শুরু হওয়া এ আন্দোলনের কারণে অস্থির অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, প্রতিবাদী স্লোগানে কম্পিত হয়ে উঠেছে বুয়েট ক্যাম্পাস। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন তারা। তাদের আন্দোলনে বুয়েটের শিক্ষক ও সাবেক শিক্ষার্থীরা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে এ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হয়ে উঠেছে।
দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সকল পরীক্ষা ও ক্লাস বর্জন করারও ঘোষণা দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। শুধু তাই নয়, আগামী ১৪ অক্টোবর বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত রাখারও দাবি জানিয়েছেন তারা। এসব কারণে নির্ধারিত সময়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা বুয়েট প্রশাসনের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক এ কে এম মাসুদ বৃহস্পতিবার জাগো নিউজকে বলেন, আমরা আশাকরি নির্ধারিত সময়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা সম্ভব হবে। শুক্রবার বিকেল ৫টায় শিক্ষার্থীদের সকল দাবি-দাওয়া বাস্তবায়নে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপাচার্যের বৈঠকে বসার কথা রয়েছে। এ বৈঠকের পর নির্ধারিত সময়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যাবে।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সকল দাবি মেনে নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন উপাচার্য। সেসব কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় তা নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে। আশাকরি এ আলোচনার মধ্য দিয়ে বুয়েটের চলমান সংকট নিরসন হবে।
ভর্তি পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হবে? জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সভাপতি বলেন, পরীক্ষা পিছিয়ে গেলে ভর্তিপ্রত্যাশীরা নানা ধরনের ভোগান্তির মধ্যে পড়বে। অনেকে অভিভাবকদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে আসবে, নির্ধারিত দিনে পরীক্ষা না হলে তাদের ফিরে যেতে হবে। অনেকে আবার পরবর্তী পরীক্ষার দিন পর্যন্ত ঢাকায় থাকার চেষ্টা করবেন। যাদের ঢাকায় আত্মীয়-স্বজন নেই তাদের জন্য অনেক কষ্টকর পরিস্থিত সৃষ্টি হবে।
শুক্রবার উপাচার্য ও শিক্ষার্থীদের বৈঠকের পর বুয়েট শান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা বলা কঠিন, যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে তারা অল্প বয়সের ছেলেমেয়ে। নিজেদের ইমোশনে (আবেক) তাড়িত হয়ে তারা এ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন।
তাই কাল বৈঠকের পর বুয়েটের অনুকূল পরিস্থিতি ও ভর্তি পরীক্ষা ভবিষ্যৎ ধারণা করা সম্ভব হবে বলেও জানান বুয়েটের এই শিক্ষক নেতা।
এমএইচএম/বিএ