এটা খুন, স্বীকার করতে হবে : ভিসিকে শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৬:৩৮ পিএম, ০৮ অক্টোবর ২০১৯

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে এসে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভিসি বলেছেন, ‘আমি তোমাদের অভিভাবক, তোমরা আমার সন্তান। আবরারের সাথে যে ঘটনাটি ঘটেছে সেটা অনাকাঙ্ক্ষিত।’

এ কথা শোনার পর শিক্ষার্থীরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। তারা ভিসিকে বলেন, ‘এটা একটা খুন, আপনাকে স্বীকার করতে হবে।’

বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে উপাচার্য (ভিসি) অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম ভিসি ভবনের সামনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে আসেন। পরে তাকে প্রায় ৪০ মিনিট অবরুদ্ধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা।

এ সময় শিক্ষার্থীদের শান্ত হয়ে কথা শুনতে বলেন ভিসি সাইফুল ইসলাম। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা শান্ত হলে ভিসি বলেন, ‘আমি শিক্ষামন্ত্রী ও উপমন্ত্রীর সাথে কথা বলেছি। তারা দেশের বাইরে আছেন। সেখান থেকে তারা যেভাবে নির্দেশনা দিচ্ছেন আমি তা পালন করছি। আমি তোমাদের দাবিগুলো দেখেছি। এসব নিয়ে তোমাদের শিক্ষকদের সাথে কথা হয়েছে। আমি সব দাবি মেনে নিয়েছি।’

এ সময় কয়েকজন শিক্ষার্থী উত্তেজিত হয়ে ভিসিকে বলেন, ‘আবরার খুন হওয়ার পর আপনি কই ছিলেন? গতকাল কেন এখানে আসেননি?’

ভিসি বলেন, ‘আমি এখানেই ছিলাম। আমি গত রাত দেড়টা পর্যন্ত কাজ করেছি।’

vc-2

এই বলে ভিসি চলে যেতে চাইলে শিক্ষার্থীরা ‘ভুয়া ভুয়া’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর শিক্ষার্থীরা ভিসি ভবনের নিচে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। ভিসির সাথে বুয়েটের বিভিন্ন বিভাগের ডিন ও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।

অবরুদ্ধ অবস্থায় ভিসিকে নানা প্রশ্ন করতে থাকেন শিক্ষার্থীরা। তখন ভিসি বলেন, ‘আমি তোমাদের কাছে এভাবে জবাবদিহি করব না। তোমরা কয়েকজন আসো, আমি আলোচনা করব।’

এটা বলার পর ‘শেম শেম’, ‘মানি না, মানি না’ বলে বিক্ষোভ করতে থাকেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। পরে নানাভাবে বুঝিয়ে উপস্থিত শিক্ষক ও ডিনদের নিয়ে চলে যান ভিসি সাইফুল ইসলাম।

রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ফাহাদকে শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্র জানায়, বুয়েটের শেরেবাংলা হলের শিক্ষার্থী, সিসিটিভি ফুটেজ ও আটকদের জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে হত্যাকাণ্ডে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে।

সূত্র জানায়, ফাহাদকে জেরা ও পেটানোর সময় হলের ওই কক্ষে অমিত সাহা, মুজতাবা রাফিদ, ইফতি মোশাররফ ওরফে সকালসহ তৃতীয় বর্ষের আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী ছিলেন। ওই কক্ষে এসে দ্বিতীয় দফায় ফাহাদকে পেটান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী অনিক সরকার, ক্রীড়া সম্পাদক ও নেভাল আর্কিটেকচার অ্যান্ড মেরিন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একই বর্ষের মেফতাহুল ইসলাম জিয়নসহ কয়েকজন। তারা সবাই মেহেদী হাসান রাসেলের অনুসারী।

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ্। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এমএইচএম/এমএসএইচ/জেআইএম

টাইমলাইন  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।