এমন করলে ৪২ ভিসির কাউকে রাখা যাবে না : ভিসি নাসির
গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. খন্দকার নাসির উদ্দিনের পদত্যাগ দাবিতে টানা ষষ্ঠ দিনের মতো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
পাশাপাশি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে চলছে বিক্ষোভ কর্মসূচিও। মঙ্গলবার সকাল থেকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করছেন।
এরই মধ্যে আন্দোলনের নামে শিক্ষার্থীরা অশালীন কাজে জড়িয়ে পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন উপাচার্য ড. খন্দকার নাসির উদ্দিন। সেই সঙ্গে আন্দোলন হওয়ার পেছনে সাংবাদিকদেরও দায়ী করেছেন তিনি।
ভিসি খন্দকার নাসির উদ্দিন বলেন, সাংবাদিকরা বলে দিচ্ছেন, এভাবে দাঁড়াও, ওভাবে নাচো। আপনারা সংবাদ কভার বন্ধ রাখেন, দুই ঘণ্টায় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ক্যাম্পাস থেকে বের করতে দেবেন না, অথচ দেখেন তারা রাস্তায় রাস্তায় অশালীন কাজ করে বেড়াচ্ছে। সারারাত ক্যাম্পাসে থাকছে। তাদের গেস্ট, অছাত্ররাও এসে রাত কাটাচ্ছে। হোয়াট ইজ দিস?
নাসির উদ্দিন বলেন, ভিসি অপসারণের জন্য আপনারা দাবি দিতে পারেন, মানববন্ধন করতে পারেন। কিন্তু আড়াই কোটি টাকার ভুল তথ্য দিয়ে ভিসি তাড়াতে হবে। এটা তো ঠিক নয়। আমি একজন ভাইস চ্যান্সেলর চলে গেলে সমস্যা নেই, চলে যাব। এমন করলে তো ৪২ ভাইস চ্যান্সেলরের একজনকেও রাখা যাবে না। তিন মাস পর পর নতুন ভিসি নিয়োগ দিতে হবে।
সাংবাদিকদের উদ্দেশ করে ভিসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘আমি সাংবাদিক ভাইদের বললাম, আপনারা আমার সঙ্গে বসেন। ৫ মিনিটে সমাধান হয়ে যাবে। আপনারা এটা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করবেন না। আপনারা আমাদের কথাগুলো লিখছেন না। আপনারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ডিরেকশন দিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য লিখে দিচ্ছেন। বলে দিচ্ছেন, এভাবে দাঁড়াও, এভাবে নাচো। এটা তো ঠিক নয়।’
ভিসি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের নিয়ন্ত্রণ নেই। ছেলে-মেয়েরা নিয়েছে সব নিয়ন্ত্রণ। আমাদের দুজন কর্মকর্তা অফিসে যাচ্ছিল, তাদের ‘রাজাকার’ ‘রাজাকার’ বলে গালিগালাজ করেছে শিক্ষার্থীরা। অথচ তারা বঙ্গবন্ধু কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি ছিল। আরেক অফিসার ফাইল আনতে গেলে আটক করে তার সঙ্গেও দুর্ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা।
এর আগে গতকাল সোমবার রাত ৯টার দিকে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে ক্যাম্পাসে মশাল মিছিল করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি প্রশাসনিক ভবনের সামনে থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন সমর্থন করে পদত্যাগ করা সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবিরকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় তিনি থানায় জিডি করেছেন। তবে জিডিতে কারও নাম উল্লেখ না করলেও, ভিসিপন্থীরা তাকে হুমকি দিয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন সহকারী প্রক্টর।
প্রসঙ্গত, গত ১১ সেপ্টেম্বর আইন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী ও ক্যাম্পাস সাংবাদিক ফাতেমা-তুজ-জিনিয়াকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পরে জিনিয়ার বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়াসহ আরও কয়েকটি দাবি কর্তৃপক্ষ মেনে নিলেও গত বৃহস্পতিবার উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে অন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে গত শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করে সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশ উপেক্ষা করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যান। এ অবস্থায় বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন গোবরা এলাকায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে বহিরাগতরা। এতে ২০ শিক্ষার্থী আহত হন। শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ওইদিন দুপুরে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবির।
এএম/পিআর