চ্যালেঞ্জ করে বলছি, ৬ পার্সেন্ট চাঁদা চেয়েছে শোভন-রাব্বানী
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ‘শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে’ কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর এমন অভিযোগকে ‘মিথ্যা গল্প’ অ্যাখ্যা দিয়েছেন জাবি উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।
শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ভিসি ফারজানা ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী যে চিঠি দিয়েছেন, সেই গল্পটা তাদের সাজানো অপপ্রচার। আমি জোরের সঙ্গে বলছি, গল্পটা মিথ্যা। তারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা গল্প সাজিয়েছেন। আমি তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছি বিষয়টি প্রমাণ করতে। শুধু তাদের নয়, আমি অনুসন্ধান করতে বলছি সাংবাদিকদের। বিষয়টি তদন্ত করতে বলব চ্যান্সেলর এবং ইউজিসিকে, যে তদন্ত করে দেখুন আসল সত্যটা কী।
উপাচার্য বলেন, গত ৮ আগস্ট কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী আমার বাসভবনে আলোচনার জন্য আসেন। আলোচনার একপর্যায়ে উন্নয়ন প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে চাঁদা দাবি করেন তারা। আমি তাদের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। এতেই শোভন-রাব্বানী হতাশ হন। সে কারণেই এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছেন তারা।
ভিসি ফারজানা বলেন, শোভন-রাব্বানী এখন বলছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা আমার কাছে ৪ থেকে ৬ শতাংশের দাবি নিয়ে এসেছিলেন, সেটি তো একবারও বলেননি। তারা বলেছিলেন, অন্য জায়গায় কাজের পার্সেন্টেজ অনেক বেশি, আমাদের এখানে শোনা যাচ্ছে কম। এত কমে তো পারা যাবে না। আমি বলেছি, আমি কমানো-বাড়ানোর কেউ না। আমার সঙ্গে টাকা নিয়ে কোনো কথা বলবে না। তোমরা সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে আসছ, সাক্ষাৎ হয়ে গেলে চলে যেতে পার তোমরা।
ক্ষুব্ধ হয়ে ভিসি বলেন, আমি যখন হাসপাতালে ছিলাম তখনও শোভন-রাব্বানী আমাকে ছাড় দেননি। রাত ১১টার পর হাসপাতালে গিয়ে আমার সঙ্গে শিডিউল নিয়ে কথা বলেছেন। আমি যখন শুনলাম আমার কক্ষের বাইরে এবং হাসপাতালের নিচে প্রায় ৩০০ ছেলে এসেছে তখন আমি অনিরাপদ বোধ করেছিলাম। নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা লোকজন আরও দুশ্চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলেন। কারণ আমার ঠিক উল্টো পাশে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও ভর্তি ছিলেন।
উপাচার্য বলেন, ছাত্রলীগ আমাকে ব্যবহার করতে চেয়েছে। তারা দেখেছে জাহাঙ্গীরনগরে আন্দোলন চলছে, এ সুযোগে তাদের অপকর্ম ঢাকতে। এজন্য আমাকে জড়িয়ে টাকা দেয়ার বিষয়টা ট্যাগ করে দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ফারজানা ইসলাম বলেন, কিছু লোক আছে যারা আমাকে দুর্নীতিগ্রস্ত বানানোর জন্য চেষ্টা করছে। আমি এসবকে ভয় পাই না। আমার মনে হয় এসব নিয়ে ভালো অনুসন্ধান হওয়া দরকার।
গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লেখা এক চিঠিতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্নীতির বিষয়টি উল্লেখ করেন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। চিঠিতে রাব্বানী উল্লেখ করেন, ‘জাবি প্রশাসন (বিশ্ববিদ্যালয়) শাখা ছাত্রলীগকে ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দিয়েছে।’
রাব্বানীর এমন বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ক্যাম্পাসে নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি হয়। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং শাখা ছাত্রলীগ রাব্বানীর এ বক্তব্যকে মিথ্যা আখ্যায়িত করে পৃথক বিবৃতি দেয়।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অপরিকল্পনার অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। উপাচার্য প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে দুই কোটি টাকা জাবি শাখা ছাত্রলীগকে দিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমন অভিযোগ ওঠে।
এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন গড়ে তোলেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একাংশ। গত বৃহস্পতিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠকে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে তিন দফার দুটি মেনে নেয় প্রশাসন। দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তের বিষয়ে আইনি যাচাই-বাছাই শেষে বুধবার আবার বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে জানায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এএম/জেআইএম