জবি ছাত্রলীগের কল্যাণ তহবিলের অর্থ কোথায়?
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সুস্বাস্থ্য ও কল্যাণের কথা ভেবে গঠন করা হয় ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কল্যাণ তহবিল’।
গত বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি তরিকুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক জয়নুল আবেদিন রাসেলের প্রস্তাবনায় এ কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রণী ব্যাংক শাখায় কল্যাণ তহবিলের হিসাব নম্বর ০২০০০১১৭৭৮৫২৬। তখন বিভিন্ন গণমাধ্যমে এই সংবাদ ঢালাওভাবে প্রকাশ করা হয়।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কোনো নেতাকর্মী সাধারণভাবে গুরুতর দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলে কিংবা রাজনৈতিকভাবে আহত হলে তাদের চিকিৎসার ব্যয় বহন করার জন্য এ তহবিল গঠন করা হলো। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক কারণে যদি কোনো নেতাকর্মী নিহত হন তাহলে তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে এই তহবিলের অর্থের মাধ্যমে।
প্রস্তাবনায় আরও উল্লেখ করা হয়, নেতাকর্মী সাধারণভাবে গুরুতর দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হলে কিংবা রাজনৈতিক কারণে আহত হলে সেক্ষেত্রে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে দায়িত্বরত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের স্বাক্ষরে অর্থ উত্তোলন করা যাবে। তবে নিহতের ব্যাপারে অবশ্যই রাজনৈতিক কারণে নিহত হতে হবে। সে ক্ষেত্রে নিহতের সার্টিফিকেট দেখাতে হবে। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কল্যাণ তহবিলে অর্থ যোগানের জন্য শুধু আওয়ামী রাজনৈতিক মতাদর্শীদের অর্থই গ্রহণ করা হবে। অন্য কারো অর্থ গ্রহণ করা হবে না। তবে সেই তহবিলের অর্থ আ-দৌ কোনো নেতাকর্মীর পেছনে ব্যয় হয়েছে কি না কেউ জানে না। ছাত্রলীগের সম্মেলনে এসে এক কর্মী মারা যাওয়ার পর কল্যাণ তহবিলের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে । তবে তহবিল গঠনের কথা ছাত্রলীগের বাকি নেতারা জানলেও তহবিলের টাকা কোথায় ব্যবহার করা হয় বা কার অধীনে আছে তা তারা বলতে পারেননি।
এ বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের তরিকুল-রাসেল কমিটির সাবেক কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদককের। তারা বলেন, ‘আমরা ছাত্রলীগ কল্যাণ তহবিল গঠনের বিষয়ে জেনেছি। এ তহবিলের জন্য অর্থও সংগ্রহ করা হয়েছিল। তবে তহবিলে কত টাকা জমা হয়েছে, ওই টাকা কার কাছে আছে তা আমাদের জানা নেই।’
সাবেক ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি জামাল উদ্দিন বলেন, ‘আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য অ্যাডভোকেট ড. কাজী নজিবুল্লাহ হীরু ভাই জবি ছাত্রলীগের সম্মেলনে নিহত ওয়াসির পরিবারকে সাহায্যের জন্য সর্বনিম্ন দশ লাখ টাকা যোগাড় করতে বলেছেন। তিনিও সাহায্য করতে চেয়েছেন। তবে এই সময় ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় তহবিলের দায়িত্ব নেয়ার মতো নেতা নেই।’
এ বিষয়ে সাবেক সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল জাগো নিউজকে বলেন, ‘ছাত্রলীগ কল্যাণ তহবিল আমাদের কাছে সুরক্ষিত আছে। এখন ছাত্রলীগের কমিটি না থাকায় কেউ এই টাকা উত্তোলন করতে পারবে না।’
তিনি আরও বলেন, আমরা ১০ হাজার টাকা দিয়ে তহবিল গঠন করি। এরপরে শোভন ভাই, রাব্বানী ভাই ও নজরুল ইসলাম বাবু ভাই কিছু অর্থ দিয়েছিলেন। সবমিলে ৪০-৪৫ হাজার টাকা আছে। ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হলে তহবিলের দায়িত্ব হস্তান্তর করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে ছাত্রলীগ কর্মীর মৃ্ত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। যেকোনো প্রয়োজনে ছাত্রলীগ পরিবারের পক্ষ থেকে ওয়াসির মা ও তার ভাইয়ের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, শনিবার (২০ জুলাই) ছাত্রলীগের সম্মেলন চলাকালে অসুস্থ হয়ে সুলতান মো. ওয়াসি নামে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। তিনি ইংরেজি বিভাগে ১১তম ব্যাচের ২০১৫-২০১৬ সেশনের শিক্ষার্থী। এই কর্মীর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে ছাত্রলীগের নেতারা।
ইমরান খান/এসআর/পিআর