ইবির বেতন-ভাতায় ব্যয় ৭৯ শতাংশ, গবেষণায় ০.৫৮ শতাংশ
২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার বাজেট ঘোষণা করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। গত ২৯ জুন ইবির ২৪৫ তম সিন্ডিকেট সভায় নতুন অর্থ বছরের বাজেট অনুমোদন হয়। সেই বাজেট বিশ্লষণ করে দেখা যায়, মোট বরাদ্দের প্রায় চার-পঞ্চমাংশ ব্যয় হবে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা এবং অবসরকালীন ভাতা বাবদ। অথচ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার মূল উদ্দেশ্য নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন অর্থাৎ গবেষণা খাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে খুবই সামান্য পরিমাণ অর্থ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান হিসাব রক্ষক সিদ্দিক উল্যা জানান, নতুন অর্থ বছরের জন্য ২৪৭ কোটি ৫৪ লাখ টাকার চাহিদা পাঠানো হয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে (ইউজিসি)। সেখান থেকে ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা অনুমোদন দেয় তারা।
তিনি জানান, এর মধ্যে ৯৮ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাবদ। আর তাদের পেনশন ও অবসরকালীন ভাতার জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে আরও ৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। অর্থাৎ ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকার মোট বাজেটের মধ্যে শিক্ষকসহ অন্যান্যদের বেতন-ভাতা-পেনশন বাবদ খরচ হবে প্রায় ১০৮ কোটি টাকা। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট বাজেটের ৭৮.৭৩ শতাংশ।
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল উদ্দেশ্য হলো নতুন নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন তথা গবেষণা। সে ক্ষেত্রে ইবির অবস্থা খুবই করুণ। আগামী অর্থবছরের জন্য এখাতে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ৮০ লাখ টাকা। যা মোট বাজেটের ০.৫৮ শতাংশ। যদিও এখাতে বরাদ্দ চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
গবেষণায় বরাদ্দ কমানো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত পুষ্ঠি ও খাদ্য প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক শেখ আব্দুর রউফ বলেন, ‘রিচার্স ফান্ড একেবারে নেই বললেই চলে। নেই আধুনিক ল্যাব। যাদের ভালো গবেষণার আগ্রহ আছে তারাও পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছে না।’
এদিকে ইউজিসি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়কে ১৩৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দিলেও এর মধ্যে ১৩ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ আয় করতে বলেছে কর্তৃপক্ষকে। এই ১৩ কোটি টাকার সিংহভাগ আসবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। অথচ সেই শিক্ষার্থীদের মেধাবৃত্তি বাবদ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ১০ লাখ টাকা। প্রতি বর্ষে ভালো ফলাফল অর্জনকারী প্রথম ৭ জনকে দেয়া হয় এই মেধাবৃত্তি। যার পরিমাণ খুবই নগণ্য, মাসে মাত্র ১২০টাকা। যা চলে আসছে গত দুই যুগ ধরে।
এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে লোক প্রশাসন বিভাগের এক শিক্ষার্থী বলেন, দুই যুগ আগে বছরে ১ হাজার ৪৪০ টাকা হয়তো ঠিক ছিল। কিন্তু এখন তিনগুণ ভর্তি ফি বাড়ানোর পরও তা একই থাকা মোটেও কাম্য নয়। প্রশাসনের উচিত সময় ও চাহিদার সঙ্গে মিল রেখে একজন ভালো ফলধারী শিক্ষার্থীর মূল্যায়ন করা।
এদিকে ক্রীড়া ক্ষেত্রেও ইবির সফলতা ঈর্ষণীয়। কিন্তু এখাতেও বরাদ্দ দেয়া হয়েছে মাত্র ২১ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৭ লাখ টাকা দিয়ে কেনা হবে ক্রীড়া সরঞ্জামাদি। এনিয়ে ক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক রাসেল।
তিনি বলেন, এই মফস্বলে সকল সুবিধা বঞ্চিত খেলোয়াড়দের মূল্যায়ন কখনোই হয় না। আমরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম বৃদ্ধি করে চলছি। অথচ বাজেটে আমরা অবহেলিত।
এদিকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট ঘাটতি প্রতি বছর বেড়েই চলছে। গত ২৩ অর্থ বছরে ঘাটতি বাজেট দাঁড়িয়েছে ৭০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা। যার মধ্যে ২৬ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে ইউজিসি অনুমোদিত ১২৩ কর্মকর্তার বেতন-ভাতা বাবদ। এছাড়াও ৫ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের জন্য। অন্যান্য খাতে ৩৯ কোটি টাকা।
সম্প্রতি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্গানোগ্রামে ওই ১২৩ কর্মকর্তাবে বৈধতা দেয়ায় চলতি অর্থবছর থেকে বাজেট ঘাটতি কিছুটা স্থিতি থাকবে বলে মনে করেন প্রধান হিসাব রক্ষক সিদ্দীক উল্লাহ।
বাজেটের বিষয়ে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক সেলিম তোহা বলেন, ‘আমাদের চাহিদার তুলনায় কম বাজেট বরাদ্দ পেয়েছি। যার প্রভাব পড়েছে প্রতিটি খাতে।’
উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, ‘গবেষণা খাতে বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সকল উপাচার্যেরই দাবি এ খাতে বরাদ্দ বৃদ্দির জন্য, আমারও দাবি। আর মেধাবৃত্তির বিষয়টি বিবেচনা করা হবে। খেলাধুলায় আমাদের চাহিদার অর্ধেকেরও কম বরাদ্দ পেয়েছি। তবুও সীমিত বরাদ্দে আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের সফলতা ঈর্ষণীয়।
ঘাটতি বাজেটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১২৩ জন কর্মকর্তা ইউজিসি থেকে বৈধতা পাওয়ায় বাজেট ঘাটতির লাগাম কিছুটা টানা সম্ভব হবে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় স্কুলের জন্য থোক বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা কিছুটা স্বস্থির বিষয়।
ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ/এমএম জেড/এমএস