ইবিতে ফিরছে সন্ধ্যাকালীন কোর্স, ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী-কর্মকর্তারা

শর্ত সাপেক্ষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) আবারও ফিরছে বন্ধ হয়ে যাওয়া সন্ধ্যাকালীন কোর্স। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১৬তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একাডেমিক কাউন্সিলের একাধিক সদস্য বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

সন্ধ্যাকালীন কোর্স চালুর বিষয়টি আগামী ২৯ জুন ২৪৫তম সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্ত হবে বলে জানা গেছে। পুনরায় সন্ধ্যাকালীন কোর্স চালুর বিষয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী সমিতির নেতারা।

কর্মকর্তা সমিতির সাধারণ সম্পাদক মীর মোর্শেদুর রহমান ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, আমরা ইভিনিং কোর্স চালুর বিপক্ষে। এতে রেগুলার স্টুডেন্টদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। বিশ্বিদ্যালয়ের পরিবেশ নষ্ট হয়। তারাই (সন্ধ্যাকালীন কোর্স শিক্ষার্থীরা) নকলের সংস্কৃতি চালু করেছে এ ক্যাম্পাসে। এছাড়া শিক্ষকদের দৃষ্টি থাকে ইভিনিংয়ে। সেখানে তাদের লাভ আছে। এক কথায় ইভিনিং এ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধ্বংস করে দিচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র মৈত্রীর সভাপতি মোরশেদ হাবিব বলেন, ইভিনিং কোর্স বন্ধ হওয়ায় আমরা ভিসি স্যারকে অফিসিয়ালি অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। সেটি আবার চালু হলে শিক্ষার্থীদের ব্যাপক ক্ষতি হবে। আমরা প্রয়োজনে আন্দোলন করে এই কোর্স বন্ধ করব। তবু সাধারণ শিক্ষার্থীদের ক্ষতি হতে দেব না।

জানা গেছে, গত বছরের ২৯ জুলাই ১১৩তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে সকল বিভাগের সন্ধ্যাকালীন কোর্স বন্ধ হয়। ওই সভায় নতুন করে শিক্ষার্থী ভর্তির বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। পরে ১ অক্টোবর ২৪২তম সিন্ডিকেট সভায় চূড়ান্তভাবে সন্ধ্যাকালীন কোর্স বাতিল করা হয়। তখন প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তটি ব্যাপক প্রশংসিত হয়। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও মহামান্য রাষ্ট্রপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সমাবর্তনে এ বিষয়ের প্রশংসা করে সব বিশ্ববিদ্যালয়কে তা অনুকরণের পরামর্শ দেন।

কিন্তু গত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে আবারও ‘ট্রাম্প কার্ড’ হিসেবে ইশতাহারে সন্ধ্যাকালীন কোর্সের বিষয়টি উঠে আসে। নির্বাচনে জয়লাভের পর শিক্ষক সমিতিসহ অন্যান্যদের চাপে প্রশাসন বিষয়টি পুনর্বিবেচনায় নিয়ে ১১৫তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় একটি কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির সুপারিশে প্রায় ছয় মাস পর ইভিনিং কোর্সের মান উন্নত ও কিছু শর্ত সাপেক্ষে আবারও তা চালুর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।

এ বিষয়ে সন্ধ্যাকালীন কোর্স বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও যবিপ্রবির সাবেক উপাচার্য এবং ইবির ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার জানান, ‘যাচাই-বাছাই ও বিভিন্ন নিরীক্ষার মাধ্যমে কিছু শর্ত সাপেক্ষে কোর্সটি চালুর সুপারিশ করেছে কমিটি। এখন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত প্রশাসনের হাতে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী বলেন, কোর্সটি বন্ধ করে পুনরায় চালুর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘গত ১১৫তম একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সকল শিক্ষক পুনরায় কোর্সটি চালুর দাবি জানায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন একটি যাচাই বাছাই কমিটি করা হয়। কমটির সুপারিশ ও সকল শিক্ষকদের চাহিদার ভিত্তিতে কোর্সটি চালু হতে যাচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘এ কোসর্টি মানসম্মত করতে কিছু কঠিন শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়া একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় সর্বসম্মতিক্রমে কোর্সটি পুনরায় চালুর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আগামী সিন্ডিকেটে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে। এছাড়াও ইউজিসি সম্প্রতি অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে ইভিনিং কোর্সের আয়ের ৪০ শতাংশ বিশ্ববিদ্যালয় কোষাগারে জমা দেয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। এ কোর্স চালু হলে ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ আয় বৃদ্ধি পাবে।’

শর্তের বিষয়ে উপাচার্য বলেন, ‘যে বিভাগে এক বছর সেশনজট থাকবে তারা কোর্সটি চালু করতে পারবে না। এছাড়া কোর্সটির মান ঠিক রাখতে প্রত্যেক অনুষদে মনিটরিং সেল থাকবে। সপ্তাহে শুক্রবার ৮ ঘণ্টা ও শনিবার ৩ ঘণ্টা ক্লাস করাতে হবে। রেগুলার ছাত্রদের জন্য নকলের যে শাস্তির বিধান তাদের জন্যও একই শাস্তি চালু হবে।’

ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ/এমবিআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।