জাবির ভিসিবিরোধী শিক্ষক জোট আন্দোলনে নামছে নতুন নেতৃত্বে

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিবিরোধী জোট ভেঙে যাওয়ার পর আবারও নতুন নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছে ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’।

রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনের নানা অনিয়মের চিত্র তুলে ধরে নতুন নেতৃত্বে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

সংবাদ সম্মেলনে জোটটির নতুন আহ্বায়ক হিসেবে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক আব্দুল জব্বার হাওলাদারকে পরিচয় করে দেয়া হয়। তিনি সাবেক ভিসি অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠনের সভাপতি। আর সদস্য সচিব বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনুকেই রাখা হয়েছে।

জোটটির বর্তমান পরিস্থিতি ও কার্যক্রম সম্পর্কে জানানোর লক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সদস্য সচিব বলেন, ‘ভিসির অ্যাক্টবিরোধী ও স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ড, শিক্ষা ও গবেষণাকার্যক্রমে স্থবিরতা, সীমাহীন দুর্নীতি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অধিকার হরণ, মর্যাদাহানি ও লাঞ্ছনার প্রতিবাদে আমরা আবারও আন্দোলনে নামব।’

এ ছাড়া অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও তার অনুসারীদের ভিসিপন্থী জোটে যোগ দেয়াকে নীতিবহির্ভূত আখ্যায়িত করে শিক্ষক সমিতির কার্যকরী পরিষদ থেকে তাদের পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা।

অন্যদিকে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি যেকোনো সময়ের চেয়ে নাজুক। শিক্ষক নিয়োগ ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবিধান লঙ্ঘন করা হচ্ছে। ভয়ানকভাবে অবনমন ঘটেছে প্রশাসনিক কর্মকাণ্ডে, শিক্ষার পরিবেশ ভূলুণ্ঠিত হচ্ছে আগের যেকোনো অবস্থার চেয়ে, ন্যাক্কারজনকভাবে সব পর্যায়ে ভিসি তার পরিবার ও গোষ্ঠীতন্ত্র চালু করেছেন। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় উন্নয়নের লক্ষ্যে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় সেটির টেন্ডার প্রক্রিয়া ছিল অস্বচ্ছ এবং এ ক্ষেত্রে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল লঙ্ঘিত হয়েছে।’

‘ভিসি ও তার প্রশাসন কর্তৃক এমন কর্মকাণ্ড, একটি উচ্চতর মুক্তচিন্তার বিদ্যাপীঠে কোনো অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাই প্রশাসনের এই স্বেচ্ছাচারিতা, সীমাহীন দুর্নীতি ও দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমরা শিগগিরই প্রতিরোধ গড়ে তুলবো।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষক সমিতির সম্পাদক অধ্যাপক অধ্যাপক সোহেল রানা, সদস্য অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস। ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজের’ সম্পাদক অধ্যাপক খবির উদ্দিন। বিএনপিপন্থী শিক্ষক অধ্যাপক নূরুল ইসলাম প্রমুখ।

প্রসঙ্গত, গত ২২ জানুয়ারি আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশ, বিএনপি ও বামপন্থী শিক্ষকদের নিয়ে গঠিত হয় ভিসিবিরোধী শিক্ষকদের জোট ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’। আওয়ামীপন্থী অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদারকে আহ্বায়ক ও বিএনপিপন্থী অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনুকে সদস্য সচিব করে জোটটি প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জোটটি প্রশাসনের বিভিন্ন অনিয়মের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার ভূমিকা পালন করেন, যার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের মাঝে একটি অবস্থান তৈরি করে জোটটি। ফলে গত ৩১ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে এই জোট ভিসিপন্থী জোটের শিক্ষকদের হারিয়ে সভাপতি-সম্পাদকসহ ১৫টি পদের মধ্যে ১০টি পদে জয়লাভ করে।

জোটটির আহ্বায়ক অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার সভাপতি পদে জয়লাভ করার পর হঠাৎ তিনি ও তার অনুসারীরা পক্ষ ত্যাগ করে ভিসির পক্ষে যোগ দেন। এর ফলে ভিসিবিরোধী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন ও ‘সম্মিলিত শিক্ষক সমাজ’ নামের জোটের কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে আসে। তবে রোববার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আবারও তারা আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিলেন।

হাফিজুর রহমান/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।