ভর্তি পরীক্ষার কোটি টাকা ভাগ করে নিলেন শিক্ষকরা

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বেরোবি
প্রকাশিত: ০৫:৩১ পিএম, ১৬ মে ২০১৯

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি প্রক্রিয়ার খরচ বাদে অতিরিক্ত সোয়া কোটি টাকা শিক্ষক-কর্মকর্তা এবং কর্মচারীদের মধ্যে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভাগের টাকার মধ্যে উপাচার্য একাই নিজের পকেটে তুলেছেন তিন লাখ টাকা।

গত সোমবার প্রায় সোয়া কোটি টাকা নিজেদের মধ্যে সম্মানী ভাতা হিসেবে ভাগ-বাটোয়ারা করে নেন শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যদিও তারা ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে দায়িত্ব ভাতা পেয়ে থাকেন। তবে ভাগের টাকা কম পাওয়া নিয়ে নিজেদের মধ্যেই চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।

ভর্তি কমিটি সূত্র জানায়, ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে ছয়টি অনুষদে ৭০ হাজার ৬৬৭ জন্য শিক্ষার্থী আবেদন করায় ৩ কোটি ৪২ লাখ ৭০৫ টাকা আয় করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর মধ্যে ৮ শতাংশ হারে সার্ভিস চার্জ কেটে নেয় মুঠোফোন কোম্পানি টেলিটক, ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন পরীক্ষার খরচ বাবদ ব্যয় হয় ৭৪ লাখ ৮৪ হাজার টাকা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ফান্ডে ৪০ শতাংশ হারে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা জমা দেয় কেন্দ্রীয় ভর্তি কমিটি। এরপর অবশিষ্ট রয়ে যায় ১ কোটি ১৫ লাখ ২৭ হাজার টাকা। আর এ অবশিষ্ট টাকা নিজেদের মধ্যে সম্মানী ভাতা হিসেবে ইচ্ছা মতো গ্রহণ করেছেন শিক্ষকরা।

জানা গেছে, ভাগ-বাটোয়ারার নেতৃত্ব দিয়ে ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ সম্মানী বাবদ একাই নিয়েছেন তিন লাখ টাকা। এরপর ১ লাখ ৩২ হাজার টাকা পেয়েছেন সামাজিক অনুষদের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করা আরেক শিক্ষক। ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হেনা মুস্তাফা কামাল পেয়েছেন ১০ হাজার টাকা।

তবে এ ভাগ-বাটোয়ারা নিয়েও অসন্তোষ শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক কর্মকর্তা অভিযোগ করে বলেন, এ অর্থ বণ্টনে কর্মকর্তারদের চরমভাবে বঞ্চিত করা হয়েছে। তাদের ঠকানো হয়েছে। প্রায় একই অভিযোগ কর্মচারীদেরও।

বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের শিক্ষার্থীরা জানান, ভর্তি পরীক্ষার নামে শিক্ষকেরা শিক্ষার্থীদের পকেট কাটছে। তাদের দাবি, ইউনিট ভিত্তিক খরচের নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ‘এ’ ইউনিটে ৪৪০ টাকা, ‘বি’ ইউনিটে ৬০৫ টাকা, ‘সি’ ইউনিটে ৪৯৫ টাকা, ‘ডি’ ইউনিটে ৪৯৫ টাকা, ‘ই’ ইউনিটে ৩৮৫ টাকা এবং ‘এফ’ ইউনিটেও ৩৮৫ টাকা আবেদন ফি বাবদ আদায় করা হয়। যা অত্যন্ত অন্যায়ভাবে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের থেকে আদায় করা হয়।

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আবু মোন্নাফ আল তুষার কিবরিয়া জাগো নিউজকে বলেন, ভর্তি ফি বাবদ অতিরিক্ত অর্থ আদায় শিক্ষার্থীদের গলাকাটার শামিল। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষার আওতায় আসা উচিত।

তিনি আরও বলেন, ভর্তি পরীক্ষায় অতিরিক্ত ফি অনেক শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভাগ-বাটোয়ারা বন্ধ হলে অতিরিক্ত ফি আদায়ও বন্ধ হয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রদানকারী ও শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান প্রধান জাগো নিউজকে বলেন, শিক্ষকেরা তিন মাস ধরে খাটেন। তাই সম্মানী ভাতা হিসেবে এ ভাতা গ্রহণ করেছেন।

তবে এভাবে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অর্থ আদায় অমানবিক মন্তব্য করে অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক উমর ফারুক জাগো নিউজকে বলেন, ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে ব্যবসা করা ঠিক নয়। যদি ফি নিতেই হয়, তবে যা কেবল ভর্তি পরীক্ষা বাবদ খরচ হয় সেই টাকাই নেয়া উচিত।

তিনি আরও বলেন, সরকারের উচিত রাষ্ট্রের টাকায় শিক্ষার্থীদের ভর্তি পরীক্ষার আয়োজন করা। ভর্তি পরীক্ষা ঘিরে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যে ভর্তি বাণিজ্য হয় তা বন্ধ করা। কেননা ভর্তি পরীক্ষার সময় শুধু শিক্ষার্থী নয়, তার পরিবারকেও নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডক্টর নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

সজীব হোসাইন/এএম/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।