জবির অনুপযুক্ত খেলার মাঠে বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) সমস্যার অন্ত নেই। প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় শিক্ষার্থীদের। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১৯ হাজার শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জন্য একমাত্র জায়গা ধুপখোলা মাঠটি ক্যাম্পাস থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত৷ সেটিও আবার খেলার উপযোগী নয়, রয়েছে নানামুখী সমস্যা।
সাধারণ খেলার মাঠ সমতল ও সবুজ হয়। কিন্তু জবির মাঠ তার উল্টো, এখানে নেই কোনো সবুজ ঘাস। মাঠের মধ্যে রয়েছে নির্মাণ কাজের উচ্ছিষ্ট, ইট, সুড়কি, পাথর, কংক্রিটের আধিপত্য। এখানে খেলতে এসে প্রায়ই আহত হন শিক্ষার্থীরা। সবচেয়ে বড় কথা মাঠটি বেশিরভাগ সময়ই বহিরাগতদের দখলে থাকে। এ কারণে খেলার সুযোগ পায় না জবি শিক্ষার্থীরা। শুধুমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় বা বিভিন্ন বিভাগ কর্তৃক আয়োজিত টুর্নামেন্টগুলোতে শিক্ষার্থীরা ভালোভাবে খেলতে পারেন।
সরেজমিনে দেখা যায় মাঠের বেশিরভাগ জায়গাজুড়েই বহিরাগতরা বিভিন্ন প্রকার খেলার সামগ্রী, ক্রিকেটব্যাট-বল, স্টাম্প, ফুটবল নিয়ে খেলায় মগ্ন আছেন। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় মাঠ দখলের প্রতিযোগিতা। দিনের শুরু থেকেই বহিরাগতরা খেলার জন্য মাঠ দখল করে। দিনের অধিকাংশ সময় তারা ফুটবল-ক্রিকেট খেলে। আবার শীতকালে রাতের বেলায় এই মাঠেই চলে ব্যাডমিন্টন খেলা। মাঠের একাংশ জুড়ে নেট টাঙিয়ে নিয়মিত ক্রিকেট প্রাক্টিস করতে দেখা যায়। এখানে খেলতে আসা বেশিরভাগই শিশু-কিশোর। জবি মাঠের পাশে আরও দুটি মাঠ থাকলে সেগুলোর চেয়ে প্রতি তাদের আগ্রহ দেখা যায় না।
বহিরাগতদের ভাষ্যমতো জবি মাঠের পূর্বদিকে ইস্ট অ্যান্ড ক্লাব মাঠে ক্লাবের সদস্যদেরই প্রাধান্য দেয়া হয়। তারা খুব কমই খেলার সুযোগ পান। তাছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এই মাঠে মেলা আয়োজন করা হয়। ফলে খেলার অনুপযোগী থাকে মাঠটি।
আর জবি মাঠের দক্ষিণের মাঠটিতে বিভিন্ন সময় ট্রাক, ভ্যান ও যানবাহনের স্ট্যান্ড থাকে। তাছাড়াও বিভিন্ন সময় ফুচকা-চটপটির মতো ভাসমান দোকান বসে। তাই এই মাঠও খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত না। যদিও বর্তমানে মাঠটি থেকে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক সব রকম দোকান ও স্ট্যান্ড উচ্ছেদ অভিযান চলছে।
মাঠে খেলতে আসা বহিরাগত এক ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আশেপাশে আর কোনো মাঠ না থাকায় আমরা এখানে খেলতে আসি৷ আর এই মাঠে খেলতে আসলে কোনো বাধা দেয়া হয় না।’ জবির মাঠের পাশে আরও দুটি মাঠ থাকার কথা বলা হলে তিনি বলেন, ‘দক্ষিণের মাঠটিতে বিভিন্ন সময় ট্রাক, পিকআপ ইত্যাদি রাখা হয়। আর পূব পাশের মাঠটিতে খেলতে গেলে মাঝে মাঝে ক্লাবের সদস্যদের বাধার মুখে পড়তে হয়। তাছাড়াও সেখানে প্রায়ই বিভিন্ন প্রকার মেলা এবং টুর্নামেন্ট চলে। ফলে আমরা খেলার বেশি সুযোগ পাই না। তাই বাধ্য হয়েই আমরা এই মাঠে খেলতে আসি৷’
মাঠে খেলতে আসা জবি অর্থনীতি বিভাগের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফরহাদ আকন্দ বলেন, আমাদের খেলার মাঠটির অনেক সমস্যা। ইট, পাথর আর কংক্রিটের আধিপত্যের কারণে এখানে খেলতে এসে প্রায়ই আহত হই। তাছাড়াও বেশিরভাগ সময় এই মাঠে বহিরাগতদের সংখ্যাই বেশি থাকে। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে খেলার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। বহিরাগতদের আনাগোনায় মাঠ ভরে যায়। সবাই যার যার মতো মাঠের স্থান দখল করে নেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই মাঠ ভরে যায়। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আসলে জায়গা সঙ্কটে ঠিকমতো খেলতে পারেন না। তাছাড়াও সকাল বেলায় অনেকেই এই মাঠে দৌঁড়াতে আসেন। বহিরাগতদের কারণেই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা খেলার সুযোগ খুব কম পায়৷
ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান বলেন, ছোট একটা মাঠে এতো লোক হয় যে খেলার জন্য ঠিকমতো জায়গা পাওয়া যায় না। বহিরাগতরা কাছাকাছি থাকার কারণে তারা সকাল সকাল এসে পুরো মাঠ নিজেদের দখলে নিয়ে নেয়। ফলে আমারা (জবি শিক্ষার্থী) মাঠে জায়গা না পেয়ে এলোমেলোভাবে খেলতে থাকি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এই একমাত্র মাঠটিতে নেই যথাযথ সংস্কারের উদ্যোগ। স্থান স্বল্পতার অজুহাতে যেসব কাজ করা সম্ভব তাও করছে না প্রশাসন। এছাড়া বিভিন্ন সময় ওয়াজ মাহফিল, মেলা এবং গরুর হাটের কারণে খেলার অনুপযুক্ত হয়ে পড়ছে মাঠটি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবির শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্রের পরিচালক গৌতম কুমার দাস বলেন, আমাদের মাঠটিতে এলাকার লোকজন অনেক আগে থেকেই খেলে, তাই তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সময় লাগবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনুমতি নিয়ে ব্যবহার করতে চাইলে আমরা তাদেরকে পুরোটাই দিচ্ছি। উঁচু দেয়াল করে সিকিউরিটি গার্ড দিয়ে নিরাপত্তার জন্য আমরা ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, মাঠ থেকে মাটি অপসারণ করে ভালো মাটি দিয়ে তার উপর ঘাসের ব্যবস্থা করব। কাজটি কতো দিনে সম্পন্ন হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন আশা করি পরবর্তী সেশনের মধ্যেই আমরা এই কাজ শেষ করতে পারব।
জবি ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. আলী নূর বলেন, আমাদের খেলার মাঠে অনেক কংক্রিট রয়েছে। এগুলো একসঙ্গে সব অপসারণ করা সম্ভব নয়। আমরা এসব কংক্রিট ধীরে ধীরে অপসারণ করতেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তনের আগেই আমরা মাঠটিকে কংক্রিট মুক্ত করব।
বহিরাগতদের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের মাঠটিতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা রক্ষী নেই। তাছাড়াও মাঠের গেটটিও ঠিক নেই। নিরাপত্তার ব্যবস্থা জোরদার না থাকায় বহিরাগতরা অবাধে মাঠে প্রবেশ করছে। আমরা খুব দ্রুতই মাঠের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করব।
ইমরান খান/এমএমজেড/এমএস