ব্রয়লার মুরগি বড় করতে অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প ঘাস উদ্ভাবন
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) পশুপুষ্টি বিভাগের গবেষক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আল-মামুন ‘প্লানটেইন’ নামক একপ্রকার ঘাসে অ্যান্টিবায়োটিক বা গ্রোথ প্রোমোটরের বিকল্প খুঁজে পেয়েছেন। যা গবাদিপশু ও পোলট্রি সরাসরি গ্রহণ করতে পারে। ব্রয়লার মুরগিতে ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্লানটেইন ঘাস ব্যবহারে নিরাপদ ও অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ মাংস উৎপাদনে সফল হয়েছেন এ গবেষক।
সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহজালাল এনিমেল নিউট্রেশন ফিল্ড ল্যাবরেটরিতে আয়োজিত প্যানেল টেস্ট ফর ফাংশনালি মিট অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. মো. জসিমউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আলী আকবর। এ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে প্লানটেইন ঘাস ব্যবহারের ফলে ব্রয়লার মুরগির মাংসের গুণাগুণের সঙ্গে বাজারের ব্রয়লার মুরগির গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়।
অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হিসেবে প্লানটেইন ঘাস ব্যবহারের মাধ্যমে গবাদি পশু মোটাতাজাকরণ ও অধিক পুষ্টিসমৃদ্ধ মুরগির মাংস উৎপাদন প্রযুক্তির নাম দিয়েছেন বাউ-প্লানটিভ।
জানা যায়, বিগত ৪ বছর ধরে ব্রয়লার মুরগিতে বাউ-প্লানটিভ প্রযুক্তি ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছেন ড. আল-মামুন। গবেষণায় দেখতে পান, ক্ষতিকর হরমোন দিয়ে উৎপাদন বাড়ানো ব্রয়লার মুরগি ও প্লানটেইন ব্যবহারে প্রাপ্ত মুরগির উৎপাদনের হার প্রায় সমান। গবেষণায় প্রাপ্ত মুরগির মাংসে মানবদেহের উপকারি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ওমেগা-৩ এর পরিমাণ বেশি। ওমেগা-৩ সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ কমিয়ে দেহের উপকারী চর্বির পরিমাণ বাড়ায়। এটি হৃদরোগ, স্ট্রোক, ক্যান্সার, চোখে ছানি, স্মৃতিভ্রম এবং অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমিয়ে ক্ষতিকর চর্বি কমাতে সাহায্য করে। এ মাংস তুলনামূলক আয়রনসমৃদ্ধ, লালচে বর্ণের, স্বাদযুক্ত এবং হাড় ও মাংস সাধারণ ব্রয়লার মুরগির মাংসের চেয়ে তুলনামূলক শক্তপ্রকৃতির হয়।
গবেষক ড. আল-মামুন বলেন, প্লানটেইন ঘাস ক্ষতিকর অ্যান্টিবায়োটিকের বিকল্প হওয়ায় ২০১১ সাল থেকে বাংলাদেশে এ নিয়ে গবেষণা করি। এ উপকারি ওষধি গুণসম্পন্ন উদ্ভিদটি বাংলাদেশে অভিযোজিত করতে প্রায় ৩ বছর সময় লেগেছে। প্লানটেইন এখন বাংলাদেশের যেকোনো অঞ্চলে চাষাবাদের জন্য উপযোগী। ২০১৭ সাল থেকে মানিকগঞ্জ জেলায় কৃষকপর্যায়ে প্লানটেইন ঘাস উৎপাদন ও খামারি পর্যায়ে গবাদিপশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ২৮ দিন বয়সের একটি ব্রয়লার মুরগিতে অ্যান্টিবায়োটিক বা হরমোন বাবদ যেখানে ৫ টাকা খরচ হয়, সেখানে গবেষণায় প্লানটেইন খাওয়ানো প্রতি মুরগিতে খরচ মাত্র ২ টাকা ২১ পয়সা। যা মাথাপিছু মুরগি উৎপাদন খরচ অনেকাংশে কমিয়ে দেয়। বাণিজ্যিকভাবে কৃষকপর্যায়ে প্লানটেইন ঘাস উৎপাদন অনেক লাভজনক। প্লানটেইন চাষাবাদে প্রতি একর জমিতে ১২ মেট্রিকটন ফলন পাওয়া যায়। যা দিয়ে ৪ লাখ ২০ হাজার ব্রয়লার মুরগি উৎপাদন সম্ভব।
মো. শাহীন সরদার/এমএএস/জেআইএম