ঢাবির আইন বিভাগে ফলাফল কারসাজির অভিযোগ
মেধাক্রমে প্রথমে থাকা একজন শিক্ষার্থীর নম্বর কমিয়ে দিয়ে, পিছনে থাকা আরেক শিক্ষার্থীকে নম্বর বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ভিতরে ভিতরে ওই ছাত্রকে শিক্ষক বানানোরও স্বপ্ন দেখছেন কয়েকজন শিক্ষক। আর এতে করে কঠোর পরিশ্রম করে মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকলেও শেষ পর্যন্ত সিন্ডিকেটে পিছনে পড়তে হচ্ছে মেধাবী শিক্ষার্থীদের। এমনই অভিযোগ উঠেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, এ বিভাগের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সময় মতো ফলাফল প্রকাশ না করা, টেবুলেশন শিটে নম্বর জালিয়াতি, ক্লাস চালুতে বিলম্ব ঘটানো, অফিসিয়াল কার্যক্রমে ঢিলেমি, সেশনজট নিরসনে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ না করাসহ নানা অভিযোগ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ থাকলেও মুখ খুলতে সাহস করছে না কেউই।
সর্বশেষ বিভাগের ২০১০-১১ সেশনে ৩৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্নাতকের ফলাফল নিয়ে তৈরি হয় জটিলতা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পরীক্ষার ২২ কর্মদিবসের (১ মাস) মধ্যে ফলাফল ঘোষণা করতে হবে। অথচ ৩৮তম ব্যাচের এসব শিক্ষার্থীদের স্নাতক চূড়ান্ত পরীক্ষার ৬ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি প্রশাসন। যার দরুণ এ ব্যাচের শিক্ষার্থীদের মাস্টার্সের ক্লাস শুরু হলেও রেজাল্ট প্রকাশিত না হওয়ায় তারা মাস্টার্সের সাবজেক্ট নির্ধারণ করতে পারছেন না। এমনকি আইন পেশায় যেতে সুপ্রিম কোর্টের বার কাউন্সিলে ইন্টিমেশন জমা দিতেও পারছেন না তারা। ফলে এদের দুই বছর পিছিয়ে পড়তে হচ্ছে বার কাউন্সিলে যোগদান।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা গেছে, চূড়ান্ত পরীক্ষার টেবুলেশন শিটের নম্বর জালিয়াতিই ফলাফল সময় মতো প্রকাশ না করতে পারার অন্যতম কারণ। এছাড়াও রয়েছে, মেধাক্রমে প্রথম দিকে থাকা কয়েকজন ছাত্রের মধ্য থেকে একজনকে নম্বর বাড়িয়ে দিয়ে তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত এগিয়ে থাকা আরেক ছাত্রের প্রাপ্ত নম্বর কমিয়ে দেয়া। তারা বলেন, ওই ছাত্র যেন বিভাগের শিক্ষক হতে না পারে সেজন্যই এমন কারসাজি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, পরীক্ষার খাতা হারিয়ে যাওয়ার কথা বলে কর্তৃপক্ষ ফলাফল ঘোষণা সম্ভব হচ্ছে না বলে পার পাওয়ার চেষ্টা করছেন। অথচ এটা তাদের একটা চক্রান্ত। তারা পিছিয়ে থাকা শিক্ষার্থীকে নম্বর বাড়িয়ে এগিয়ে নেয়াটা হচ্ছে তাকে শিক্ষক বানানো। আর এতে করে অন্যরা সেরা নম্বর পেয়েও ষড়যন্ত্রের শিকার হতে হচ্ছে।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা টেবুলেশন শিটে নম্বর জালিয়াতি ও রেজাল্ট পেছানোর অভিযোগ নিয়ে উপাচার্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে গেলেও তাদের কেউই এর কোনো যথাযথ যুক্তি দিতে পারেন নি। এমনকি এ বিষয়ে তারা কোনো দায়-দায়িত্ব গ্রহণেও নারাজ।
পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মো. বাহলুল হক চৌধুরী অভিযোগের বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে নারাজ। তিনি বলেন, আমি এ বিষয়ে কথা বলতে চাই না। ফলাফল জালিয়াতির বিষয়ে জানতে চাইলে আইন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. বোরহান উদ্দীন খান বলেন, আমরা টেবুলেশন থেকে অভিযোগ পেয়েছি। শিগগিরউ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। তাদের দেয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, অভিযোগটি আমাদের কাছে এসেছে। আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। তবে এ বিষয়ে কথা বলতে তিনি আইন বিভাগের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তারা ভালো জানেন তাদের সঙ্গে কথা বলুন।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্নাতক শ্রেণির ফলাফল বিলম্বের কারণে তারা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চাকরির আবেদন করতে পারছেন না। বিদেশে নামিদামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশিপ পাওয়ার পরও এ ফল না পাওয়ার কারণে বিদেশ যেতে পারছেন না তারা। ৩৮তম ব্যাচের নিয়াজ মোর্শেদ নামের এ শিক্ষার্থী সার্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রেসিডেন্সিয়াল স্কলারশিপ পাওয়ার পর ফলাফল প্রকাশিত না হওয়ায় তাকে ফিরে আসতে হয়েছে।
শুধু ৩৮তম ব্যাচ নয়, নিয়মিতই সেশন জটের শিকার এ বিভাগের প্রতিটি ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়া নম্বর জালিয়াতিসহ নানা অনিয়ম এ বিভাগের পিছু ছাড়ছে না। ফলে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এখানকার শিক্ষার্থীদের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৩৮তম ব্যাচের এক ছাত্রী বলেন, শিক্ষরা প্রথমবর্ষ থেকেই কাকে সর্বশেষ সেরা হিসেবে তৈরি করবে তা নির্ধারণ করে নেয়। তাই তারা সব সময় ওই শিক্ষার্থীকে বেশি নম্বর দিতে মরিয়া। এটার পিছনে শিক্ষকদের রাজনীতিকেই দায়ী করেন এই ছাত্রী।
তিনি বলেন, দল ভারী করার টার্গেট নিয়ে রেজাল্টে অনিয়ম কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ এতে করে বিভাগেরই ক্ষতি হচ্ছে।
এমএইচ/বিএ