৬২৫ দিনের মধ্যে ৪৬৫ দিন অনুপস্থিত উপাচার্য

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৬:৫২ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৯

উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থির পরিবেশ বিরাজ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) শিক্ষক সমিতি।

শিক্ষক নেতাদের দাবি, বর্তমান উপাচার্যের কারণে দেশব্যাপী বিশ্ববিদ্যালয় তথা এই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নানাভাবে ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।

মঙ্গলবার দুপুরে উপাচার্য বরাবর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির ১৮ দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপিতে এসব অভিযোগ আনা হয়। উপাচার্যের অনুপস্থিতিতে তার একান্ত সচিব মো. আমিনুর রহমান এ স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন।

বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবীর সুমন স্বাক্ষরিত এ স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য যোগদানকৃত শিক্ষকদের ছুটিবিহীন অনুপস্থিতি শিক্ষা সংকট তৈরি করছে, প্রশ্নবিদ্ধ শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকর্তা সম্পর্কে নানা নেতিবাচক সংবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি চরমভাবে নিচু হচ্ছে। যা শিক্ষক সমিতির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে কোনোভাবেই কাম্য নয়।

শিক্ষক সমিতির ১৮ দফা দাবির মধ্যে আছে, নিয়োগ শর্ত অনুযায়ী উপাচার্যের সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে উপস্থিতি থাকা, স্থাপনা প্রকল্পের দ্বিতীয় ধাপের কাজ শুরু, বিশ্ববিদ্যালয়ে সিন্ডিকেট-নিয়োগ বোর্ড-অর্থ কমিটির সভাসহ সকল সভার আয়োজন করা, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে শিক্ষকদের বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ বন্ধ ও ড. ওয়াজেদ রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিউটের অধিন প্রশিক্ষণ প্রদান, গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন, শিক্ষকদের পদোন্নতিতে হয়রানি নিরসন, অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ীকরণ ও সেশনজট নিরসনে ব্যবস্থা গ্রহণ, কোষাধ্যক্ষ ও উপ-উপাচার্য নিয়োগে ব্যবস্থা গ্রহণ, শিক্ষকদের শিক্ষা ছুটি বৃদ্ধি, যোগ্য শিক্ষকদের ডিন ও বিভাগীয় প্রধান হিসেবে নিয়োগ, গেজেট অনুযায়ী বিভাগের প্ল্যানিং কমিটি গঠন, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপাসনালয় স্থাপন, কেন্দ্রীয় মসজিদের গম্বুজসহ দোতলার কাজ শুরু, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের বিভাগীয় প্রধানকে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী নিয়োগ, ক্যাম্পাসে স্থায়ী ব্যাংক বুথ ও স্থায়ী ফটক নির্মাণ এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম রোকেয়া সাখায়াত হোসেনের প্রতিকৃতি স্থাপন।

উপাচার্যের অনুপস্থিতি অনুসন্ধানে জানা যায়, উপাচার্য ২০১৭ সালের ১৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়ার পর গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৬৫৫ দিন অতিবাহিত হয়েছে। শিক্ষক-কর্মকর্তাদের সূত্রগুলো বলছে, এর মধ্যে উপাচার্য ৪৬৫ দিনই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন।

চলতি মাসের ১ এপ্রিল থেকে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মোট ১৭ দিনে তিনি ক্যাম্পাসে এসেছেন মাত্র ছয়দিন। গত ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে যোগদানের পর আর তিনি ক্যাম্পাসে আসেননি। আর উপাচার্য ক্যাম্পাসে না থাকায় অধিকাংশ সময় পড়েই থাকতে দেখা যাচ্ছে আধুনিক সুবিধা সংবলিত উপাচার্যের বরাদ্দকৃত বাসভবন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা, জীব ও ভূতত্ত্ব অনুষদের ডিন। উপাচার্যের অনুপস্থিতির কারণে এ তিন অনুষদের ১০টি বিভাগের কাজকর্ম যথাসময়ে হচ্ছে না। উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব পরীক্ষা কমিটির অনুমোদন দিতে হয়। তিনি ছাড়া পরীক্ষার ফল প্রকাশেও বিলম্ব হয়। উপাচার্য নিজে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্বে আছেন। তিনি না থাকলে আর্থিক কাজগুলো গতিহীন হয়ে যায়।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, উপাচার্য কেবলমাত্র বিভিন্ন বিভাগের পরিচয়পত্র বিতরণ আর সিনেমায় অভিনয় করতে দেখা যায়। যদিও ক্যাম্পাসে আসেন সেটা হয় ছুটির দিনে অথবা বিশেষ দিবসে। উপাচার্য যোগদানের পর সেশনজট নিরসন করে বিশ্ববিদ্যালয়কে আন্তর্জাতিকমানের করার আশ্বাস দিলেও সবই ছিল শুভঙ্করের ফাঁকি।

তবে শিক্ষক সমিতি স্মারকলিপি প্রদানে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেননি বলে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলে জানান শিক্ষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ড. মো. নুর আলম সিদ্দিক। তিনি বলেন, নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে দাবির ব্যাপারে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। তাই তা প্রত্যাখ্যান করেছি।

এদিকে, উপাচার্যের নিয়মিত উপস্থিতির দাবি জানিয়ে গত ২১ মার্চ লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে মানববন্ধন ও সমাবেশ কর্মসূচি পালন করেন।

ওই বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, উপাচার্য ক্যাম্পাসে অধিকাংশ সময় অনুপস্থিত থাকায় শিক্ষকেরা পরীক্ষা নিতে চাইলেও যথাসময়ে পরীক্ষা নেয়া সম্ভব হয় না। যথাসময়ে পরীক্ষা না নেয়ায় সমস্যায় পড়েন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। ১১ দফা দাবি জানিয়ে গত ১১ মার্চ থেকে ২৪ মার্চ পর্যন্ত অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশন অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করেছেন এবং ১৩ মার্চ থেকে ৭ এপ্রিল পর্যন্ত কর্মচারী ইউনিয়ন ১০ দফা দাবি নিয়ে লাগাতার কর্মবিরতি পালন করেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র বলছে, উপাচার্যের দাবি পূরণের আশ্বাসে কর্মবিরতি সাময়িক প্রত্যাহার করে নিলেও যেকোনো সময় ফের আন্দোলনে যেতে পারেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

কথা বললে অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, উপাচার্য প্রায়সময় ঢাকায় থাকেন। দাবি পূরণের আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৪ মার্চ কর্মবিরতি প্রত্যাহার করা হয়েছে।

কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি নুর আলম বলেন, প্রশাসন আমাদের দাবি মেনে নেয়ার আশ্বাসে কর্মবিরতি স্থগিত করা হয়েছে। যথা সময়ে দাবি পূরণ না হলে ফের নতুন কর্মসূচি দেয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খায়রুল কবীর সুমন জাগো নিউজকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক থেকেও নেই। দাবি বাস্তবায়নের প্রশাসন যথাযথ উদ্যোগ না নিলে আলটিমেটাম দেয়া হবে।

স্মারকলিপি প্রদানে শিক্ষক সমিতি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেনি এমন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নিয়ম মেনেই স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। কেউ প্রত্যাখ্যান করেছে কিনা সেটা আমার জানা হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের কল্যাণে যৌক্তিক দাবিতে কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়।

সার্বিক বিষয়ে জানতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। সাক্ষাতের জন্য উপাচার্যের কার্যালয়ে গেলেও তাকে সেখানে পাওয়া যায়নি। পরে জানা যায় তিনি ক্যাম্পাসে নেই।

সজীব হোসাইন/এএম/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।