বেরোবি শিক্ষার্থী প্রতিবন্ধী এরশাদের করুণ অবস্থা

জেলা প্রতিনিধি
জেলা প্রতিনিধি জেলা প্রতিনিধি লালমনিরহাট
প্রকাশিত: ০৮:০৭ পিএম, ০৮ এপ্রিল ২০১৯

বাম হাত নেই এরশাদ হোসেনের। তারপরও থেমে থাকেননি তিনি। একটি হাত নিয়েই করেছেন পড়াশোনা। এবার বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবস্থাপনা বিভাগে ভর্তি হয়েছেন।

দিনমজুর বাবার সহযোগিতায় তার ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। কিন্তু সেখানে ভর্তি হয়ে মহাবিপাকে পড়েছেন এরশাদ। অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে তার। ভর্তির চার মাস পেরিয়ে গেলেও বই কিনতে পারেননি তিনি।

এ বছর রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সি ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে প্রতিবন্ধী কোটায় ২য় হয়েছেন তিনি। এরশাদ শহীদ মুখতার ইলাহী হলের ২০৮ নম্বর রুমে থাকেন। তিনি লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী ইউনিয়নের চর নিজ গড্ডিমারী গ্রামের দিনমজুর ইয়াদ আলী ও মা ফিরোজা খাতুনের ছেলে। এক বোন ও পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়।

এরশাদ হাতীবান্ধা উপজেলার গড্ডিমারী দ্বি-মুখী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৭৮ ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মোতাহার হোসেন কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৩.৯২ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। পরিবারে অভাব-অনটন ও শারীরিক প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এমন সাফল্যে সবাই অভিভূত।

Lalmonirhat--BROB-Student

শিশুকালে তিস্তা নদীর পাড়ে খেলতে গিয়ে বাম হাত ভেঙে ফেলেন এরশাদ হোসেন। অনেক চিকিৎসা করেও হাতটি ভালো হয়নি। একসময় হাতটিতে পচন ধরে। পরে এলাকাবাসীর সাহায্য নিয়ে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে হাতটি কেটে নেয়া হয় তার।

দিনমজুরি করে সংসার চালান এরশাদের বাবা ইয়াদ আলী। পরিবারের সদস্য সংখ্যা আট। বাড়ি ভিটে ৫ শতক জমি ছাড়া কিছুই নেই তাদের। ছেলের পড়াশোনায় আগ্রহ থাকায় খেয়ে না খেয়ে তাকে বিশ্ববিদ্যলয়ে ভর্তি করান। কিন্তু ছেলের পড়াশোনা খরচ চালাতে না পেরে হতাশায় ভুগছেন তিনি।

এরশাদ হোসেন জানান, শারীরিক প্রতিবন্ধকতার চেয়েও সংসারের অভাব-অনটনই পড়ালেখায় বেশি বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কেউ পড়াশোনার খরচ বহন করলে হয়তো আমার স্বপ্নটা পূরণ হতো। ভবিষ্যতে আমি বিসিএস ক্যাডার হতে চাই।

Lalmonirhat--BROB-Student

তিনি জানান, হলে থাকলেও প্রতি মাসে খাওয়া ও অন্য খরচ বাবদ তিন হাজার টাকা খরচ হয়। এখন পর্যন্ত কোনো টাকা দিতে পারিনি। ৫টি বই কিনতে প্রায় ১ হাজার ২০০ টাকা লাগবে। সেই টাকাও জোগার করতে পারছি না। বাড়িতে বাবার অবস্থা এতই খারাপ যে, টাকার কথা বলতে বিবেক সায় দিচ্ছে না। জানি না পড়ালেখা করতে পারবো কীনা?

গড্ডিমারী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. আতাউর রহমান বলেন, শারীরিক আর সাংসারিক প্রতিবন্ধকার সঙ্গে যুদ্ধ করেই সে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে। সমাজের বিত্তবানরা তার পাশে দাঁড়ালে ভবিষ্যতে তার স্বপ্নটা পূরণ হবে।

এরশাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যাবে ০১৭৯৭-৬৪৯০৮৬ নম্বরে।

রবিউল হাসান/এমএএস/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।