শিক্ষকের বিরুদ্ধে ‘যৌন নিপীড়নের’ অডিও ভাইরাল
গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুই ছাত্রীকে যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে। এ-সংক্রান্ত কয়েকটি অডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় সর্বত্র সমালোচনার ঝড় বইছে।
ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিয়েছেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রধান ও সহকারী অধ্যাপক মো. আক্কাস আলী অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।
শনিবার বেলা ২টার দিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে যৌন নিপীড়নের কয়েকটি অডিও রেকর্ড ভাইরাল হয়। এতে ক্যাম্পাসজুড়ে চরম ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় বইছে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত শিক্ষককে চাকরি থেকে দ্রুত অপসারণ এবং তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
প্রকাশিত অডিও রেকর্ড থেকে জানা যায়, ওই শিক্ষক ছুটির দিনসহ বিভিন্ন সময়ে ভুক্তভোগী দুই ছাত্রীকে একান্তভাবে তার বাসায় এবং নিজ বিভাগীয় অফিস কক্ষে এসে দেখা করার জন্য চাপ দেন। এর মধ্যে এক ছাত্রী ঢাকায় অবস্থান করলেও দ্রুত তাকে গোপালগঞ্জে ওই শিক্ষকের বাড়িতে আসতে বলেন। ওই ছাত্রী অপারগতা প্রকাশ করে বলেন, আগে যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে কীভাবে আমি একা আপনার সঙ্গে দেখা করব? তখন তিনি (শিক্ষক) তাকে (শিক্ষার্থী) সকালের গাড়িতে গোপালগঞ্জ এসে সরাসরি তার বাসায় দেখা করে, রাতে আবার ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা বলেন।
আরেক অডিওতে জানা যায়, অপর এক ছাত্রী তার অফিসে দেখা করতে চাইলেও ওই শিক্ষক জেলা শহরের নীলারমাঠ এলাকায় তার নবনির্মিত বাড়িতে এসে একান্তভাবে দেখা করার জন্য বলেন।
ওই ছাত্রীর অভিযোগ, তিনি ওই শিক্ষকের অফিস রুমে থিসিস দেখাতে গেলে সেখানে যৌন নিপীড়নের শিকার হন। ওই সময় তিনি (শিক্ষার্থী) অফিস কক্ষ থেকে বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে বিভাগের গেটে তালা মেরে আটকে রাখা হয়, যা ইতোপূর্বে ওই শিক্ষার্থী তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেন।
এদিকে, বিভাগীয় প্রধান কর্তৃক দুই ছাত্রী নিপীড়নের ঘটনায় প্রহসনমূলক বিচারের মাধ্যমে ধামাচাপা দেয়ার খবর একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশ হওয়ায় নড়েচড়ে বসে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। তবে শুরু থেকে তারা অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে বাঁচাতে তৎপর ছিলেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে তদন্ত কমিটি গঠনের পরও বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাধারণ শিক্ষার্থীসহ সচেতন মহলের নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই ঘটনা প্রকাশ পাওয়ায় বিষয়টি আমলে নিতে বাধ্য হন তারা।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযুক্ত ওই শিক্ষককে চাকরিচ্যুতসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী দুই ছাত্রী জানান, সিএসই বিভাগের শিক্ষানীতি অনুযায়ী প্রতি ব্যাচকে চতুর্থ বর্ষে থিসিস করতে হয়। সে অনুযায়ী সিএসই বিভাগের চেয়ারম্যান মো. আক্কাস আলী আমাদের সুপারভাইজার হন। তার তত্ত্বাবধানে আমরা তিন ছাত্রী মিলে একটি গ্রুপ গঠন করে কাজ শুরু করি। থিসিসের কথা বলে ওই শিক্ষক আমাদের নানাভাবে যৌন হয়রানি করেন। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে ফেল করিয়ে দেয়া হবে বলেও হুমকি দেন। এ অবস্থায় আমরা মানসিকভাবে ভেঙে পড়ি।
ওইসব ঘটনায় দুই ছাত্রী প্রথমে মৌখিকভাবে অভিযোগ করেন। পরে শিক্ষকদের পরামর্শে বিভাগীয় প্রধানের যৌন হয়রানির বিষয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিষয়ে শিক্ষক মো. আক্কাস আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে। বিভাগের এক শিক্ষক এর পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক শ্রেণিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন মডারেশন কমিটির সদস্য ও রেজাল্ট প্রসেসিং কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অভিযুক্ত শিক্ষক মো. আক্কাস আলী। সে সময় রেজাল্ট শিট পরিবর্তন করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন লঙ্ঘন করে আপন ছোট ভাই মো. লিয়াকত মাতুব্বরকে নিজ বিভাগে ভর্তি করান।
শিক্ষক আক্কাস আলীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত ‘যৌন হয়রানির’ অভিযোগের বিষয়ে জানতে ভিসি প্রফেসর ড. খোন্দকার নাসির উদ্দিনকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু তিনি রিসিভ করেননি। তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। এদিকে দুই ছাত্রীকে শিক্ষক কর্তৃক যৌন নিপীড়নের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
এস এম হুমায়ূন কবীর/এমএমজেড/এমএআর/এমকেএইচ