ভিসির পদত্যাগ দাবিতে অনশনে ববির শিক্ষার্থীরা
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) উপচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হকের পদত্যাগ দাবিতে প্রতীকী অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা।
শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের গ্রাউন্ড ফ্লোরে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি শুরু করেন তারা। সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনশন চলবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
অনশনরতরা জানান, ভিসির পদত্যাগ দাবিতে ১১তম দিনের মতো আন্দোলন করছেন তারা। গত ১ এপ্রিল জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে তারা স্মারকলিপি দেন। এরপর সোমবার ৪৮ ঘণ্টার আলটিমেটাম দেন। বুধবার বেলা ২টায় ওই আল্টিমেটাম শেষ হয়। তবে ওই সময়ের মধ্যে ভিসি পদত্যাগ না করায় তদের আন্দোলন অব্যাহত রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা জানান, এর আগে প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে ক্যাম্পাসে একাডেমিক ভবনের প্রশাসনিক শাখার সামনে জড়ো হন তারা। পরে তারা বেলা ১১টার দিকে ভিসির পদত্যাগ দাবিতে প্রতীকী অনশন শুরু করেন।
তারা আরও জানান, যতদিন তাদের দাবি অনুযায়ী ভিসি পদত্যাগ না করবেন-ততদিন তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। তারা তাদের আন্দোলন থেকে কোনোভাবেই সরে আসবেন না। প্রয়োজনে আন্দোলন আরও কঠোর করা হবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সূত্র জানায়, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বৈকালিক চা চক্র ও আলোচনা অনুষ্ঠানে’ শিক্ষার্থীদের আমন্ত্রণ না জানানোয় এবং তাদের খাবার প্যাকেট না দেয়ায় অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে প্রতিবাদ জানান শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অপর একটি অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান পণ্ডু করার চেষ্টাকারীদের ‘রাজাকারের বাঁচ্চা’ বলেন উপাচার্য। উপাচার্যের ওই উক্তির প্রতিবাদে এবং ওই মন্তব্য প্রত্যাহারের দাবিতে পরদিন ২৭ মার্চ সকাল থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
ওইদিন আরও কিছু দাবি যুক্ত করে ১০ দফা দাবি আদায়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য আন্দোলনের শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। এমন পরিস্থিতিতে ছাত্র আন্দোলন নিয়ন্ত্রণ করতে ২৭ মার্চ রাত ৩টার দিকে উপাচার্য তার একক ক্ষমতাবলে ২৮ মার্চ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ এবং ওইদিন (২৮ মার্চ) বিকেল ৫টার মধ্যে সব আবাসিক শিক্ষার্থীকে হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। ২৭ মার্চ রাত ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ড. মো. হাসিনুর রহমান স্বাক্ষরিত এক নোটিশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ এবং শিক্ষার্থীদের হলত্যাগের নির্দেশের ঘটনায় আরও ক্ষুব্ধ হন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। কর্তৃপক্ষের নির্দেশ উপেক্ষা করে ২৮ মার্চ (বৃহস্পতিবার) আবাসিক শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগ না করে স্ব-স্ব হলেই অবস্থান নেন। একই সঙ্গে ভিসির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকারের বাচ্চা’ বলার ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হক। গত ২৯ মার্চ রাত সাড়ে ১০টার দিকে ভিসি প্রফেসর ড. এস এম ইমামুল হকের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সাল আহমেদ রুমি স্বাক্ষরিত গণমাধ্যমে পাঠানো ই-মেইল বার্তায় এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া গত মঙ্গলবার দুপুরে উপচার্য (ভিসি) প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক বিবৃতি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান পরিস্থিতি নিরসনে বরিশালের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষানুরাগী, সুশীল সমাজ, স্থানীয় প্রশাসন, গণমাধ্যমসহ সমগ্র সচেতন বরিশালবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান ও সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে কোনো ধরনের অনাকঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে বিশ্ববিদ্যালয় ও তার আশপাশের এলাকায় বিপুলসংখ্যক পুলিশ সদস্য মোতায়েন রয়েছে।
সাইফ আমীন/জেডএ/পিআর