শেকৃবিতে শিক্ষক-কর্মকর্তা নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৪:০০ পিএম, ১৪ মার্চ ২০১৯

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ জনবল নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে অপেক্ষমান রাখা হয়েছে আরও ২১ জনকে। বিজ্ঞাপিত চাহিদার চেয়ে অতিরিক্ত জনবল নিয়োগ, অপেক্ষাকৃত বেশি রেজাল্টধারীদের বঞ্চিত করে কম রেজাল্টধারীদের নিয়োগ, মাস্টার্স সম্পন্ন করা প্রার্থী বাদ দিয়ে স্নাতক সনদধারীদের নিয়োগসহ স্বজনপ্রীতির অভিযোগ তুলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও নিয়োগপ্রত্যাশীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর শেকৃবির চারটি অনুষদে সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক পদে ৭৫ জন শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। এর মধ্যে কৃষি অনুষদে ৩০ জন, অ্যানিমেল সায়েন্স অ্যান্ড ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদে ২০ জন, ফিশারিজ অনুষদে ১৮ জন এবং এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদে ৭ জন শিক্ষক নিয়োগ প্রদান করা হবে বলে জানানো হয় বিজ্ঞপ্তিতে। বিভিন্ন বিভাগের মৌখিক পরীক্ষা শেষে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর ১০১ জনকে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগের জন্য সুপারিশ প্রদান করা হয়। যা বিজ্ঞাপিত চাহিদার চেয়ে ২৬ জন বেশি। এর মধ্যে ২১ জনকে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) অনুমোদনের অপেক্ষায় রাখা হয়। যা ইউজিসি’র আইনের পরিপন্থী। ফলে ইউজিসি কর্তৃপক্ষ অপেক্ষমান এই ২১ জন প্রার্থীর নিয়োগের অনুমোদন দিতে নারাজ।

এ ব্যাপারে ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আব্দুল মান্নান বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের বলেন, ‘ইউজিসির আইনে কোনো কন্ডিশনাল (শর্ত সাপেক্ষে) নিয়োগ দেয়া যায় না। যাদেরকে অপেক্ষমান তালিকায় রাখা হয়েছে তাদের নিয়োগ দিতে হলে আমাদের কাছে অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এটা ইউজিসির আইনে না থাকায় আমরা তাদেরকে অনুমতি দেব না।

বিজ্ঞাপনে ইনস্টিটিউট অব সিড টেকনোলজিতে নিয়োগ দেয়ার বিষয়ে কিছু উল্লেখ না থাকলেও ৫ জন শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সেকশন অফিসার হিসেবে অতিরিক্ত ৮ জনকে নিয়োগ দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে ইউজিসি চেয়ারম্যান বলেন, ‘বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী যত সংখ্যক পদে নিয়োগ দেয়ার কথা তত সংখ্যক পদেই নিয়োগ দিতে হবে।’

কৃষি রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে বলেন, তার বিভাগে অ্যাপিয়ার্ড সনদ দিয়ে আবেদনকারীদের অনেককে ভাইভা কার্ড দেয়া হয়নি। অথচ পোল্ট্রি সায়েন্স বিভাগে সহকারী অধ্যাপক পদে একজনকে অ্যাপির্য়াড সনদ দিয়ে আবেদন করার পরেও তাকে ভাইভা কার্ড দেয়া হয়েছে। ভাইবার আগের দিন তার পিএইচডির ফলাফল বের হয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।

সূত্র জানায়, কৃষিতত্ত্ব বিভাগে নিয়োগ বোর্ডে এক্সপার্ট হিসেবে উপাচার্যের জামাতা একই বিভাগের অধ্যাপক ড. মির্জা হাসানুজ্জামানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। অভিযোগ রয়েছে, উপাচার্য তার আপন ভাগ্নে মো. মাহবুব আলমকে সহকারী অধ্যাপক পদে নিয়োগ প্রদানের জন্য জামাতাকে এক্সপার্ট হিসেবে নিয়োগ দেন। একইভাবে কৃষি অনুষদের ৩টি বিভাগে প্রভাবশালী শিক্ষকের আরও ৩ জন আত্মীয়কে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদের ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ফাইন্যান্স বিভাগে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করা যোগ্য প্রার্থী থাকা সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ ড. আনোয়ারুল হক বেগের মেয়ে তাহরিমা হক বেগকে প্রভাষক পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। তাহরিমা হক আশা ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন বলে জানা যায়।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য ও শিক্ষক সমিতিরি সভাপতি উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, ‘শেকৃবির নিয়োগ বিধিমালায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) নিয়োগ বিধি অনুসরণ করার কথা রয়েছে। ওই বিধির আলোকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগ দেয়ার বিষয়টি আপনা আপনি বাদ হয়ে যাওয়ার কথা।’

অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকরা সাক্ষাৎ করতে গেলে তিনি বলেন, ‘আমার সময় নেই। নিয়োগ নিয়ে কোনো কথা বলার দরকার নাই। আই ডোন্ট ফিল অ্যানি নিড টু টক উইথ ইউ। এই হলো কথা। আমার কোনো প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তোমরা কি বিতর্ক করার জন্য আসছো?'

মো. রাকিব খান/এসআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।