শেষ মুহূর্তের প্রচারণায় নেতাকর্মীদের ঘুম হারাম
বিশেষ সংবাদদাতা বিশেষ সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ০৪:০৯ পিএম, ০৯ মার্চ ২০১৯
দুপুর সাড়ে ১২টা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের সলিমুল্লাহ হলের সামনে দিয়ে তড়িঘড়ি হেঁটে যাচ্ছেন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া কয়েকজন তরুণ-তরুণী। তাদের কয়েকজনের হাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের জনৈক প্রার্থীর লিফলেট।
হেঁটে যাওয়ার পথে তাদের দু-একজন পেছনে পড়তেই এক তরুণী চেঁচিয়ে বললেন, দ্রুত পা চালিয়ে আয়, পলাশীতে চা খেয়ে আবার হলে হলে দৌড়াতে হবে। এ কথা শুনে একান্ত বাধ্যগতের মতো দ্রুত পা চালিয়ে সামনে এগিয়ে গেলেন তারা।
সুদীর্ঘ ২৮ বছর শেষে ২৯ বছরের মাথায় এসে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। সেই মাহেন্দ্রক্ষণের আর মাত্র একদিন বাকি। অর্থাৎ আগামী ১১ মার্চ (সোমবার) নির্বাচন। সময় ফুরিয়ে আসায় শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা চালাতে গিয়ে প্রার্থী, নেতা ও তাদের কর্মীদের ঘুম যেন হারাম হয়ে গেছে।
কাকডাকা ভোর থেকে গভীর রাত অবধি নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে কর্মী-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং সরেজমিন ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন হলের ভেতর-বাইরে প্রচারণা চালাচ্ছেন। হলগেট ও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রবেশপথে যেকোনো শিক্ষার্থীকে দেখলেই সালাম দিয়ে পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে কেউ লিফলেট বিলি করছেন, আবার কেউ প্রার্থীর পক্ষে ভোট প্রার্থনা করে গুণগান গাইছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ নির্বাচনে মোট ভোটার ৪২ হাজার ৯২৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ২৬ হাজার ৭৭২ এবং ছাত্রী ১৬ হাজার ১৪৫। হলভিত্তিক পাঁচটি ছাত্রী হলের ভোটার সংখ্যা- রোকেয়া হলে চার হাজার ৫৩০, শামসুন্নাহার হলে তিন হাজার ৭৩৭, কবি সুফিয়া কামাল হলে তিন হাজার ৭১০, বাংলাদেশ কুয়েত মৈত্রী হলে এক হাজার ৯২০ এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হলে দুই হাজার ২৪৮। ডাকসুর ২৫টি পদ ও হল সংসদের ১৩টিসহ প্রতি ভোটার ৩৮টি ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীকে নির্বাচিত করার সুযোগ পাবেন।
সরেজমিন ক্যাম্পাস ও বিভিন্ন হল ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রার্থীর ছোট-বড় পোস্টার, ব্যানার ও দেয়াল লিখনে গোটা ক্যাম্পাস ও হল ছেঁয়ে গেছে। কোথাও প্যানেলসহ ব্যানার আবার কোথাও প্রার্থীর একক পোস্টার ও ব্যানার চোখে পড়ছে। শীর্ষপদে ক্যাম্পাসে সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অনুসারী ছাত্রলীগমনোনীত ভিপি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন (ছাত্রলীগ সভাপতি) ও জিএসপ্রার্থী গোলাম রাব্বানীর (ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক) পোস্টার ও ব্যানার।
এছাড়া সভাপতি পদে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রার্থী নুরুল হক নুর, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলপ্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ও বামজোটের প্রার্থী লিটন নন্দীর পোস্টার ও ব্যানার। এছাড়া জিএসপ্রার্থী গোলাম রাব্বানী ছাড়াও কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের প্রার্থী রাশেদ খান, ছাত্র ফেডারেশনের উম্মে হাবিবা বেনজীর, ছাত্রদলের আনিসুর রহমান খন্দকার অনিক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এ আর এম আসিফুর রহমানের পোস্টার-ব্যানারও চোখে পড়ে।
এজিএস পদে ছাত্রলীগের সাদ্দাম হোসেন ও কোটা আন্দোলনকারীদের ফারুক হাসানের পোস্টার ও ব্যানারের সংখ্যা বেশি। তবে বিভিন্ন হলে বিভিন্ন পদে দলের বাইরে স্বতন্ত্র অনেক প্রার্থীর ব্যানার-পোস্টারও শোভা পাচ্ছে।
শুক্রবার রাত ৮টায় কুয়েত মৈত্রী ও ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের প্রবেশ গেটে দাঁড়িয়ে ছাত্রলীগমনোনীত সভাপতি ও জিএসপ্রার্থীর লিফলেট বিতরণ করছিলেন দুই শিক্ষার্থী। তারা জানান, কয়েক দিন ধরে ঘুম হারাম হয়ে গেছে। প্রার্থীকে জেতাতে দিন-রাত পরিশ্রম করছেন। প্রার্থীরা নিজেরা সব ভোটারের কাছে ইচ্ছা থাকলেও পৌঁছাতে পারছেন না। তাদের পক্ষে বিভিন্ন হলে গিয়ে তারা লিফলেট বিলি করছেন।
তবে ভোটারদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, ২৮ বছর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ থাকলে শিক্ষার্থীরা যোগ্য নেতা বেছে নিতে ভুল করবেন না।
এমইউ/এমএআর/আরআইপি