অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে দেশের প্রথম মুক্তমঞ্চ


প্রকাশিত: ১২:২২ পিএম, ২৫ আগস্ট ২০১৫

অযত্নে অবহেলায় নষ্ট হচ্ছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত দেশের প্রথম মুক্তমঞ্চ। ফাটল, জলাবদ্ধতা, প্লাস্টার ও রং খসে পড়া, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে সৌন্দর্য হারাচ্ছে জাবির এই সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ।

দীর্ঘদিন আগেই ফাটল ধরেছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অবস্থিত দেশের প্রথম সেলিম আল দীন মুক্তমঞ্চ এর উত্তর পার্শ্বে। অবশেষে ফেটে যাওয়া অংশও সরিয়ে ফেলা হয়েছে। কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দ্রুত সমস্যা সমাধান না করার ফলে সৌন্দর্য বিকৃত হচ্ছে মুক্তমঞ্চের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মুক্তমঞ্চের দেয়ালের প্লাস্টার খসে পড়েছে। মূল স্টেজের পেছনের দেয়ালে পোস্টার পুরু আস্তরণ পড়ে নষ্ট হচ্ছে মুক্তমঞ্চের সৌন্দর্য। এছাড়া দীর্ঘদিন রঙ না করার ফলে দেয়ালের রঙ বিভিন্ন জায়গা থেকে উঠে গেছে।

সর্বশেষ ২১ মে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ম্যানেজমেন্ট বিভাগের উদ্যোগে আয়োজিত তাহসানের কনসার্টের সময় মুক্তমঞ্চের উত্তর পার্শ্বের দেয়ালে ফাটল ছিল। কনসার্ট উপলক্ষে দর্শক কানায় কানায় পরিপূর্ণ ছিল। ওই সময়ই আয়োজক কমিটি দেয়ালটি ভেঙ্গে পড়ার আশঙ্কায় ছিল।

একটু বৃষ্টি হলেই পানিবদ্ধ হয়ে পড়ছে মুক্তমঞ্চটি। মঞ্চের উপরে কাপড় বা লাইট টানানোর জন্য যে লোহার পাইপগুলো রয়েছে, পাইপগুলো অনেক সরু হওয়ায় মঞ্চের দিকে ঝুঁকে রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের সময় ও অনুষ্ঠান শেষে কর্তৃপক্ষ ঠিকমত মঞ্চটি পরিষ্কার করে না বলে অভিযোগ রয়েছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মী ও অনুষ্ঠানের আয়োজকদের।কোনো অনুষ্ঠানের সময় ঘনিয়ে এলে আয়োজকদের পীড়াপীড়িতে অনুষ্ঠানের আগ মুহূর্তে গিয়ে মঞ্চ পরিষ্কার করা হয় বলেও অভিযোগ তাদের।

এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক জোবায়ের টিপু বলেন, এ সব সমস্য থাকলে আমরা আমাদের অনুষ্ঠান করতে পারব না। মুক্তমঞ্চটি সেলিম আল দীন স্যারের নামে করা তার নামের ফলকটি ভেঙ্গে গেছে। যেখানে লাইট লাগাতে হবে তবে সেখানে লাইট লাগানো যায় না।

তিনি আরো বলেন, জলাবদ্ধতা থাকলে কোন অনুষ্ঠান করা সম্ভব না। এছাড়া দেখা যায় মুক্তমঞ্চে অপ্রীতিকর কাজ হয়। যারা মুক্তমঞ্চটি পরিচালনার দায়িত্বে আছেন তাদের কাছে আমাদের দাবি অতিদ্রুত সকল সমস্যা সমাধান করা।

এ বিষয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. খবির উদ্দিন বলেন, স্থায়ীভাবে সকল সমস্যা দ্রুত সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। ইতোমধ্যে সকল কাগজপত্র ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসে পাঠিয়েছি।

এছাড়া ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের পরিচালক মঞ্চে পানি জমে যাওয়া সম্পর্কে বলেন, ‘পাশের লেকের কারণে মুক্তমঞ্চে পানি জমে যাচ্ছে। লেক বন্ধ করতে পারলে আর মঞ্চে পানি জমবে না’।

ju

শিক্ষক মঞ্চের মুখপাত্র ও দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রাইহান রাইন বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড সমস্ত দেশের প্রতিনিধিত্ব করে, কিন্তু বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নানা দিক থেকে নানা ভাবে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড করতে নিরুৎসাহিত করে। এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অবহেলা চূড়ান্ত। অবিলম্বে এ সব সমস্যা সামাধানের কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া দরকার’।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড মুক্তমঞ্চ কেন্দ্রিক। এ মঞ্চকে ক্যাম্পাসের সাংস্কৃতিক চর্চার এক উর্বর ভূমি বলা হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, নাটক মঞ্চস্থ হয় এই মঞ্চেই। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের পুনর্মিলনী, র‌্যাগ অনুষ্ঠান, বিশ্ববিদ্যালয় দিবস-সব অনুষ্ঠানই হয় সেখানে।

প্রায় দেড় হাজার দর্শক একসঙ্গে বসে এ মঞ্চে অনুষ্ঠান দেখতে পারেন। বছরে প্রায় ২৫০টি অনুষ্ঠান হয়ে থাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চে।

এসএইচএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।