ভুলে ভরা ঢাবির অধিভুক্ত কলেজের ফলাফল

মুরাদ হুসাইন
মুরাদ হুসাইন মুরাদ হুসাইন , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:১২ পিএম, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৮

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অধিভুক্ত চার কলেজের বাণিজ্য বিভাগের স্নাতক (পাশ) শেষ বর্ষের ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। এতে প্রায় ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থী অকৃতকার্য হয়েছেন। প্রকাশিত ফলাফলে নানা অসংঙ্গতি ও ভুল ধরা পরেছে। এ বিষয়ে সহস্রাধিক আবেদন ঢাবি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দফতরে জমা পড়েছে। তবে দ্রুতই সব ভুল সংশোধন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।

জানা গেছে, রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী ৭টি কলেজ ঢাবিতে অধিভুক্ত হওয়ার পর প্রথম বারের মত তিন বছর মেয়াদী পাস কোর্সের চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করেছে কর্তৃপক্ষ। সাত কলেজের মধ্যে ছয়টিতে পাস কোর্সে শিক্ষার্থী আছে। গত সপ্তাহ থেকে পর্যায়ক্রমে সরকারি বাঙলা কলেজ, সোহরাওয়ার্দী কলেজ, সরকারি তিতুমীর ও কবি নজরুল ইসলাম কলেজের ৩ বছর মেয়াদী ব্যাচেলর অব বিজনেস স্টাডি (বিবিএস পাস) কোর্সের ফল প্রকাশ করা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোট ১৫টি বিষয়ে পরীক্ষা হলেও সবকয়টির ফল দেয়া হয়নি, অনুপস্থিতি দেখানো, ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষার নম্বর যোগ না করে আগের নম্বর যোগ করা, সব বিষয়ে পাস করলেও আবশ্যিক বিষয়ে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে ফেল করানো, প্রাপ্ত মোট নম্বর যোগ-বিয়োগে ভুলসহ বিভিন্ন ধরনের অসংঙ্গতি ও ভুল চিহ্নিত করা হয়েছে।

ভুক্তভুগী শিক্ষার্থীরা জানান, তারা ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষে তিন বছরের কোর্সে ভর্তি হয়েছিলেন। ২০১৫ সালে কোর্স শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তৃতীয় বর্ষের পরীক্ষা শেষ হয়। প্রায় এক বছর পর ফাইনাল পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হলেও তা ভুলে ভরা। এ কারণে ভালো পরীক্ষা দিয়েও অনেককে ফেল দেখানো হয়েছে। অনেকের খাতা হারিয়ে যাওয়ায় রেজাল্ট সিটে এনডাব্লিউডি দেখানো হয়েছে।

তারা বলেন, অনেক শিক্ষার্থী একটি পরীক্ষায় খারাপ করলে সে আবারও ফি দিয়ে সেই বিষয়ে ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিতে পারে। কিন্তু ইমপ্রুভমেন্ট পরীক্ষা দিয়ে ভালো নম্বর পেলেও তার চূড়ান্ত ফলে আগের নম্বর যোগ করা হয়েছে। মোট ১৫টি বিষয়ের পরীক্ষা দিলেও কারো একটি, দুইটি বা তিনটি বিষয়ের ফল না দিয়ে তাকে ফেল দেখানো হয়েছে।
বাংলা কলেজের ভুক্তভুগী শিক্ষার্থী সোহেল জাগো নিউজকে বলেন, এমনিতেই তিন বছরের কোর্স শেষ করতে পাঁচ বছর সময়ক্ষেপণ করে আমাদের জীবন থেকে মূল্যবান দুই বছর নষ্ট করা হয়েছে। তার ওপর ভুলে ভরা ফল প্রকাশ করে আমাদের জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।

শিক্ষকদের দায়িত্বহীনতার কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের কাছে গিয়ে অভিযোগ করলেও তিনি তা আমলে নিচ্ছেন না। উল্টো আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছে। কোন সমাধান দেয়া হচ্ছে না। কয়েক হাজার লিখিত অভিযোগ কন্ট্রলার অফিসে জামা হয়েছে। কবে এসব ভুল সঠিক করা হবে তাও বলা হচ্ছে না।

কবি নজরুল ইসলাম কলেজে ইমরান হাসান নামে আরেক শিক্ষার্থী জানান, শেষ বর্ষের প্রায় ৬০ শতাংশ শিক্ষার্থীর রেজাল্টে ভুল রয়েছে। ঢাবি কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালির কারণে ৬৫ থেকে ৭০ শতাংশ শিক্ষার্থীকে ফেল দেখানো হচ্ছে। এখন তা ঠিক না করে উল্টো ঢাবির কন্ট্রোলার ধমক দিয়ে তার রুম থেকে বের করে দিচ্ছেন। তাদের ভুলের কারণে আমাদের জীবনকে অনিশ্চয়তার মধ্যে ফেলে দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষকরা ভুলের মাশুল আমাদের দিতে হচ্ছে। ভালো পরীক্ষা দেয়ার পরও ফেল করায় এখন পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা সহপাঠীদের কাছে মুখ দেখানো যাচ্ছে না।

এদিকে এসব অভিযোগকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না ঢাবির পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরী। পরীক্ষার ফলাফলে ভুলের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভুল হতেই পারে, তা সংশোধন করা হবে। কতো পরীক্ষার ফলেই তো ভুল হয়, এটি ভুল হলে এমন কি হবে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক বলেন, কিছু দায়িত্বহীন শিক্ষক ও কর্মকর্তা ঢাবি’র বড় বড় চেয়ার দখল করে বসে আছেন। তারা নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত নন। অফিসে এসে বিনোদন আর অতিথিদের সঙ্গে খোশ গল্প করে সময় পার করেন। এমন কয়েক ব্যক্তি সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের গিনিপিক বানিয়েছেন। ঢাবিতে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার এক বছর পার হয়ে গেলেও কলেজগুলোকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এখনও কোনো পরিকল্পনা তৈরি হয়নি।

তারা বলেন, বর্তমানে কর্মকর্তাদের দায়িত্বহীনতার দায়ভার শিক্ষার্থীদের নিতে হচ্ছে। অনেক শিক্ষক মনোযোগ দিয়ে খাতা মূল্যায়ণ করছেন না, ভালো পরীক্ষা দিলেও প্রত্যাশিত নম্বর দেয়া হয় না। সাত কলেজ শিক্ষার্থীকে বোঝা মনে করার কারণে পরীক্ষার ফলাফলে এমন চিত্র উঠে আসছে।

এদিকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক আক্তারুজ্জামান। তিনি বলেন, হঠাৎ করে ঢাকার সাত কলেজ অন্তর্ভুক্তের সিদ্ধান্ত ছিল একটি অবৈজ্ঞানিক সিদ্ধান্ত। কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যার মাশুল আমাদের দিতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, ঢাবিতে পাস কোর্স নেই। এ কারণে সাত কলেজের পাস কোর্স তুলে দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে শেষ বর্ষের পরীক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হচ্ছে। বাণিজ্য বিভাগের ফল প্রকাশ করা হয়েছে। আগামী এক মাসের মধ্যে সব বিষয়ের ফল প্রকাশ করা হবে। ফল নিয়ে কারও আপত্তি থাকলে তা লিখিতভাবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে অভিযোগ দিতে বলা হয়েছে। দ্রুতই সব ভুল-ভ্রান্তি সংশোধন করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কার্যক্রম পরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট। হঠাৎ করে চাপিয়ে দেয়ায় সাত কলেজ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা আয়োজন, ফল প্রকাশ ও ভর্তি সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে নানা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। সব কিছু একটি সিস্টেমে আনার চেষ্টা চলছে। আগামী এক বছরের মধ্যে সব কিছুই স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে।

এমএইচএম/এমএমজেড/এমকেএইচ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।