ধরাছোঁয়ার বাইরে বেরোবির ভর্তি পরীক্ষার জালিয়াতি চক্র

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ১২:৫০ পিএম, ২৮ নভেম্বর ২০১৮

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির রহস্য এখনও উদঘাটন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। দীর্ঘ ১১ মাসেও শেষ হয়নি ভর্তি জালিয়াতির তদন্ত কার্যক্রম।

যদিও ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ ‘গুরুত্বপূর্ণ তথ্য’ পাওয়ার দাবি করেছে। তবে এখনও তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত চক্রটি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে।

এরমধ্যে চলতি ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা আগামী ২ থেকে ৫ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। অথচ তদন্তের ধীরগতিতে ভর্তি জালিয়াতি মূল রহস্য এখনও অজানা রয়ে গেছে। ১১ মাসেও তদন্ত কার্যক্রম শেষ না হওয়ায় প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাকে দায়ী করেছেন অনেক শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সূত্র জানায়, গতবছরের ২৬ থেকে ২৯ নভেম্বর ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সাক্ষাৎকার ও ভর্তির জন্য ১৭ ডিসেম্বর নির্ধারিত দিন ছিল। ওই দিন মৌখিক পরীক্ষার বোর্ডে ছয় শিক্ষার্থীর আচরণ সন্দেহজনক মনে হয়। জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির কথা স্বীকার করেন শিক্ষার্থীরা। এরপর তাদের পুলিশে সোপর্দ করা হয়।

এই ছয়জন হলেন ‘বি’ ইউনিটের শামস বিন শাহরিয়ার, রিফাত সরকার ও সাদ আহমেদ, ‘সি’ ইউনিটের আহসান হাবীব ও শাহরিয়ার আল সানি এবং ‘এফ’ ইউনিটের রোকসান উজ্জামান। একই দিন ক্যাম্পাসে সন্দেহজনকভাবে ঘোরাফেরার সময় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকেও আটক করা হয়।

সাক্ষাৎকার চলাকালীন ‘বি’ ইউনিটে প্রথম স্থান অধিকারী শামস বিন শাহরিয়ারের কথাবার্তায় অসংলগ্ন মনে হওয়ায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন দায়িত্বে থাকা দুই শিক্ষক। এক পর্যায়ে এক শিক্ষকসহ একটি ‘আন্টি চক্র’ ভর্তি জালিয়াতির ঘটনায় জড়িত বলে স্বীকার করেন শামস।

ওই দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আবু কালাম মো. ফরিদ উল ইসলাম কোতোয়ালি থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। আটক শিক্ষার্থীদের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে ‘আন্টি চক্রের’ সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে গত ২৯ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারী রাহেল চৌধুরীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গ্রেফতার করা হয়।

অন্যদিকে ২৮ ডিসেম্বর ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতির ঘটনায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আজিজুর রহমানকে তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক, সহকারী প্রক্টর মুহা. শামসুজ্জামানকে সদস্য সচিব, সহকারী প্রক্টর আতিউর রহমানকে সদস্য করে একটি তথ্যানুসন্ধান কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

তথ্যানুসন্ধান কমিটি প্রায় ৯ মাস পর ১৯ সেপ্টেম্বর এ প্রতিবেদন জমা দেন। এর প্রেক্ষিতে ১ অক্টোবর গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. আর এম হাফিজুর রহমানকে আহ্বায়ক, সহকারী প্রক্টর এইচ. এম. তারিকুল ইসলামকে সদস্য সচিব এবং সহকারী প্রক্টর মো. ছদরুল ইসলাম সরকারকে সদস্য করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে প্রশাসন। পরবর্তী সাত কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু এখনও জমা দেয়া হয়নি তদন্ত প্রতিবেদন।

অপরদিকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ভর্তি জালিয়াতিতে শনাক্তের অডিও প্রকাশ করায় ওই সময়ে লোকপ্রশাসন বিভাগের দুই শিক্ষককে ভর্তি কার্যক্রম থেকে বাদ দেয়া হয়। ভর্তির ঘটনা উন্মোচনকারী এই দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেই তদন্তে গড়িমসি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভর্তি কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি পাওয়া দুই শিক্ষকের একজন লোকপ্রশাসন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল জাগো নিউজকে বলেন, ভর্তি জালিয়াতির বিষয়টি সুস্পষ্ট। কিন্তু তদন্ত কমিটি জালিয়াতির ঘটনা উন্মোচনকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তৎপর দেখা যাচ্ছে না। যার ফলে ভর্তি জালিয়াতি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আদৌ তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্দে ব্যবস্থা নেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া গেলে এই প্রবণতা আরও বাড়বে।

কথা বললে ভর্তি জালিয়াতি তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব এইচ. এম. তারিকুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ভর্তি জালিয়াতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের সম্পৃক্ততার প্রমাণ মেলেনি। বাইরের একটি চক্র জালিয়াতির সঙ্গে জড়িত। তবে এই চক্রের বিষয়ে তদন্তে শাস্তিমূলক কোনো সুপারিশ থাকছে না। মামলা চলমান থাকায় বিষয়টি রাষ্ট্রীয়ভাবে দেখা হচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই এ প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে। তদন্তের এ পর্যায়ে ভর্তি জালিয়াতির প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের অডিও প্রকাশ করার মাধ্যমে উদ্দেশ্যমূলকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং একজন শিক্ষকের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক মুহিব্বুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, মামলার তদন্ত প্রক্রিয়া এখনও চলমান রয়েছে।

এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাবিউর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, আশা করছি তথ্যানুসন্ধান ও তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে ভর্তি জালিয়াতির মূল রহস্য উদঘাটন হবে।

সজীব হোসাইন/এফএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।