‘নিজেকে মানুষ মনে করি’
তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মী নূরমালা নীলা। গণবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন। কথা হয় তার সঙ্গে। জানালেন তার অনুভূতি।
বলছিলেন, আমাদের ‘হিজড়া’ বলে সম্বোধন করা হয়। এতে কষ্ট পাই। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি আমি সমাজের অন্যদের থেকে আলাদা, তখন থেকেই অবহেলা তিরস্কার, যৌন হয়রানির শিকার হয়েছি।
এই নীলা গত অক্টোবরে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে কাজের সুযোগ পান। কিন্তু এ কাজে যোগ দেয়া নিয়ে তার সংশয় ছিল। তিনি ভেবেছিলেন এই কর্ম ক্ষেত্রে তাকে নির্যাতনের শিকার হতে হয় কি-না। কিন্তু চাকরিতে যোগ দিয়ে তার ধারণা পাল্টে যায়।
এ প্রসঙ্গে নূরমালা নীলা বলেন, যখন আমাকে স্যারদের পক্ষ থেকে এখানে (গণবিশ্ববিদ্যালয়ে) আসতে বলা হয়েছিল তখন আমি রাজি হইনি। ভেবেছিলাম, এমন একটি জায়গায় হয়ত আমাকে নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হবে। কিন্তু এখানে আসার পর থেকে ধারণা পাল্টাতে থাকে। আমিও স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। আমি আমার সঙ্গে অন্যদের (তৃতীয় লিঙ্গেল) এখানে আসার জন্য বলি। আমি আর নিজেকে ছোট মনে করি না এখন বরং একজন মানুষ মনে করি।
বামে নীলা, মাঝে সুমনা এবং ডানে আঁখি
আমাদের সমাজের প্রতিটি স্তরেই অবহেলিত তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। সমাজবিচ্ছিন্ন ও অবহেলিত এই জনগোষ্ঠীকে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসতে কাজ করছে গণবিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর ধারাবাহিকতায় নতুন করে তৃতীয় লিঙ্গের আর দুজন নিরাপত্তাকর্মীকে নিয়োগ দিয়েছে প্রশাসন।
রোববার (১১ নভেম্বর) নিয়োগ দেয়া তৃতীয় লিঙ্গের এই দুজন হলেন সুমনা ও আঁখি। তারা দুজনই সাভারের পল্লীবিদ্যুৎ এলাকার হিজড়া জনগোষ্ঠীর সদস্য ছিলেন।
তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবেন। এমন উদ্যোগে শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর কাছেও প্রশংসিত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এর আগে গত অক্টোবর নূরমালা নীলা নামে একজন তৃতীয় লিঙ্গের আরেকজনকে নিরাপত্তা কর্মী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এ নিয়ে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মীর সংখ্যা হলো তিনজন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে তারা
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যেন সমাজের বোঝা হিসেবে নিজেদের গণ্য না করেন, সমাজের বাকি সাধারণ মানুষের ন্যায় সব কাজ করার অধিকার রয়েছে তাদেরও। সেই সুযোগ করে দেয়ার জন্যই আমাদের এরূপ উদ্যোগ। তারা স্বাভাবিকভাবে সমাজে যেন বসবাস করতে পারেন, তাই আমাদের এমন উদ্যোগ।
তৃতীয় লিঙ্গের নিরাপত্তাকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের মধ্যে সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করেছেন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক সাকিনা আক্তার।
তিনি বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষগুলো আমাদের সমাজে যেভাবে অবহেলিত ও অপমানিত হন, তা সভ্য মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার। আমরা শুধু তাদের তিরস্কারই করি, কিন্তু কখনো সামান্য কাজের সুযোগ করে দেই না। কিন্তু এটা সত্য, সুযোগ পেলে, তারা আমাদের মতোই কাজ করার যোগ্যতা রাখেন।
জেডএ/পিআর