রাবিতে শিক্ষার্থীকে জিম্মি করে টাকা নিলো ছাত্রলীগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে আবাসিক হলে জিম্মি করে বিশ হাজার টাকা আদায় করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতাসহ স্থানীয় এক শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের ১৯১ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
এ দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নিতে না দেখা গেলেও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে শুক্রবার রাত ৮টার মধ্যে টাকা উদ্ধার করে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
ভুক্তভোগী আল ফারুক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মেহেরচণ্ডি এলাকার এক মেসে থাকেন।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাফিউর রহমান শাফি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক ও ফারসি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং নাইম ইসলাম ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তবে নাইম ছাত্রলীগের কেউ না বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী ফারুক জানায়, গত দুইদিন আগে থেকে আমার বিভাগের বড় ভাই নাইম আমাকে বলে আসছে, আমাকে সোহরাওয়ার্দী হলের বড় ভাইদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেবেন তিনি। আমি বললাম, আমার পরীক্ষা চলছে, আমি যেতে পারবো না। পরে আজ (বৃহস্পতিবার) সন্ধ্যায় জোর করলে আমি তার সঙ্গে এই হলে আসি। হলে আসা মাত্রই আমাকে ১৯১ নম্বর কক্ষে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়ে শাফিন বলে, তোর ফোনটা দে। পরে ফোন নিয়ে ফেসবুক লগ ইন করে বলে, তুই শিবির করিস, তুই এই পেজে লাইক দিছোস। আমি শিবির করি না, এটা তাদেরকে বলি। তারা আমাকে মারতে থাকে। চড়-থাপ্পড় মারে। একপর্যায়ে রড দিয়েও পিঠে আঘাত করে। পরে একপর্যায়ে সেখান থেকে বাঁচতে হলে ৫০ হাজার টাকা দিতে হবে বলে দাবি করে। পরে আমি আমার বাবাকে ফোন দিই। বাবা ১০ হাজার টাকা পাঠায় এবং আমার বড় ভাই ১০ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে পাঠায়। তারা পরে আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলে, এই কথা যদি বলিস, তবে তোর খবর আছে।
এ ঘটনার পর রাত ১১টার দিকে সাংবাদিকদের ফোনে ঘটনাস্থল শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে আসেন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। ওই হলের গেস্টরুমে আল ফারুকসহ সাংবাদিকদের সঙ্গে বসেন। পরে টাকা পাঠানোর বিকাশ নম্বরে ফোন দিয়ে নিশ্চিত হন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু।
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা শাফিন ঘটনা বিষয়টি প্রথমে অস্বীকার করে বলেন, আমাকে ফাঁসানো হচ্ছে। আমি টাকার কোনো খবর জানি না। কিন্তু একটু পরেই সাংবাদিকদের নানা প্রশ্নের জবাবে সব স্বীকার করে নেয় এই নেতা। তিনি বলেন, সব টাকা নাইমের কাছে।
ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু ২০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, আগে টাকা উদ্ধার করতে হবে। টাকা তো নাইমের কাছে। নাইম ছাত্রলীগের কেউ না। কাল (শুক্রবার) রাত ৮টায় এ হলের এখানেই ফারুকের ২০ হাজার টাকা আপনাদের (সাংবাদিকদের) উপস্থিতিতে দেয়া হবে। আর নাইমের বিরুদ্ধে অপহরণ বা অন্য কোনো মামলা দায়ের করা হবে বলে তিনি জানান।
এদিকে এ ঘটনায় শাফি কেন এই ধরনের কর্মকাণ্ড তার কক্ষে স্থান দিলো সেই মর্মে তাকে শোকজ করা হলো এবং সাত দিনের মধ্যে জবাব দেয়ার জন্য বলা হয়।
এছাড়া ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী আল ফারুককে হলে আবাসিকতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং সাংবাদিকরা ফারুকের পাশে দাঁড়ানোয় তাদের প্রতি কৃতজ্ঞা প্রকাশ করেন তিনি।
এ দিকে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমানের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ঘটনাস্থলে আসেননি। এমনকি শিক্ষার্থীর নিরাপত্তার বিষয়ে জানালেও দায়িত্ব নিতে চাননি বলে অভিযোগ করেন হলের শিক্ষার্থীরা।
জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি ওই ছেলেকে (ফারুক) ফোন দিয়েছি সকালে। তার পরিবারের বাবার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি। আর যেহেতু অভিযুক্তদের পাওয়া গেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে আইন অনুযায়ী। তবে এ ঘটনায় প্রক্টরের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মরত সাংবাদিকরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, আমরা জানার আগে আমাদের প্রক্টরকে ঠাকুরগাঁও জেলা সমিতির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। তবে প্রক্টর জেনেও কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে আমরা ১১টার দিকে ফোন দিলেও তিনি আসেননি। এটা তার দায়িত্বে অবহেলা নিঃসন্দেহে।
ফারুককে ছেড়ে দেয়ার পর আপনি বা আপনার প্রশাসন কেউ আসেনি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে প্রক্টর বলেন, তখন রাত অনেক ছিল। আমার আসা হয়তো সম্ভব হয়নি। তবে আমার যোগাযোগ ছিল অন্যদের সঙ্গে। হয়তো দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ তাদের চোখে পড়েনি, তাই তারা একটু ক্ষোভে আছে হয়তো। কিন্তু আমার সব ধরনের ব্যবস্থাই ছিল।
সালমান শাকিল/এমএএস/এমএস