বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি
প্রস্তাবিত অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো বাতিল এবং স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে তিন ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। এ কর্মবিরতি চলাকালে ঢাবি শিক্ষকদের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
রোববার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত এ কর্মবিরতি পালন করেন শিক্ষকরা। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এ কর্মসূচির আহ্বান করে।
কর্মবিরতির ফলে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস বন্ধ ছিল। তবে পূর্ব ঘোষিত পরীক্ষাগুলো যথা সময়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন এর সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল।
এ দিকে কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাবে এই কর্মসূচি পালন করেন তারা।
ঢাবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী আমরা এই কর্মসূচি পালন করেছি। আমি সকাল থেকে দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েরও খবর নিয়েছি। ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আমাদের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করছেন। তারা তাদের দাবি আদায়ের জন্যে শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করেছেন।’
ঢাবি প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম আমজাদ আলী জানান, এটা শুধু আমাদের বেতন কাঠামো পুনঃনির্ধারণের আন্দোলন নয়। এটি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সম্মান রক্ষারও আন্দোলনও।’
প্রসঙ্গত, গত ১১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সাধারণ সভায় এই কর্মসূচির ঘোষণা দেয়া হয়। এসময় সভায় ফেডারেশনভুক্ত ৩০টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় ১৬ আগস্ট থেকে ২০ আগস্ট পর্যন্ত স্ব স্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে মুক্তমঞ্চ স্থাপন করে উল্লিখিত দাবির পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগৃহীত স্বাক্ষর ২০ আগস্ট ফেডারেশনের মহাসচিব বরাবরে জমা দেয়ার এবং পরবর্তীতে তা সরকারের উচ্চমহলে উপস্থাপন করার সিদ্ধান্ত জানানো হয়।
চলতি মাসের পরবর্তী প্রতি রোববার অর্থাৎ ২৩ ও ৩১ আগস্ট সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ৩ ঘণ্টা ফেডারেশনভুক্ত সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কর্মবিরতি পালন করার ঘোষণা দেওয়া হয়।
এছাড়া সভায় শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি উপেক্ষা করে অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামো ঘোষণা করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জাতীয় সম্মেলন ডেকে লাগাতার কর্মবিরতিসহ কঠোর আন্দোলন কর্মসূচির হুমকি দেওয়া হয়।
এছাড়া সভায় ৪ দফা দাবি উত্থাপিত হয়। দাবিগুলো হল : অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন করে একটি বেতন কমিশন গঠন করতে হবে।
শিক্ষকদের জন্য নতুন বেতন কাঠামো প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মধ্যবর্তী সময়ে ঘোষিত বেতন কাঠামো পুনঃনির্ধারণ করে সকল বৈষম্য দূরীকরণপূর্বক সিলেকশন গ্রেড অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা সিনিয়র সচিবের সমতুল্য করা, যদি অষ্টম বেতন কাঠামোতে প্রস্তাবিত পদটি (সিনিয়র সচিব) রাখা হয়; অধ্যাপকদের বেতন-ভাতা পদায়িত সচিবের সমতুল্য করা; সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষকদের বেতন কাঠামো ক্রমানুসারে নির্ধারণ করাসহ শিক্ষকদের যৌক্তিক বেতন স্কেল নিশ্চিত করতে হবে।
রাষ্ট্রীয় ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-এ তাদের প্রত্যাশিত বেতন কাঠামো অনুযায়ী পদমর্যাদাগত অবস্থান নিশ্চিত করতে হবে।
প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরূপ গাড়ি ও অন্যান্য সুবিধা শিক্ষকদের ক্ষেত্রেও নিশ্চিত করতে হবে।
এমএইচ/এসএইচএস/এমআরআই