বহুদূর যেতে চান সম্পা
নম্র, ভদ্র, বিনয়ী। পড়াশোনায়ও অতুলনীয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাজীবনে কৃতিত্বস্বরূপ অর্জন করেছেন ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক’। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গেও জড়িত আছেন। ছোটবেলায় গান করতেন, খেলাধুলায়ও পারদর্শী ছিলেন। এ ক্ষেত্রে রয়েছে তার জাতীয় ও স্থানীয় কিছু অর্জন। তার স্বপ্নের পেশা শিক্ষকতা। অবদান রাখতে চান দেশের কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নে। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যেতে চান আরও বহুদূর।
বলছিলাম- আসমা ইয়াসমিন সম্পার কথা। রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শেকৃবি) এগ্রিবিজনেস ম্যানেজমেন্ট অনুষদের কৃষি অর্থনীতি বিভাগ হতে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন তিনি। স্নাতকে সিজিপিএ ৩.৮৭ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়েছেন। বর্তমানে একই বিভাগে মাস্টার্স করছেন।
সম্পার শিক্ষাজীবন বরাবরই কৃতিত্বময়। ২০০২ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে সাধারণ ও ২০০৫ সালে অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পান তিনি। ২০০৮ সালে ঝিটকা পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পান। ২০১০ সালে হলি ক্রস কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায়ও লাভ করেন জিপিএ-৫। ২০১৮ সালে অর্জন করেন শিক্ষাজীবনের কৃতিত্বের সবচেয়ে বড় অর্জন ‘প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক- ২০১৭’।
পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকে গানের প্রতিও ছিল তার গভীর আবেগ ও আগ্রহ। ২০০৬ সালে উপজেলা পর্যায়ে জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় দেশাত্মবোধক সংগীতে প্রথম ও নজরুল সংগীতে দ্বিতীয় হন তিনি। একই বছরে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি মানিকগঞ্জ শাখা কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় শিশু পুরস্কার প্রতিযোগিতায় জেলা পর্যায়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেন তিনি।
জীবনের বিভিন্ন অর্জন সম্পর্কে সম্পার সঙ্গে কথা হয় জাগো নিউজের। সম্পা বলছিলেন, আমার জীবনের সেরা অনুপ্রেরণা আমার বাবা। এই মানুষটার জন্যই আজ আমি এখানে আসতে সক্ষম হয়েছি।
কী স্বপ্ন দেখেন? প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পদক গ্রহণের সময় একজন নারী হিসেবে তার মতো সফল নারী হওয়ার স্বপ্ন দেখি।
সম্পার একটা আপসোস রয়েছে। তিনি বলছিলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার চাপ ও পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে গানে পরবর্তীতে তেমন সময় দিতে পারিনি। এ জন্য এখন একটু আফসোস হয়।
সম্পার পৈতৃকনিবাস মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার ঝিটকা নতুন পাড়া গ্রামে। বাবা মো. আকতার হোসেন মিঞা স্থানীয় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক এবং মা পারভীন আক্তারও স্থানীয় একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা। বাবা-মায়ের দুই ছেলেমেয়ের মধ্যে সম্পা বড়।
সাফল্য অর্জন সম্পর্কে জানতে চাইলে সম্পা বলেন, সাফল্য অর্জনের জন্য অধ্যাবসায়ের কোনো বিকল্প নেই। লক্ষ্যকে সামনে রেখে একাগ্রচিত্তে অনুশীলনের পাশাপাশি সকলের প্রতি বিনয়ী ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া উচিত। সর্বদাই একটা কথা মনে রাখতে হবে ‘বড় যদি হতে চাও, ছোট হও তবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকাটাও জরুরি। এতে নেতৃত্বের গুণাবলি বিকশিত হয়। একাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি দেশ-বিদেশের খবরাখবরও রাখতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সব নম্বর ফাইনালের সঙ্গে যুক্ত হওয়ায় রেজাল্ট ভালো করতে প্রতিটা ক্লাসটেস্ট, কুইজ, অ্যাসাইনমেন্ট, প্রেজেন্টেশন সবকিছুকেই সমানভাবে গুরুত্ব দিতে হবে।
কোন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান? সম্পা জানালেন, মা-বাবা শিক্ষক এবং আমিও ছোটবেলা থেকেই একজন আদর্শ শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখি। অর্জিত জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে আলোকিত জাতি গঠনে অবদান রাখতে চাই। উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে শিক্ষা ও গবেষণায় অনন্য অবদান রাখতে চাই। অবদান রাখতে চাই দেশের কৃষি অর্থনীতির উন্নয়নে। তার স্বপ্ন পূরণে তিনি সকলের নিকট দোয়াপ্রার্থী। জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে যেতে চান আরও বহুদূর।
মো. রাকিব খান/জেডএ/এমএস