স্বীকৃতির সঙ্গে প্রত্যয় নেয়ার দিন শনিবার
রেডি ওয়ান, টু, থ্রি- বলতেই একযোগে কালো হ্যাট আকাশে ছুড়ে দেয়া। সঙ্গে লাফিয়ে ওঠা। যেন আকাশে ওড়ার চেষ্টা। দীর্ঘ পরিশ্রম ও ব্যস্ততাকে ছুড়ে দিয়ে শনিবার যেন মুক্ত আকাশে ওড়ার দিন। আত্মবিশ্বাসের কাছে ব্যর্থতার পরাজয়ে ইতিহাস লেখার দিন। দেশসেরা বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্বিবিদ্যালয় থেকে গ্র্যাজুয়েশনের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পাওয়ার সঙ্গে দেশ গড়ার প্রত্যয় নেয়ার দিন।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এ স্বীকৃতি দেবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে অনুষ্ঠিত হবে এই ৫১তম সমাবর্তন। রেকর্ডসংখ্যক গ্র্যাজুয়েটের অংশগ্রহণে এবার প্রাণের উচ্ছ্বাসের দেখা মিলবে।
এই সমাবর্তন অনুষ্ঠানের বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই দেখা যায়, গ্র্যাজুয়েটদের ব্যস্ততা। গত ৩ অক্টোবর কস্টিউম হাতে পাওয়ার পর থেকেই ক্যাম্পাস জীবনের শেষ সময় রঙিন ক্যামেরার ফ্রেমে বেঁধে রাখছেন গ্র্যাজুয়েটরা। তাইতো কখনো টিএসসি, কখনো কার্জন হল, কখনো বা কলা ভবন, মল চত্বর কিংবা সিনেট ভবনে। বাদ যাইনি ভিসি চত্বর, স্বাধীনতা সংগ্রাম ভাস্কর্য, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, শহীদ মিনার, এফবিএসসহ অন্য এলাকাগুলোও। দিন শেষে প্রিয় হলে। সকাল-দুপুর-বিকেল ছাড়িয়ে রাত অবধি ছোটাছুটি। সব জায়গায় চষে বেড়ানো। নিজেদের শেষ স্মৃতিস্বরূপ বন্ধুদের নিয়ে ক্যামেরাবন্দি হচ্ছেন নানা রঙে, নানা ঢঙে। চলছে খুনসুটিও।
ছবির তোলার ঢঙেও বেশ বৈচিত্রতা দেখা গেছে, এই যেমন- হতাশ গ্র্যাজুয়েটের বেশে, ভুতুড়ের বেশে, ভিক্ষা করার বেশে ছবি তুলেছেন অনেকে। কেউ আবার লুঙ্গি পরে গায়ে জড়িয়েছেন গাউন, মাথায় দিয়েছেন হ্যাট- এরপর ঘুরে বেড়াচ্ছেন। সুপারম্যানের সাজেও ক্যামেরার সামনে আসছেন গ্র্যাজুয়েটরা। আবার গ্র্যাজুয়েট দম্পতিরা হ্যাটের আড়ালে মুখ লুকিয়ে কী যেন করছেন।
অনেকে মা-বাবাকে নিয়ে এসেছেন ক্যাম্পাসে। মা-বাবাকে নিজের গাউন ও হ্যাট পরিয়ে দিয়ে তুলছেন ছবি। আবেগাপ্লুত অনেক বাবা-মা সন্তানের সাফল্যে অশ্রুও ফেলেছন।
গ্র্যাজুয়েটরা সময় করেই আবার ছুটে যাচ্ছেন শিক্ষকদের কাছে। প্রিয় শিক্ষকদের সঙ্গে নিজের শেষ স্মৃতিস্বরূপ তুলছেন ছবি। গত পাঁচ বছর যে ক্লাসগুলোতে সময় কাটিয়েছেন সেসব ক্লাসে গিয়েও ছবি তুলেছেন অনেকে।
সিনেট ভবনের সামনে কথা হয় নুসরাত জাহান নামে এক গ্র্যাজুয়েটের সঙ্গে। তিনি বলেন, এটা অন্যরকম ভালো লাগা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যে স্বপ্ন ছিল, আল্লাহ সেটি কবুল করেছিলেন বলে গ্র্যাজুয়েট হতে পেরেছি। এটা আমার ও আমার পরিবারের জন্য অনেক বড় অর্জন। তবে এ স্বীকৃতি শুধু স্বীকৃতি না, এর মধ্য দিয়ে আমাদের ওপর অর্পিত হতে যাচ্ছে অনেক বড় দায়িত্বও। নিজের সামর্থের সবটুকু দিয়ে ভবিষ্যতে দেশের জন্য কাজ করে যাবো।
উল্লেখ্য, ৫১তম সমাবর্তনে অংশগ্রহণের জন্য ২১ হাজার ১১১ জন গ্র্যাজুয়েট রেজিস্ট্রেশন করেছেন। এই সংখ্যা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তনের ইতিহাসে সর্বাধিক। অনুষ্ঠানে কৃতী শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ৯৬টি স্বর্ণপদক, ৮১ জনকে পিএইচডি এবং ২৭ জনকে এমফিল ডিগ্রি দেয়া হবে। সমাবর্তনে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সভাপতিত্ব করবেন। এবারের সমাবর্তনে সমাবর্তন বক্তা থাকবেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান। অধিভুক্ত সাত কলেজের রেজিস্ট্রেশনকৃত গ্র্যাজুয়েটরা ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে ঢাকা কলেজ ও ইডেন মহিলা কলেজ ভেন্যু থেকে সরাসরি সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।
এমএইচ/জেডএ/পিআর