ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে সুচিন্তার জঙ্গিবাদবিরোধী সেমিনার
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে তরুণদের মনোজগৎ জাগ্রতকরণ ও জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রায় এক বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সেমিনার করে আসছে সুচিন্তা ফাউন্ডেশন।
শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ‘জাগো তারুণ্য রুখো জঙ্গিবাদ’ শিরোনামে সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের জঙ্গিবাদবিরোধী কার্যক্রমের এবারের সেমিনারটির আয়োজন করা হয়েছিল রাজধানীর মিরপুরের ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটিতে।
অনুষ্ঠানে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নেত্রকোনা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ইফতিকার উদ্দিন তালুকদার পিন্টু। তিনি বলেন, পবিত্র কোরআনে সবথেকে বেশি নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে মিথ্যা বলা থেকে। কারণ এই মিথ্যা থেকেই সকল অপরাধের সৃষ্টি। আর এই মিথ্যা থেকে সৃষ্ট বৈশ্বিক একটি আতঙ্কের নাম জঙ্গিবাদ।
কতিপয় গোষ্ঠী, ধর্মের নামে তরুণদের মিথ্যা ধর্মীয় ভীতি ও প্রলোভন দেখিয়ে তাদের উদ্দেশ্য হাসিল করছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার এক বন্ধুর ছেলে, ওর বাবা মারা যাবার পর আমার কাছে নিয়মিত আসত। অত্যন্ত মেধাবী ছিল ছেলেটি। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা শেষ করে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যোগ দিলো। তারপর ধীরে ধীরে আমার সঙ্গে যোগাযোগ কমে গেল।
আগে মাসে চার বার দেখা হত, পরে দুই মাসে এক বার দেখা হত। এরই মধ্যে ছেলেটির নানা পরিবর্তন লক্ষ্য করতে লাগলাম। তার সব কথার মধ্যেই ‘বেহেশত’ শব্দটা বার বার উঠে আসতে শুরু করছিল। শেষবার ছেলেটি যখন আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল তখন দেখলাম তথাকথিত ইসলামি লেবাস। আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, রোজা রাখি। কিন্তু ওর আচরণ আমার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছিল না। কিছুদিন জঙ্গিবাদ নিয়ে চারদিকে যখন নানা উত্তেজনা, টেলিভিশনগুলোতে প্রচার করা হচ্ছে নিখোঁজ যুবকদের নাম পরিচয়। সেখানে দেখলাম আমার বন্ধুর ছেলের নাম।
আর ফিরে আসল না ছেলেটি। বেহেশতে’র লোভে জঙ্গি হামলা করতে গিয়ে জীবন উৎসর্গ করেছে। সত্যিকার ইসলাম কী আমাদের এই শিক্ষা দেয়?
আজকে যারা ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করছে, অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলতা করছে এরা কেউই প্রকৃত মুসলিম হতে পারে না। কারণ ইসলামে নরহত্যা, গুপ্তহত্যা, অপহরণ প্রভৃতি চরমপন্থা অবলম্বনকে নিষিদ্ধ করে হত্যাকাণ্ড থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। যোগ করেন এই সাংসদ।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নানা অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাখেন নেত্রকোনার এই সাংসদ। নিজের জীবন সংগ্রামের অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে বলেন, ইন্টারমিডিয়েট পাস করার পর নিজের পরিচয়ে বড় হবার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকা আসি মাত্র ১৮৬ টাকা হাতে নিয়ে। কোন আত্মীয় বাড়ি উঠিনি, উঠেছিলাম বন্ধুর হলে। জীবনের প্রথম চাকরি গামেন্টে, বেতন ছিল ৪৫০ টাকা। সেই গামেন্ট সেক্টর থেকে সবশেষ এক লাখ ত্রিশ হাজার টাকা বেতন উত্তোলন করেছি।
আলোচনা শেষে সুচিন্তার গবেষণা সেলের আশরাফুল আলম শিক্ষার্থীদের জঙ্গিবাদ ও ইসলামে মানবহত্যা নিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন করেন, শিক্ষার্থীরা স্বজোরে সেগুলোর উত্তর দেয়।
অনুষ্ঠানে জঙ্গিবাদের ইতিহাস ও ধর্মীয় নানা ব্যাখ্যা শিক্ষার্থীদের উদ্দ্যেশে তুলে ধরেন ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটির সিইসি বিভাগের চেয়ারম্যান ওবাইদুর রহমান ও মিরপুর যুবলীগের সাজ্জাদুর রহমান রাসেল। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন আজ সারাবেলার সম্পাদক জববার হোসেন।
এমআরএম/জেআইএম