রাবিতে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভবনগুলোতে উঠতে নেই র্যাম্প (গাড়ি ওঠা-নামার পথ), নেই লিফটের ব্যবস্থাও। শিক্ষা উপকরণগুলো প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীবান্ধব নয়। লাইব্রেরিতে নেই রেকর্ডিং বই। চিকিৎসাকেন্দ্রে উঠতেও ঝামেলা পোহাতে হয়। প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বার বার প্রশাসনকে বলা হলেও এ বিষয়ে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে না।
বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) জানায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০। যাদের মধ্যে প্রায় ৩০ জন রয়েছেন যাদেরকে হুইল চেয়ারের ওপর নির্ভর করতে হয়। তবে ভবনগুলো হুইল চেয়ার উপযোগী না হওয়ায় অনেকে স্কেচে ভর দিয়ে চলেন। যাদের ক্লাস ২য়, ৩য় বা ৪র্থ তলায় হয় তারা অধিকাংশ সময় উপরে উঠতে সঙ্গী না পাওয়ায় ক্লাসে অংশগ্রহণ করতে পারেন না।
ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জামাল উদ্দিন বলেন, হুইল চেয়ার আছে। তবে ক্লাস করতে গিয়ে চেয়ার নিয়ে ভবনে ওঠার পরিবেশ নেই। তাই স্কেচে ভর দিয়ে চলাচল করি। কিন্তু ক্লাস ২য় তলায় হলে অনেক সময় নিচ তলায় গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। সহপাঠীদের সহায়তা না পেলে সেদিন ক্লাস করা সম্ভব হয় না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক, লাইব্রেরি, আবাসিক হল, চিকিৎসাকেন্দ্রসহ মোট ভবনের সংখ্যা প্রায় ৩২টি হলেও ভবনগুলো নির্মাণের সময় প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীবান্ধব করা হয়নি।
এদিকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের ভোগান্তির কথা জানিয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাকিল বলছিলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্রেইল সিস্টেমের বই না থাকলেও লাইব্রেরিতে রেকর্ডিং পাওয়া যায়। কিন্তু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে লাইব্রেরি বা কোনো বিভাগেই রেকর্ডিং পাওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, পরীক্ষার সময় ভোগান্তি পোহাতে হয় শ্রুতিলেখক নিয়ে। অধিকাংশ সময় শ্রুতিলেখক পাওয়া যায় না। শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে শ্রুতিলেখক হতে চায় না। ওই সময়গুলোতে পরীক্ষা দেয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয় চিকিৎসাকেন্দ্রে ওঠার জন্যও আলাদা কোনো ব্যবস্থা নেই। আবাসিক হলগুলোর শৌচাগারও প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীবান্ধব নয় বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের (পিডিএফ) সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির বলেন, ভর্তি পরীক্ষার সময় এমন পরিস্থিতি হয় যে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা দেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আলাদা কোনো ব্যবস্থা থাকে না। এতে শিক্ষার্থীরা ভবনের গেট থেকেই চলে যায়। গত বছরও পরীক্ষার সময় দুইজন শিক্ষার্থীকে চলে যেতে দেখেছি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা বলেন, প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত দাবির প্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
আরএআর/এমএস