এশাকে লাঞ্ছনা : এবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও ছাত্রীদের শোকজ

ফাইল ছবি

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনের মধ্যে গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলে সংগঠিত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য বেশ কয়েকজন ছাত্রীকে অভিযুক্ত করে এবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও শোকজ করা হয়েছে।

প্রক্টরের স্বাক্ষরিত এই শোকজ নোটিশে তাদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে।

এদিকে বার বার শোকজ করায় হলটির সাধারণ ছাত্রীদের মধ্যে চাপা আতঙ্ক বিরাজ করছে। হয়রানির আশঙ্কা করছেন অনেকে।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরের বলেন, ‘কারও আতঙ্কিত হওয়ার কারণ নেই। যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি রিপোর্ট দিয়েছে কেবল তাদের শোকজ নোটিশ দেয়া হয়েছে।’

নোটিশে বলা হয়, ‘গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে আপনি কবি সুফিয়া কামাল হলের আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে পরিকল্পিতভাবে মিথ্যা, অসত্য রটনা ও গুজব ছড়িয়েছেন যে, উক্ত হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ইফফাত জাহান এশা, মুর্শিদা আক্তার নামক একজন আবাসিক ছাত্রীর রগ কেটে দিয়েছে এবং তাকে মারধর করেছে। আপনি অন্যান্য আবাসিক ছাত্রীদের মধ্যে বিভ্রান্তিকর তথ্য পরিবেশন করেছেন ও তার আলোকচিত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছেন। আপনার এ ধরণের পূর্বপরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র ও প্রচারণা হলের ছাত্রীদের ভীষণভাবে উত্তেজিত ও আতঙ্কিত করে। তাছাড়া, আপনি পূর্ব পরিকল্পনা অনুসারে সংঘবদ্ধ হয়ে ইফফাত জাহান এশাকে মারধর ও লাঞ্ছিত করেন এবং জোরপূর্বক ইফফাত জাহান এশার গলায় জুতার মালা পরিয়ে দেন এবং তার বস্ত্রহরণ করেন।’

এতে আরও বলা হয়, ‘উক্ত অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গঠিত তদন্ত কমিটি ঘটনার সঙ্গে আপনার জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে। একজন শিক্ষার্থী কর্তৃক এ ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত কার্যকলাপ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ও মর্যাদাকে ভীষণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে যা বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা ও আইনের সুস্পষ্ট পরিপন্থী।'

এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় শৃঙ্খলা পরিষদ ও সিন্ডিকেটের সুপারিশ মোতাবেক কেন অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে না- নোটিশে তাও জানতে চাওয়া হয়েছে। নোটিশ প্রাপ্তির দুই সপ্তাহের মধ্যে উত্তর না দিলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে শাস্তি হয়ে যাবে বলে এতে উল্লেখ করা হয়।

নোটিশপ্রাপ্ত এক ছাত্রী নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, ‘বার বার এ ধরণের শোকজ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের হয়রানি করতে চাচ্ছে।’ তিনি দাবি করেন, ওই ঘটনায় তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন না।

হলটির আরেক আবাসিক ছাত্রী বলেন, ‘১০ এপ্রিল রাতে এশার সঙ্গে যে ধরণের আচরণ করা হয়েছে সেটি যেমন কাম্য নয়, ঠিক তেমনি এশার অপকর্মকেও ভুলে যাওয়া ঠিক নয়। এশা সেদিন রগ কাটেনি ঠিক আছে, তবে সেদিনসহ নিয়মিতই এশা ছাত্রীদের নির্যাতন করতো। যার ক্ষোভ প্রকাশিত হয়েছে ওই দিন।’

ছাত্রীদের নোটিশ দেয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ এর যুগ্ম-আহ্বায়ক রাশেদ খান বলেন, ‘সেদিন দুই পক্ষের মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। একটি পক্ষ আন্দোলনে যেতে বাধা ও ছাত্রীদের নির্যাতন করায় অন্যরা প্রতিবাদ করেছে। তবে সেখানে কিছু অনাকাঙিক্ষত ঘটনা ঘটেছে। এটি ভুল বোঝাবুঝি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে সিদ্ধান্ত নেয়ায় সেটি আরও বেড়েছে। তাই আমি বলবো- এখন এসব নোটিশ দিয়ে কাউকে যেন হয়রানি না করা হয়। কারণ তাতে ঝামেলা হতে পারে। কর্তৃপক্ষের কোনো ধরণের সিরিয়াস সিদ্ধান্তের দিকে না যাওয়াই উচিত। উভয় পক্ষকে ক্ষমা করে দেয়া উচিত।’

উল্লেখ্য, গত ১০ এপ্রিল মধ্যরাতে সুফিয়া কামাল হল ছাত্রলীগের সভাপতি ইফফাত জাহান এশা কর্তৃক কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী ছাত্রীদের নিজ কক্ষে নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। এরই মধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মোর্শেদা খানমের রগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এরপর উত্তেজিত ছাত্রীরা ইফফাত জাহান এশাকে লাঞ্ছিত করে।

অপরাধ স্বীকার করায় ও বেশ কয়েক দিক থেকে রগ কাটার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন দাবি করে তাৎক্ষণিকভাবে এশাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান ও প্রক্টর অধ্যপক ড. গোলাম রব্বানী। কিন্তু পরবর্তীতে উল্টো এশাকে লাঞ্ছনার অভিযোগ এনে ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করে।

এমএইচ/এমবিআর/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।