রাবিতে হলে না থেকেও ভাড়া দিতে হচ্ছে অনেক শিক্ষার্থীকে

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০৪:৫৭ পিএম, ১৩ মে ২০১৮

ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনগুলোর সিট বাণিজ্যে প্রতি বছর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে সিট বরাদ্দ দিতে পারছে না কর্তৃপক্ষ। এতে প্রতি বছরই বড় অংকের আর্থিক ক্ষতিতে পড়ছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। তবে এনিয়ে মাথা ব্যথা নেই হল ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের। দীর্ঘদিনের ক্ষতি পূরণে কৌশলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকেই আদায় হচ্ছে এ অর্থ।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেদের ১১টি আবাসিক হলে মোট সিট ৫ হাজার ১৯০টি। অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের দখলে রয়েছে প্রায় ৬৩৭টি সিট। এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থীদের সিট প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় নির্ধারিত ভাড়া প্রতিমাসে ১শ’ টাকা। এই হিসাবে প্রতিমাসে ৬৩৭টি সিটে প্রায় ৬৩ হাজার ৭শ’ টাকা আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আর বছরে প্রায় ৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা থেকে বঞ্চিত বিশ্ববিদ্যালয়।

সিটগুলোর মধ্যে, আমীর আলী হলে গত এক মাসে অবৈধ সিট ২৫টি থেকে বেড়ে ৪৯টিতে দাঁড়িয়েছে। শাহ মখদুম হলে গত দুই মাসে অবৈধ শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে অর্ধশতাধিক। মাদারবখশে ৪৮টি, শের-ই বাংলায় ৬৫টি, বঙ্গবন্ধু হলে ৮৩টি, জোহা হলে ৬৫টি, সোহরাওয়ার্দীতে ৬১টি, জিয়া হলে ৪০টি, হবিবুর রহমান হলে ৫৬টি, মতিহার হলে ২০টি সিট অবৈধ দখলে আছে।

RU-hall

এদিকে নবাব আবদুল লতিফ হলে শতাধিক সিট চলে গেছে অবৈধ দখলে। সেই সিটগুলোতে বরাদ্দ দিতে পারছে না হল প্রশাসন। আর বছর বছর আয়ও হচ্ছে না বিশ্ববিদ্যালয়ের। তবে কৌশলে এই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে চাইছে হল প্রশাসন।

অভিযোগ ঘাটতি ঠেকাতে আবাসিকতা না পেয়েও আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে ভাড়া দিতে হচ্ছে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকেই। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যেদিন থেকে নামে মাত্র আবাসিকতা পেয়েছেন তার পূর্বের ৬ মাসের ভাড়া প্রদাণ করে কাঙ্ক্ষিত সিটে উঠতে হচ্ছে তাদেরকে।

আর রশিদ ছাড়াই এই ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। রশিদ নিয়েও অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ রয়েছে হল প্রশাসনগুলোর বিরুদ্ধে। যেগুলোর অনুমোদন নেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।

এমনকি প্রত্যেকটি হলে ১৬-১৭টি অ্যাকাউন্ট পরিচালনা করা হয়। তবে এ বিষয়ে খোঁজ রাখেন না বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

অভিযোগ রয়েছে, সিট বরাদ্দ দেয়ার পর থেকে সিটে উঠতে না পারলেও বছর শেষে সিট ভাড়া বাবদ মাস হিসাবে টাকা দিয়ে পরীক্ষায় বসতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের।

প্রতি বছরই হল প্রশাসনের অব্যবস্থাপনা, পুতুল সেজে বসে থাকার দায় চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ওপর আর নিজেদের অক্ষমতার দায় শিক্ষার্থীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. রুবাইয়াত ইয়াসমিন।

RU-Taposi-Hall

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে এ বিষয়টি সরাসরি বলা যায় না। যে পরিসংখ্যানের কথা বলছেন, আমাদের হিসাবে এই সংখ্যাটি একেবারেই কম। তবে বরাদ্দকৃত সিটে উঠতে পারলেও ভাড়া টানছেন এমন কয়েকজন শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করে বলেন, কর্তৃপক্ষ দখলদারদের উচ্ছেদে কার্যকর উদ্যোগ নিচ্ছে না। দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা না নেয়ায় এ প্রবণতা বাড়ছে। অথচ এর মাশুল গুণতে হচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীদের।

বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্বীকার করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনন্দ কুমার সাহা বলেন, হলগুলোতে অবৈধ শিক্ষার্থীরা রয়েছে বলে অভিযোগ শুনি। তবে হল প্রাধ্যক্ষগণ এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট অভিযোগ করেন না। আর অভিযোগ না করায় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। অর্থনৈতিনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়।

তবে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সাহা নিজের সীমাবদ্ধতার কথা জানিয়ে বলেন, আমার চেষ্টার ত্রুটি নেই।

এমএএস/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।