এবার রাবিতে ‘বসন্ত বাউরি’ উদ্ধারে ফায়ার সার্ভিস
ঘড়িতে বাজে তখন বিকেল সাড়ে ৪টা। রাকসু ভবনের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলেন শেখ রাসেল মডেল স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা দেবশ্রী মন্ডল এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান রোকন। পাশেই একটি লিচু গাছ। উপরের দিকে তাকাতেই দেবশ্রী দেখতে পান লিচু রক্ষা করতে গাছে টাঙানো কারেন্ট জালে দুটি বসন্ত বাউরি পাখি ঝুলে আছে। পাখি দুটো জাল থেকে মুক্তি পেতে ছটফট করছে।
দেবশ্রী মন্ডল আর স্থির থাকতে পারেননি। যেভাবেই হোক পাখি দুটোকে বাঁচাতেই হবে। জাল মাটি থেকে বেশ উপরে। হাতের কাছেও তেমন কিছু নেয় যে, তিনি তা দিয়ে পাখিটিকে জাল থেকে ছাড়াতে পারেন। পরে হঠাৎ তার মাথায় আসে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দেয়ার কথা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাপ থেকে নাম্বার নিয়ে দ্রুত ফোন দেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে। তারাও ইতিবাচক সাড়া দেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে ফোন দিলেও তিনি তা ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেন।
ফোন দেয়ার ১৫/২০ মিনিটের মাথায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিসের ভ্রাম্যমাণ টহল ইউনিট ঘটনাস্থলে হাজির। এসেই পাখি উদ্ধারে তৎপরতা শুরু করেন তারা।
পরে প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টার পর কারেন্ট জালে ঝুলে থাকা দুটি বসন্ত বাউরি পাখি উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট। পাখি দুটিকে জাল থেকে ছাড়িয়ে পানি পান করিয়ে অবমুক্ত করা হয়। জালগুলো আরও ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় অন্যপাশে আরও দুটি বসন্ত বাউরি ও একটি বাদুড় মৃত অবস্থায় ঝুলে আছে। পরে সেগুলোও মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
ধীরে ধীরে ঘটনাস্থলে লোক সমাগম হতে থাকে। একটা পাখি বাঁচাতে ফায়ার সার্ভিসকে এমন ঝুঁকিপূর্ণভাবে কাজ করতে এর আগে কেউ দেখেননি।
জেমু নামের এক দর্শনার্থী জাগো নিউজকে বলেন, পাখি বাঁচাতে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকাণ্ড সত্যিই প্রশংসা করার মতো।
শেখ রাসেল মডেল স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা দেবশ্রী মন্ডল জাগো নিউজকে বলেন, হঠাৎ করে জালে পাখিগুলোকে ঝুলতে দেখে খুব খারাপ লাগে। তাই সেগুলো উদ্ধার করতে ফায়ার সার্ভিসকে ফোন দিই।
তিনি আরও বলেন, আমাদের জীববৈচিত্র্য আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে। কোনো পশু-প্রাণিকে হত্যা করা আমাদের উচিৎ নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক রোকনুজ্জামান রোকন বলেন, গাছের ফল রক্ষা করতে কারেন্ট জাল দেয়া ঠিক নয়। কারণ কারেন্ট জালে পাখি বাধলে মারা যায়।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ফায়ার হাউজের ইন্সপেক্টর মো. হুমায়ুন কবীর জাগো নিউজে বলেন, আমাকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একজন ফোন দিয়েছিলেন পাখিগুলোকে বাঁচাতে। পরে আমরা কন্ট্রোল রুমকে জানাই। আমাদের যাওয়ার নির্দেশ দিলে আমরা টিম নিয়ে বেরিয়ে পড়ি।
তিনি আরও বলেন, আসলে প্রত্যেকটি প্রাণির জীবনই মূল্যবান। তাই আমাদের সব প্রাণই রক্ষা করা উচিৎ।
উল্লেখ্য, এর আগে গত ১৩ মার্চ রাজশাহী নগরীর আলুপট্টি এলাকায় বৈদ্যুতিক তারে ঘুড়ির সুতায় আটকে পড়া একটি চড়ুই পাখি, ২৩ মার্চ নগরীর কুমারপাড়া এলাকার একটি পুরনো বাড়ি থেকে গোখরা সাপ এবং ২০ এপ্রিল নগরীর ঘোষপাড়া মোড় এলাকায় ড্রেনে পড়া একটি গরু উদ্ধার করে গণমাধ্যমে আলোচিত হয় ফায়ার সার্ভিস।
রাশেদ রিন্টু/আরএআর/আরআইপি