জাবিতে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
প্রকাশিত: ০১:০৫ পিএম, ১৭ এপ্রিল ২০১৮

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার ভোর পৌনে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশমাইল এলাকায় পরিবহন ডিপোর সামনে উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম এবং সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী শিক্ষকদের মধ্যে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার জেরে উভয়পক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে পাল্টাপাল্টি অবস্থান নিয়ে কর্মসূচি পালন করছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, উপাচার্য ফারজানা ইসলামের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্ট-১৯৭৩, স্ট্যাটিউট ও সিন্ডিকেট পরিচালনা বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে আহুত ধর্মঘটের অংশ হিসেবে ভোর ৪টার দিকে শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী পাঁচজন শিক্ষক পরিবহন ডিপোর সামনে অবস্থান নিয়ে ডিপোর ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।

ঘটনা জানতে পেরে সাড়ে ৪টার দিকে ফারজানা ইসলামের অনুসারী শিক্ষকরা সেখানে উপস্থিত হয়ে তালা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানালে উত্তেজনাকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তালা খুলতে একপর্যায়ে ধস্তাধস্তি ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন দুইপক্ষের শিক্ষকরা।

এ ঘটনা সম্পর্কে উপাচার্যকে জানাতে আন্দোলনকারী প্রায় ১৫ জন শিক্ষক উপাচার্যের বাসভবনে দেখা করেন। দেখা করে প্রভোস্ট নিয়োগসহ বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেন।

এ সময় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম শিক্ষকদের বলেন, প্রভোস্টদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তারা আমাকে প্রশাসনিক কোনো কার্যক্রমে সহযোগিতা না করে প্রশাসনের বিপক্ষে নানা রকম কার্যক্রম পরিচালনা করায় তাদের অব্যাহতি দিয়ে নতুন প্রভোস্ট সাময়িক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, আপনারা আমার সম্পর্কে অভিযোগ আমাকে আগে থেকে না জানিয়ে সরাসরি সর্বত্মক ধর্মঘটে গেছেন। আপনারা আমাকে জানালে নিয়োগ বোর্ডের সদস্যদের আগে থেকে না করে দিতে পারতাম। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি কম হতো।

এদিকে শরীফ এনামুল কবিরপন্থী ৫০-৬০ শিক্ষক বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ধর্মঘট পালন করছেন। আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দাবি, তারা শান্তিপূর্ণভাবে ভোরে বাস ডিপোতে তালা ঝুলিয়ে দেন। কিন্তু প্রশাসনপন্থী শিক্ষকরা তাদের লাঞ্ছিত করেন। সাড়ে ১০টায় উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলাম প্রশাসনিক ভবনে আসেন। কিন্তু শিক্ষকদের শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করার অনুরোধ করে স্থান ত্যাগ করে।

এ সময় উপাচার্যের কাছে শিক্ষক লাঞ্ছনার বিচার দাবি করলে উপাচার্য আন্দোলনকারীদের বলেন, আমি উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালনের নৈতিক অধিকার হারিয়েছি বলে আপনারা দাবি করেছেন। তাহলে আমি এই ঘটনার কীভাবে তদন্ত করব।

অন্যদিকে সাড়ে ১১টায় প্রশাসনপন্থী শিক্ষকরা আন্দোলনকারী শিক্ষকদের দ্বারা লাঞ্ছিত হয়েছেন বলে বিচার দাবি করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছেন।

প্রসঙ্গত, গত ১৫ ফেব্রুয়ারি উপাচার্য হিসেবে ফারজানা ইসলাম পুনরায় নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে বিভাজন স্পষ্ট হতে থাকে। সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবির ও বর্তমান উপাচার্য ফারজানা ইসলাম এই দুই মেরুতে বিভক্ত হয়ে পড়েন তারা। শিক্ষক সমিতির নির্বাচনে ফারজানা ইসলাম বলয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পর দুটি অনুষদের ডিন পদে ও প্রক্টরিয়াল বডিতে পরিবর্তন আনা হয়। এরপর গত ১১ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের নয়টি আবাসিক হলে প্রভোস্ট পদেও পরিবর্তন আনেন উপাচার্য ফারজানা ইসলাম।

এক অফিস আদেশে নয়জন প্রভোস্টকে অব্যাহতির ঘটনাকে নজিরবিহীন, অ্যাক্টবিরোধী ও শিষ্টাচার বহির্ভূত উল্লেখ করে মঙ্গলবার ধর্মঘটের ডাক দেন শরীফ এনামুল কবিরের অনুসারী আওয়ামীপন্থী শিক্ষকরা।

হাফিজুর রহমান/আরএআর/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।