‘আমরা অসহায় সবই ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে’

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক ইবি
প্রকাশিত: ০১:১৮ পিএম, ১২ এপ্রিল ২০১৮

কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয়ায় দুই মুক্তিযোদ্ধার সন্তানসহ ৩০ শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান। এরা সকলেই বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হলের শিক্ষার্থী এবং সভাপতি গ্রুপের সক্রিয় কর্মী।

জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে একই সঙ্গে ২২ জন হল ত্যাগ করেছে। এছাড়া আরও আট জনকে যেকোন সময় হল থেকে বের করে দেয়া হবে। এ ২২ জন হল থেকে বের হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে অবস্থিত বঙ্গবন্ধুর মুর্যালে স্যালুট জানিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ক্যাম্পাস ত্যাগ করে।

কান্না জড়িত কন্ঠে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বিল্লাল কাজী জাগো নিউজকে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাবা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে। তার আদর্শ লালন করেই ছোটবেলা থেকে এতো বড় হয়েছি। একটি যৌক্তি আন্দোলনে অংশ নেয়ায় বঙ্গবন্ধুরই হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগ আজ হল থেকে বের করে দিলো।

jagonews24

এর আগে বুধবার সারা দেশের ন্যায় ইবিতেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নেয় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী। আন্দোলন বাধাগ্রস্থ করার জন্য দলীয় কর্মীদের অংশ গ্রহণ না করার নির্দেশ দেয় শাখা ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা। কিন্তু নির্দেশ উপেক্ষা করে বিপুল সংখ্যক ছাত্রলীগ কর্মী আন্দোলনে অংশ নেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ সভাপতি শাহিনুর রহমান তার গ্রুপের আন্দোলনকারীদের চিহ্নিত করে।

প্রথমে বুধবার রাত ৮টায় এদের নিজ রুমে ডেকে বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার মধ্যে হল ত্যাগ করতে বলে। পরে সভাপতির আস্থাভাজন নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ সজল রাত ১০টায় আবারও নিজ রুমে ডেকে গালাগাল দিয়ে বেশ কয়েকজনকে হল ত্যাগ করতে বলে। পরে সকাল ১০টায় একই সঙ্গে ২২ ছাত্রলীগ কর্মী হল ত্যাগ করেন। এরা হলো- বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ১০ জন, ব্যবস্থাপনা বিভাগের নয় জন, ইংরেজী এবং আরবী বিভাগের একজন। এদের মধ্যে ব্যবস্থাপনা বিভাগের বিল্লাল কাজী এবং শাহানুর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। এছাড়া বিভিন্ন বিভাগের আরও আট জন কর্মী বৃহস্পতিবার দিনের মধ্যে বের হয়ে যেতে হুমকি দিয়েছে ছাত্রলীগ।

ছাত্রলীগ নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ সজল জাগো নিউজকে বলেন, আমি তাদের কোনো গালাগাল করিনি। শুধু সভাপতির নির্দেশ তাদের বলে দিয়েছি।

এ বিষয়ে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে হল থেকে বের হয়ে যেতে বলেছি। আন্দোলনে অংশ নেয়ার ছাত্রলীগ নেতাদের বিষয়ে বলেন, আমি কয়েকজনকে রুমে ডেকে হল ছাড়তে বলেছি, যারা বারবার নিষেধ আমান্য করেছে। তবে আন্দোলনকারী সবাই একজোট হয়ে বের হয়ে গেছে। এখানে আমার কিছু করার নেই।

jagonews24

এ বিষয়ে লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে। হলে শিক্ষার্থী উঠানো-নামানোর বিষয়ে প্রভোস্ট বলেন, আমরা অসহায় সবই ছাত্রলীগ নিয়ন্ত্রণ করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক হারুন উর রশিদ আসকারী জাগো নিউজকে বলেন,বিষয়টি আমি অবগত নই। আন্দোলনে তো আমিসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগও একাত্মতা ঘোষণা করেছে। এখন কেন ছেলেদের হল থেকে বের করা হচ্ছে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ভালোভাবে দেখব।

ফেরদাউসুর রহমান সোহাগ/আরএ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।