জালিয়াতিতে ভর্তি : কঠিন সিদ্ধান্ত নেবে ঢাবি কর্তৃপক্ষ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) বিভিন্ন বিভাগে ২০১৪ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত ডিজিটাল জালিয়াতির মাধ্যমে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হতে চক্রের সঙ্গে প্রতি শিক্ষার্থীর লেনদেন হয়েছে চার থেকে সাত লাখ টাকা। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের (সিআইডি) তদন্তে এ তথ্য জানা গেছে।
একইভাবে ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের বিভিন্ন ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি করার সময় আটক হয়েছে বেশ কয়েকজন ভর্তিচ্ছু। এছাড়া ২০ অক্টোবর ঢাবির ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার আগের রাতে অমর একুশে হল ও ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ হলে অভিযান চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক মহীউদ্দিন রানা ও আবদুল্লাহ আল মামুনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। পরে তাদের তথ্যের ভিত্তিতে জালিয়াত চক্রের মূল হোতাদের আটক করে পুলিশ।
সর্বশেষ গতকাল (সোমবার) রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি সাপেক্ষে সিআইডি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অভিযান চালিয়ে সাত শিক্ষার্থীকে আটক করে, যারা ইতিপূর্বে জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে। আটককৃতরা হলেন, তানভীর আহমেদ মল্লিক, মো. বায়জিদ, নাহিদ ইফতেখার, ফারদিন আহমেদ সাব্বির, প্রসেনজিৎ দাস, রিফাত হোসাইন এবং আজিজুল হাকিম। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ আছে বলে ঢাবির একটি সূত্র জানিয়েছে।
সিআইডির তদন্তে চলতি বছর জালিয়াতি করে ভর্তির কোনো তথ্য উঠে আসেনি বলে নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, সোমবার রাতে যাদের আটক করা হয়েছে তাদের কেউই নতুন শিক্ষাবর্ষের নয়। বর্তমান প্রশাসনের কঠোরতার কারণে এবারে জালিয়াতি চক্র সফল হয়নি।
নাম না প্রকাশের শর্তে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, ২০১২ থেকে মূলত এ চক্রটি কাজ করছে। তবে ২০১৪, ২০১৫ ও ২০১৬ সালে এ চক্রের মাধ্যমে শতাধিক ছাত্র ঢাবির বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হয়েছে। এছাড়া মেডিকেল ও ব্যাংক নিয়োগ পরীক্ষায় বড় একটি চক্রের সন্ধান পেয়েছি। এ নিয়েও কাজ চলছে।
অভিযুক্তদের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত কী জানতে চাইলে প্রক্টর গোলাম রব্বানী জাগো নিউজকে বলেন, যারা জালিয়াতি করেছেন বা জালিয়াতির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছে উভয়ই ক্রিমিনাল। তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা নিবে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এ ধরনের অপরাধকে প্রশ্রয় দেবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এ ব্যাপারে ঢাবি জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে।
ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান জাগো নিউজকে জানিয়েছেন, যাদের বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ আসছে, তাদের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
যোগাযোগ করা হলে সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মিনহাজুল ইসলাম বলেন, যে কোনো নিয়োগ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠে। চক্রটি পরীক্ষায় জালিয়াতির জন্য মাস্টারকার্ডের মতো দেখতে পাতলা এক ধরনের ডিভাইস ব্যবহার করছে, যার ভেতরে মোবাইলের সিম থাকে। আর পরীক্ষার হলে পরীক্ষার্থীর কানে থাকে অতি ক্ষুদ্র লিসেনিং কিট। এ ডিভাইসের মাধ্যমে বাইরে থেকে হলের ভেতরে পরীক্ষার্থীর সঙ্গে যোগাযোগ করে উত্তর বলে দেয়া যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস ও জালিয়াতিতে সঙ্গে থাকার অভিযোগে এ পর্যন্ত ১৪ জন গ্রেফতার রয়েছে বলেও জানান তিনি।
এমএইচ/এএইচ/জেআইএম