পুরান ঢাকার গলিতে গলিতে পূজার প্রস্তুতি

বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৩:৫৭ এএম, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

আর মাত্র কয়েকদিন পরই হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। আর তাই সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে প্রতিমা শিল্পীদের ব্যস্ততা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত সময় পার করছেন পুরান ঢাকার প্রতিমা শিল্পীরা।

প্রতিবারের মত এবারও পুরান ঢাকার গলিতে গলিতে পরম যত্নে অস্থায়ী পূজামণ্ডপ সাজানো হচ্ছে। বিশেষ করে প্রশিদ্ধ শাঁখারী বাজার, লক্ষ্মী বাজার, শ্যামবাজার, তাকি বাজার, কলতা বাজান, মুরগিটোলা, ডালপট্টির মত ছোট বড় সব মহল্লায় পূজামণ্ডপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে।

বুধবার সরেজমিনে দেখা গেছে, গলিতে সামান্য দূরত্বের ব্যবধানে এসব পূজামণ্ডপ স্থাপনের কাজ চলছে। পূজামণ্ডপের জন্য তৈরি হচ্ছে প্রতিমা। ফলে প্রতিমা তৈরির কারিগরদের বেড়েছে ব্যস্ততা। অনেক কারিগর দিনরাত কাজ করছেন। তাদের দম ফেলার সময় নেই।

কয়েকজন কারিগর জানান, বগত বছরের চেয়ে এবার প্রতিমা তৈরির খরচ দেড় থেকে দিগুণ বেড়েছে।

বুধবার পুরান ঢাকার বেশ কয়েকটি প্রতিমা তৈরির মণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিমা পূজামণ্ডপে নেয়ার উপযোগী করে তুলতে দিনরাত কাজ করছেন মৃত শিল্পীরা। বৃষ্টি থাকায় গ্যাসের চুলায় আগুন জ্বালিয়ে প্রতিমা শুকানো হচ্ছে। যেসব প্রতিমা শুকানো হয়েছে সেসবে চলছে রঙ দেবার কাজ। রঙ দেয়া শেষ হওয়া প্রতিমাগুলাতে চলছে শাড়ি পরানোর কাজ।

শরৎদাসগুপ্ত লেনের এক পাশে বসে প্রতিমা তৈরি করছেন রবীন্দ্রনাথ দাশ। গত চল্লিশ বছর ধরে তিনি এই এলাকায় প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, প্রতিবারের ন্যায় এবার তিনজন কর্মচারি মিলে ছয় সেট প্রতিমা তৈরি করেছি। রোদ কম থাকায় গ্যাসের হ্যান্ড চুলাই প্রতিমা শুকাতে হচ্ছে। প্রতিসেট প্রতিমা ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকায় অর্ডার পেয়েছি।

jagonews24

রবীন্দ্রনাথ পালের সহকারী জয় দেব বলেন, পূজার শেষ সময় এসে গেছে। বলতে গেলে দিনরাতই কাজ করছি। কাজ প্রায় শেষ। এখন প্রতিমায় রঙ দিচ্ছি।

ডালপট্টির মোড়ে শ্রী শ্রী মদনমোহন গৌর নিতাই বিগ্রহ মন্দির গিয়ে দেখা যায়, মন্দিরের গেট সাজানো হচ্ছে। মন্দিরের ভেতরে চলছে প্রতিমা তৈরির কাজ। এখানাকার মৃৎ শিল্পী সুজন পাল বলেন, মাত্র পাঁচ দিনে সাত সেট প্রতিমায় রঙ লাগানোর পাশাপাশি কাপড় পরাতে হবে। বিভিন্ন রংয়ের কাপড় থেকে বেছে নির্দিষ্ট রংয়ের কাপড় পরিয়ে ট্রায়েল দিতে হবে। কোনো কোনো প্রতিমায় ৪-৫ বার করে কাপড় বদলাতে হচ্ছে।

পুরান ঢাকায় যেসব সংগঠনের উদ্যোগে পূজার আয়োজন করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- প্রতিদ্বন্দ্বী, সংঘ মিত্র, শ্রী শ্রী রাধা মাধব জিউ দেব মন্দির, নব কল্লোল, তাঁতীবাজার পূজা কমিটি, শ্রী শ্রী শিব মন্দির, উদীয়মান সূর্য সংঘ, পানিটোলা পঞ্চায়েত, নবদুর্গা, নববাণী, দুর্গাবাড়ী, ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশন ও গোয়ালনগর পঞ্চায়েত কমিটি।

রামকৃষ্ণ মঠের দায়িত্বরত স্বামী অমল মহারাজ বলেন, এবার আমরা গতবারের চেয়েও বেশি টাকা ব্যয় করে প্রতিমা তৈরি করছি যাতে ভক্তরা এসে দেখে প্রশান্তি পায়।

এবার পূজায় পুরান ঢাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে লালবাগ বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইব্রাহীম খান জাগো নিউজকে বলেন, লালবাগ বিভাগে ৫৮টি পূজামণ্ডপ রয়েছে। পূজামণ্ডপে যাতে কোনো অপ্রতিকর ঘটনা না ঘটে পূজা কমিটির সঙ্গে অামাদের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। আমরা প্রত্যেকটি পূজামণ্ডপে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও মণ্ডপ পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ে নিরাপত্তা দেবো। এছাড়া মণ্ডপে পর্যাপ্ত স্বেচ্ছাসেবক থাকবে।

উল্লেখ্য, এবার দুর্গাপূজা শুরু হবে ২৫ সেপ্টেম্বর। গতকাল বুধবার মহালয়ার মধ্যদিয়ে দেবী দুর্গার আগমন ঘটেছে মর্ত্যলোকে। ৩০ সেপ্টেম্বর মহা বিজয়া দশমীর মাধ্যমে পূজা শেষ হবে।

এসএম/এআরএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।